কলকাতা, 26 জুন: তৃণমূলের দুই জয়ী বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রেয়াত হোসেন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি ৷ মঙ্গলবার পুরো দিন চর্চায় ছিল উপনির্বাচনে জিতে আসা বিধায়কদের শপথের বিষয়টি । কিন্তু বুধবার কী হতে চলেছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট হল না রাতেও, বরং বাড়ল জটিলতা । দিনভর চিঠি-পালটা চিঠি, তাই নিয়ে আলোচনা । অধ্যক্ষ, পরিষদীয় মন্ত্রী, জয়ী বিধায়ক, সকলের নানা ধরনের বার্তা সামনে এসেছে । একইসঙ্গে এসেছে রাজভবনের তরফে বক্তব্যও ।
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপালের কাছে নবনির্বাচিত বিধায়ক সায়ন্তিকার আবেদন, "আপনি আসুন বিধানসভায় । বিধানসভার সদস্য হিসেবে আমাদের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান হোক এখানেই । প্রয়োজনে শপথবাক্য পাঠ করান আপনি ।" এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের নব নির্বাচিত 2 প্রার্থী, তাঁদের আদৌ বিধায়ক বলা যাবে কী না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন । কারণ একটাই, তাঁরা এখনও বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতেই পারেননি ।
মঙ্গলবার বরানগরের জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সায়ন্তিকা বলেন, "রাজ্যপাল বলছেন রাজভবনে শপথ নেওয়ার কথা ৷ অথচ বিধানসভাকে অন্ধকারে রেখে এভাবে কী করে সবকিছু চলতে পারে ? ভুলে গেলে চলবে না আমাদের কর্মক্ষেত্রই হল বিধানসভা । শপথের আগে যে পেপার ওয়ার্ক করতে হয় সবটাই হবে বিধানসভাতেই । তাহলে রাজভবনে গিয়ে কীভাবে শপথ হতে পারে !" তিনি আরও জানান, রাজভবনে যেতে তাঁদের আপত্তি নেই; কিন্তু সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা উচিত ।
এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সায়ন্তিকা জানান, বুধবার তাঁরা সবকিছু নিয়ে প্রস্তুত হয়ে দুপুর 12টা থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত বিধানসভাতেই অপেক্ষা করবেন । রাজ্যপাল নিজে বিধানসভায় এসে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান, আবেদন তৃণমূলের এই তারকা বিধায়কের । রাজভবন থেকে শপথ গ্রহণের চিঠি পেয়ে এদিন দুপুরে বিধানসভায় এসে পৌঁছন বরানগরের জয়ী তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকা এবং ভগবানগোলার জয়ী বিধায়ক রেয়াত হোসেন সরকার । চিঠিতে রাজভবনের তরফ থেকে দুই বিধায়ককে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যদি তাঁরা শপথগ্রহণ করতে গড়িমসি করেন সেক্ষেত্রে কি পরিণাম হতে পারে। কিন্তু তারপরও দেখা গেল দিনের শেষে বিধানসভাতেই থাকবেন বলে জানিয়ে দিলেন দুই বিধায়ক ৷ ফলে তাঁদের শপথ নিয়ে জটিলতা বজায় থেকেই গেল ৷ বুধবার শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে ধোঁয়াশা।
মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "উপনির্বাচনে জেতা বিধায়কদের নিয়ে রাজ্যপাল যা করছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক । বিধায়করা রাজ্যপালকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যেন বিধানসভায় এসে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান । এরপর রাজ্যপাল কী করবেন তা তিনিই জানেন ।" বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর অধিকার যে একমাত্র অধ্যক্ষেরই থাকা উচিত, তা নিয়েও এদিন মন্তব্য করেন তিনি ৷ দেশের সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, "সংবিধান প্রণেতা নিজে এর সংস্থান রেখেছেন ।" প্রয়োজনে সেই নথি তিনি রাজ্যপালের কাছেও পাঠিয়ে দেবেন । এখন দেখার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর আদৌ গোটা ঘটনায় কোনও পরিবর্তন আসে কি না ৷