পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পরতে পরতে ইতিহাস, সেই কলেজ স্কোয়্যার থেকেই জোরালো 'জাস্টিস ফর আরজি কর' আন্দোলন - RG Kar Doctor Rape and Murder - RG KAR DOCTOR RAPE AND MURDER

Historic College Square: 'জাস্টিস ফর আরজি কর' আন্দোলনের আঁতুড়ঘর ঐতিহ্যবাহী কলেজ স্কোয়্যার ৷ যা পরিচিত কলকাতার 'বইপাড়া' নামে ৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী নানা আন্দোলনের সাক্ষী মহানগরীর এই ঐতিহাসিক স্থান ৷

ETV BHARAT
কলেজ স্কোয়্যার থেকেই জোরালো 'জাস্টিস ফর আরজি কর' আন্দোলন (নিজস্ব চিত্র)

By Sanjib Guha

Published : Sep 5, 2024, 7:55 PM IST

কলকাতা, 4 সেপ্টেম্বর:লন্ডনে যেমন ট্রাফালগার স্কোয়্যার, তেমনই কলকাতায় কলেজ স্কোয়্যার । 'আন্দোলন' শব্দটির সঙ্গে ঐতিহাসিক ভাবে তিলোত্তমার এই স্থানের যে গভীর যোগ রয়েছে, সে বিষয়টি তর্কাতীত।

ভারতের বৌদ্ধিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানকারী ও সমাজ সংস্কারকদের স্বতন্ত্র পদচিহ্ন রয়েছে কলেজ স্ট্রিটের অদূরে কলেজ স্কোয়্যারে ৷ যা পরিচিত ঐতিহ্যবাহী 'বইপাড়া' হিসেবে । এখান থেকেই শুরু হওয়া 'জাস্টিস ফর আরজি কর'-এর আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা-পূর্ব এবং পরবর্তী সময়ের অন্যান্য আন্দোলনকে পেছনে ফেলে দেবে ৷

বর্তমানে সরকারি হাসপাতাল আরজি করের নৃশংসতায় টগবগ করে ফুটছে বিশ্বব্যাপী আমজনতার রক্ত ৷ ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ জুনিয়র ডাক্তাররা এই কলেজ স্কোয়্যারকেই বেছে নিয়েছেন আরেকটি ইতিহাস রচনা করার জন্য । আসুন তিনটি বিষয়কে সংযুক্ত করি - আন্দোলন, বিপ্লব ও উৎস ।

কলেজ স্কোয়্যারের অবস্থানটি সাম্প্রতিক অতীতেই শুধু নয়, বরং শতাব্দীকাল আগের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগের কারণে একটি আইকনিক মর্যাদা অর্জন করেছে এই স্থল । কলেজ স্কোয়্যারের পূর্ব গেটে একটি যুদ্ধ স্মারক রাখা রয়েছে, যা চার বছর ধরে (1914-18) চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে 49তম বেঙ্গলি রেজিমেন্টের মৃতদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে ।

আন্দোলনের আঁতুড়ঘর কলেজ স্কোয়্যার (নিজস্ব চিত্র)

মহানগরীর এই জায়গাটি বিখ্যাত হওয়ার একমাত্র কারণ এটাই নয় । রয়েছে প্রচুর স্মৃতি। কলেজ স্কোয়্যারের পশ্চিম গেটে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি স্থাপন করা রয়েছে, যা একটি মহান বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দেয় । বিধবা বিবাহ হোক বা মেয়েদের শিক্ষাদান, বিদ্যাসাগর এমন একটা সময়ে এই বিপ্লব গড়ে তুলেছিলেন, যখন উভয় প্রচেষ্টাই সমাজে নিন্দিত ছিল ৷ তবে স্রোতের বিপরীতে হেঁটে বাঙালি সমাজ সংস্কারক এমন এক বিপ্লব এনেছিলেন, যা শুধু ভারতের উন্নতিই করেনি, বরং দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঠামোতে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গিয়েছে ।

শিক্ষাক্ষেত্রে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়), দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (আইআইএসডব্লিউবিএম), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাপ্টিস্ট মিশন, সিটি কলেজ, হেয়ার স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ান কফি হাউস - ঐতিহ্যবাহী এই সবক'টা নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কলেজ স্কোয়্যার ৷

ঐতিহাসিক কলেজ স্কোয়্যার (নিজস্ব চিত্র)

কলেজ স্কোয়্যার 1905 সালের 2 সেপ্টেম্বরের পরেও আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হিসাবে বহু রাজনৈতিক প্রচার এবং বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছে । বঙ্গভঙ্গের সময় এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশাল এক জনসভা ৷ তারপরে অনেক রাজনৈতিক দল ও ছাত্ররা এখানেই তাঁদের আন্দোলনে সামিল হন ৷ তাঁদের পথ ধরেই 'জাস্টিস ফর আরজি কর' আন্দোলনও গতি পায় এই কলেজ স্কোয়্যার থেকেই ৷

স্থানটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শহরের বুদ্ধিমত্তার কেন্দ্রস্থল । কোনও বিশেষ জাতি বা ধর্ম নয়, এর আন্দোলনের ইতিহাসে বারবার সবার উপরে থেকেছে মানবধর্ম ৷ এই কলেজ স্কোয়্যারেই কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন স্কটিশ সমাজসেবী ডেভিড হেয়ার । হিন্দু স্কুল এবং হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, তিনি মর্যাদাপূর্ণ প্রেসিডেন্সি কলেজ প্রতিষ্ঠাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন । তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাঁকে কোনও কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়নি ৷ কলেজ স্কোয়্যারের কেন্দ্রস্থলে তাঁর একটি স্বতন্ত্র সমাধি তৈরি করা হয়েছিল ।

এছাড়াও কলেজ স্কোয়্যারের বিশাল জলরাশি এই জায়গাটির শুধু সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করেনি, বরং একে খেলাধুলা বিশেষত সাঁতারের প্রশিক্ষণস্থল হিসেবে একে ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে ৷ ইয়ং মেন ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াইএমসিএ)-এর হাত ধরে সাঁতারের অন্যতম একটি কেন্দ্রস্থল হিসেবে গড়ে তুলেছে কলেজ স্কোয়্যারকে ৷ গোল দিঘি বা মাধব বাবু তালাও নামে পরিচিত এই জলাশয় বেশ কয়েকজন অলিম্পিয়ানের জন্ম দিয়েছে ৷

কলেজ স্কোয়্যারে গোল দিঘি (নিজস্ব চিত্র)

এটাই সব নয় ৷ কলেজ স্কোয়্যার এবং তার চারপাশে ইতিহাস, বিপ্লব এবং ঐতিহ্যের স্মৃতিবিজড়িত আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো রয়েছে ।

মহানগরীর জনপ্রিয় স্থান কলেজ স্কোয়্যারের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার দুর্গাপুজো ৷ আচার, আড়ম্বর ও জলাশয়ের উপরে সজ্জিত প্যান্ডেল টেক্কা দেয় শহরের অন্যান্য পুজোগুলিকে ৷

অসন্ন অক্টোবরে এখানে আবারও হবে দুর্গাপুজো ৷ তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর যে জনরোষ আছড়ে পড়েছে শহরের রাস্তায়, তার ফলে দুর্গাপুজো হলেও তার জাঁকজমক কতটা থাকবে তা সময়ই বলবে । সুবিচারের দাবিতে আওয়াজ দিন দিন উচ্চতর হচ্ছে । সিবিআইয়ের হাতে ধৃত আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও অন্যান্য দোষীদের নিয়ে ক্রমে বাড়ছে ক্ষোভ ৷

সিবিআই এবং প্রশাসনের প্রতি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা নিয়েই সুবিচারের দাবিতে ক্রমবর্ধমান জনরোষ ৷ এখন শুধু অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই ৷ প্রতিবাদের ভাষাতেই জাস্টিস চাই আরজি করের ঘটনার ৷ কলেজ স্কোয়্যার থেকে রাজ্য তথা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক এই আন্দোলনের ঝড় ৷ সুবিচার পান তরুণী চিকিৎসক ৷ মানুষ আশায় বাঁচে, আমরাও তাই ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details