পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

জাতীয় নিরাপত্তায় হিলি সীমান্তে কাঁটাতার বসানোয় রাজ্যের জমি অধিগ্রহণ নীতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন - Land Acquisition for Border Fencing

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 15, 2024, 1:55 PM IST

Land Acquisition for Border Fencing: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হিলি সংলগ্ন এলাকায় কাঁটাতারহীন যে অংশ রয়েছে, সেখানে বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করতে চলেছে ৷ গত ডিসেম্বরের পর থেকে রাজ্য সরকার বিএসএফ-কে জমি হস্তান্তরের কাজ শুরু করেছে ৷ কিন্তু সেই নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক ৷ রাজ্যের জমি নেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে বেড়া দেওয়া হলে অনেক জমি সীমান্তের ওপারে চলে যাবে ৷ পরে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়ে যাবে ৷

Land Acquisition for Border Fencing
দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা৷ (নিজস্ব ছবি)

হিলি, 15 জুলাই: অরক্ষিত হিলি সীমান্ত বেশ কিছুদিন ধরেই চোরা কারবারিদের কাছে স্বর্গরাজ্য ৷ এই এলাকার কাঁটাতারহীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রতিদিনই চলছে পাচার ৷ পাচারের তালিকায় রয়েছে মূল্যবান সামগ্রীও ৷ মাঝেমধ্যেই সোনা বা সাপের বিষভর্তি জার উদ্ধারের ঘটনা ঘটে এখানে ৷

চোরা কারবার বন্ধ করার সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘদিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই সীমান্ত এলাকায় ত্রিস্তরীয় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় ৷ তার জন্য জমি অধিগ্রহণের আর্জি জানিয়ে রাজ্যকে বার্তা দেয় কেন্দ্র ৷ দীর্ঘ টালবাহানার পর রাজ্য সরকার অবশেষে গত ডিসেম্বরে সেই জমি বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ সেই অনুযায়ী বিএসএফের হাতে জমি তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷

দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা৷ (নিজস্ব ছবি)

কিন্তু প্রস্তাবিত কাঁটাতারের বেড়া বসে গেলে তার ওপারে থাকা ভারতীয় জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন জমি মালিকরা ৷ এই পরিস্থিতিতে তাঁরা সরকারের কাছে বেড়ার ওপারে চলে যেতে বসা জমি কিনে নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন ৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকার যে পদ্ধতিতে বিএসএফকে জমি হস্তান্তর করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা ৷

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে 252 কিলোমিটার ৷ এর মধ্যে হিলি ব্লকে প্রায় 65 শতাংশ সীমান্ত অরক্ষিত ৷ ফলে তা চোরা কারবারিদের মৃগয়াভূমি ৷ দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্লকের প্রায় 20 কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া আশু প্রয়োজন ৷

নিয়ম অনুযায়ী, জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডের ভিতরের অংশে বসবে সেই বেড়া ৷ গত ডিসেম্বরে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় জমি বিএসএফ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে শুরু হয় সমীক্ষার কাজ ৷ বিএসএফ, সিপিডাব্লিউডি এবং রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর যৌথভাবে সেই সমীক্ষা চালায়৷ প্রয়োজনীয় জমিও চিহ্নিত করা হয় ৷ কিছু ভৌগলিক সমস্যায় এখানে সীমান্ত বেড়া বসানোর আন্তর্জাতিক নিয়ম খানিকটা বদল করা হয় ৷

সেই নিয়মে দু’দেশের জিরো পয়েন্ট থেকে 150 গজ ভিতরে বেড়া বসার কথা ৷ তবে সীমান্তে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমির কথা মাথায় রেখে এই বদলে সম্মতি দেয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসও ৷ তাই কোথাও জিরো পয়েন্ট ঘেঁষে, আবার কোথাও জিরো পয়েন্ট থেকে সামান্য দূরে বেড়া বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷

দেখা যাচ্ছে, প্রস্তাবিত বেড়া তৈরি হলে অনেক বাড়ির ভিতর দিয়ে কাঁটাতার চলে যাবে ৷ বেশ কিছু বাড়ির শোওয়ার ঘরের ভিতর দিয়েও যাবে সেই বেড়া ৷ অনেকের জমিও খণ্ডিত হয়ে যাবে ৷ এই অবস্থায় বেড়ার ওপারে থাকা বাসস্থান কিংবা কৃষিজমি ভবিষ্যতে পরিত্যক্ত ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে ৷

দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা৷ (নিজস্ব ছবি)

বেড়া লাগোয়া এক বাড়ির কর্তা শক্তিপদ মজুমদার বলছেন, “যে জায়গা দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার ওপারে আমাদের অনেক জমি থেকে যাচ্ছে ৷ অনেক বাড়ির অংশও ওপারে চলে যাচ্ছে ৷ এসব জমি বা বাড়ি আর কখনও ব্যবহার করতে পারব কি না জানি না ! তাছাড়া অনেকের জমির উপর দিয়ে এমনভাবে বেড়া যাচ্ছে যে সেই জমির একটা বা দুটো অংশ এপারে থাকছে, বাকিটা ওপারে ৷ ওপারে থাকা জমিতে যাতায়াতের সুবিধেও থাকবে না ৷ আমাদের আশঙ্কা, এসব জমি ভবিষ্যতে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে ৷ তাই বেড়ার ওপারে থাকা সেসব জমি সরকার আমাদের কাছ থেকে কিনে নিক ৷”

সীমান্তবেড়ার জন্য যে পদ্ধতিতে রাজ্য সরকার বিএসএফকে জমি হস্তান্তর করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ সেই প্রশ্ন যাঁরা তুলছেন, তাঁদের মধ্যেই একজন উজাল এলাকার হরিপদ মণ্ডল ৷ তিনি বলছেন, “রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ না করে কিনে নিচ্ছে ৷ তারপর সেই জমি বিএসএফকে রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছে ৷ বাজারদর থেকে দেড়গুন বেশি দাম দিচ্ছে বটে, কিন্তু জমি অধিগ্রহণ করা হলে আমরা বাজারদর থেকে অন্তত তিনগুন বেশি দাম পেতাম ৷ মিলত খানিকটা সুদও ৷ সবচেয়ে বড় কথা, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পুনর্বাসনের বিষয়টিও সুরক্ষিত থাকত ৷ অর্থাৎ এক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে ৷ আমরা অনেকে ঠিক করেছি, আমাদের জমি সরকারকে বিক্রি করব না ৷ প্রয়োজনে সরকার অধিগ্রহণ করুক ৷”

হরিপদর কথা সত্যি হলে, কিন্তু পুরো প্রকল্পের উপরেই ছায়া ঘনিয়ে আসতে পারে ৷ এই সময় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের লোকজন বাড়ি বাড়ি তো বটেই, হাট-বাজারে গিয়েও মানুষকে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে জমি বিক্রিতে রাজি করাচ্ছেন ৷ কিন্তু হরিপদর কথা অনুযায়ী কেউ জমি বিক্রিতে রাজি না হলে সরকার জোর করে তা কেড়ে নিতে পারবে না ৷ সেক্ষেত্রে নকশা অনুযায়ী বেড়া দেওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়বে ৷

অধিগ্রহণের পরিবর্তে জমি কিনে নেওয়া কেন ? এই প্রশ্নে হিলি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা শুধু সরকারি নির্দেশিকা পালন করছি ৷ সরকারের পলিসি, জমি কিনে তা বিএসএফ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হবে ৷ আন্তর্জাতিক সীমান্তবেড়ার নকশা অনুযায়ী আমরা জমি কিনছি ৷ জমিদাতাদের বর্তমান বাজারদরের থেকে দেড়গুন বেশি দাম দেওয়া হচ্ছে ৷ কারও বাড়িঘর বেড়ার ওপারে পড়ে গেলে তাঁদের সেই বাড়ির দামও দেওয়া হচ্ছে ৷ তবু কিছু সমস্যা রয়েছে ৷ কিছু সমস্যা ভবিষ্যতে হতে পারে ৷ স্থানীয় মানুষেরও কিছু আশঙ্কা রয়েছে ৷ সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details