খামারগাছি, 19 সেপ্টেম্বর: মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলে । বর্তমানে আরজি কর কাণ্ডের অন্যতম মুখ । সহকর্মীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড একাধিক প্রতিবাদী মুখের জন্ম দিয়েছে ৷ দেবাশিস, কিঞ্জল, অনিকেত ও রুমেলিকার মতো জুনিয়র ডাক্তারদের সামনে সুর নরম করতে বাধ্য হয়েছে সরকারও ।
হুগলির খামারগাছির বাসিন্দা দেবাশিস হালদার । বর্তমানে কলকাতা মেডিকেল কলেজে অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত । মাধ্যমিক রাজ্যে অষ্টম হয়েছিলেন ৷ উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ হন ৷ আরজি করের ঘটনা তাঁকেও নাড়া দিয়েছে । ফলত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া । শুধু তিনি নন, তাঁর সদ্য বিবাহিতা চিকিৎসক স্ত্রী’ও এই আন্দোলনে যুক্ত । আগামীদিনে লড়াই কঠিন হলেও চালিয়ে যাবেন তাঁরা । ছেলে-বউমার এই উদ্যোগে গর্বিত পরিবার ৷
দেবাশিসের আদি বাড়ি বলাগরের খামারগাছির সিজা বাজারের কাছে মুক্তকেশী তলায় । বাবা ক্ষিতীশ হালদারের প্রথমে স্টেশনে একটি ছোট অস্থায়ী দোকান থাকলেও পরে পূর্ত দফতরে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পান । বর্তমানে তিনি অবসর নিয়েছেন । ফলে পরিবারের একমাত্র ভরসা ছেলে । মা অনিমা ও পিসি মীরা হালদারের কাছেই মানুষ দেবাশিস । মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে কৃতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন ।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক থেকে ধরনা মঞ্চে মাইক হাতে গলা ফাটিয়ে স্লোগান দেওয়া, সবকিছুতেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে রয়েছেন তিনি । রোদে-জলে প্রায় দেড় মাস অধিকারের লড়াই লড়ছেন চিকিৎসকরা । পরিবারের দাবি, চিকিৎসক দেবাশিস কোনও দিনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না । দেবাশিসের এই নেতৃত্বদান সহজাত নয়, আন্দোলনের ও নৃশংস ঘটনার ফসল ৷
বাবা ক্ষিতীশ হালদার বলেন, ‘‘স্কুলে বরাবরই প্রথম ৷ আঁকা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতাতেও প্রথম স্থান পাকা ছিল । অভিনয়েও দক্ষ । ঘরের আলমারিতে থরে থরে সাজানো বই, পাশেই রয়েছে একাধিক সাফল্যের স্বীকৃতি । দাদাগিরির মঞ্চে গিয়েও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিল ।করোনা পরিস্থিতিতেও মানুষের পাশে ছিল । জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে এই আন্দোলনটা করছে তাতে আমি গর্বিত । ধরনা মঞ্চে আমরাও গিয়েছিলাম ৷ সাধারণ মানুষ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । এটা দেখে আমার আরও বেশি ভালো লেগেছে । এই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক রং নেই । ওরা মেরুদণ্ড সোজা রেখে আন্দোলন করছে । এই আন্দোলনকে আমি কুর্নিশ জানাই ।’’
দেবাশিসের মা অনিমা বলেন, ‘‘ছেলে ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করছে ৷ এটা আমাদের খুব ভালো লাগছে । ছোট থেকে প্রতিবাদী না-হলেও কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিত না । সব সময় সত্যি কথা বলতো । এখন ছেলের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা হয় না । তবে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় লাগে । আবার এটা ভেবে সাহস জাগে, সিনিয়ার ডাক্তাররাও তাঁদের পাশে রয়েছেন ।’’