লাভপুর, 31 মার্চ:'ঠকানোই মূল মন্ত্র, আজকের সব পেশাতে/পিছপা নয় বিধাতাও, তেলেতে জল মেশাতে'৷ চরম এই বাস্তব উঠে এসেছিল গায়ক নচিকেতার কলমে ৷ গানের ছত্রে ছত্রে তুলে ধরা হয়েছিল, 'বড় যদি চাইবে হতে, সেখানেও লোক ঠকানো/সৎভাবে বাঁচো বাঁচাও, এ কথা লোক ভোলানো ৷' তাইতো গলা উঁচিয়ে গায়ক বলেছিলেন, 'আমি বোকাই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশন ৷' জীবনমুখী গানের জন্মকালে লেখা এই গানের সৃষ্টির বহু বছর পর যেন এর বাস্তব চরিত্র হয়ে উঠল বোলপুরের একরত্তি শিশু ৷ তৃতীয় শ্রেণির ঋক বড় হয়ে বোকা হতে চায় ৷ এটাই তার অ্যাম্বিশন ৷ কারণ ? কারণটা শুনলে বোঝা যাবে, আমাদের পারিপার্শ্বিক কঠোর বাস্তব কতটা প্রভাব ফেলছে শিশুমনে ৷
"বড় হয়ে বোকা হতে চাই" - নেট দুনিয়ায় খুদে পড়ুয়ার সরল এই উত্তর ভাবিয়ে তুলছে সকলকে । মাস্টারমশাইয়ের বোকা হতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাঁকে আরও অবাক করে দেয় ছোট্ট ঋক । সে বলে, "বোকা হলে আমি তো কারওকে ঠকাতে পারব না ৷" বর্তমানে দুর্বৃত্তে ভরে যাওয়া সমাজে লাভপুরের শীতলগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রের এহেন কথা গভীর ইঙ্গিত বহন করে ।
বীরভূমের লাভপুরের শীতলগ্রামের বাসিন্দা অভিজিৎ বাগদি । পেশায় দিনমজুর । মা সুমিন্দা বাগদি গৃহবধূ । তাঁদের সন্তান ঋক বাগদি । সে লাভপুরের শীতলগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র । এই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক রিপনকান্তি বালা নিজ মোবাইল ফোনে একটি ভিডিয়ো করতে করতে খুদে পড়ুয়াদের জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, তারা বড় হয়ে কী হতে চায় । উত্তরে কেউ বলে, শিক্ষক হতে চাই, কেউ বলে অধ্যাপক হতে চাই, কেউবা পুলিশ, সেনা, কেউ সিআইডি অফিসার হতে চায়, কেউ আবার হতে চায় ডাক্তার । এরপরেই শিক্ষক ঋককে জিজ্ঞাসা করে বড় হয়ে কী হতে চাও ? এক মুহূর্তও না ভেবে ঋকের সোজা উত্তর, "বড় হয়ে আমি বোকা হতে চাই"।