ডায়মন্ড হারবার, 11 সেপ্টেম্বর: রায় পছন্দ না-হলে বিচারব্যবস্থার সমালোচনা অনেককেই করতে শোনা যায় ৷ তা বলে রায় না-পসন্দ হওয়ায় বিচারকের বাড়িতে হামলার চেষ্টা হবে ! শুনতে অবাক লাগলেও এমনই অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মন্ড হারবারে ৷ সেখানে এক এসিজেএম-র বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কাটতে বিচারকদের আবাসনে প্রবেশের চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ৷ এই ঘটনায় পুলিশের যোগসাজশ রয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে ৷
পকসো মামলায় রায় না-পসন্দ! বিচারকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ (ইটিভি ভারত) এই নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্বয়ং বিচারকরাই ৷ তাঁদের তরফে জেলা বিচারকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে ৷ জেলা বিচারক আবার সেই অভিযোগ পাঠিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টে ৷ ফলে এই নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে সর্বত্র ৷ ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ সরব হয়েছেন রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও ৷
এই পরিস্থিতিতে বুধবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে হাজির হন ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার রাহুল গোস্বামী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিতুনকুমার দে-সহ শীর্ষ আধিকারিকরা ৷ তাঁরা এসিজেএম-এর সঙ্গে কথা বলেন ৷ পরে পুলিশ সুপার জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে ৷ পরে একজনকে আটকও করা হয় বলে জানা গিয়েছে ৷
জেলা বিচারককে পাঠানো ডায়মন্ড হারবারের বিচারকদের চিঠি৷ (নিজস্ব চিত্র) সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী ডায়মন্ড হারবারের শিবালয়ে স্থানীয় মহকুমা আদালতের এসিজেএম শচীনন্দু মোহন ভৌমিকের আবাসনে গিয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই ঘটনা ঘটল ? বিচারকদের সন্দেহ, শিশুদের যৌন নিগ্রহের মামলার রায় পছন্দ না হওয়ায় হামলা হয় ৷
কলকাতা হাইকোর্টে পাঠানো জেলা বিচারকের চিঠি৷ (নিজস্ব চিত্র) এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৷ জেলা বিচারককে পাঠানো চিঠিতে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সাব-ইন্সপেক্টর কুমারেশ দাসের নামের উল্লেখ করা হয়েছে ৷ কুমারেশ দাস ডায়মন্ড হারবারের এসিজেএমের নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে । কুমারেশ দাস ছাড়াও আরও এক পুলিশকর্মীর কথা উল্লেখ করেছেন ডায়মন্ড হারবার মহকুমার আদালতের এসিজেএম । পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় এক পুলিশ কর্মীকে ক্লোজ করা হয়েছে ৷ তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে ৷
কলকাতা হাইকোর্টে পাঠানো জেলা বিচারকের চিঠি৷ (নিজস্ব চিত্র) এই ঘটনায় কার্যত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিচারকরা । সেই বিষয়টিই চিঠিতে জানানো হয় জেলা বিচারকের কাছে ৷ সেখান থেকে চিঠি কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার পরই হইচই পড়ে যায় পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরে ৷ বুধবার দুপুরে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার আদালতে যান ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার রাহুল গোস্বামী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিতুনকুমার দে ৷ তাঁরা কথা বলেন ওই এসিজেএমের সঙ্গে৷ পুলিশ সুপার রাহুল গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত শুরু করেছি ৷ খুব দ্রুতই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে । বিচারকের আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে । সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হবে ।’’
এই ঘটনায় আতঙ্কিত ডায়মন্ড হারবার মহকুমার আদালতের আইনজীবীরা ৷ তাঁরা বিচারকের আবাসনে হামলার ঘটনায় একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করেন । এই নিয়ে আইনজীবী দেবাংশু পান্ডা বলেন, ‘‘বিচারকরাই নিরাপদ নন ৷ তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় । এটি খুব দুঃখজনক ঘটনা ৷ আমরা চাই দোষীরা শাস্তি পাক এবং পুলিশ সঠিক তদন্ত শুরু করুক । বিচারকের আবাসনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সকল পুলিশ কর্মীদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করুক ।’’
এই বিষয়ে অন্য এক আইনজীবী সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে । এই ঘটনা কোনোমতেই কাম্য নয় । আমরা চাই এই ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক পুলিশ-প্রশাসন ।’’
এদিকে এই নিয়ে সরব হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত বিচারব্যবস্থা ৷ এই নিয়ে রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "এই ঘটনায় খুব বিস্মিত নই । রাজ্যের সব জায়গায় এই ঘটনা ঘটছে । নিচের তলায় যাঁরা বিচারক, তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি আমার এক জুনিয়র সে এখন জেলা বিচারক, তার কাছে শুনেছি বলতে, সকালবেলা যখন মর্নিং ওয়াকে যায়, তখন আশপাশ থেকে দু’তিনজন বলে যাচ্ছে সামলে চলবেন । মানে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে যদি কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়, সেই দুষ্কৃতীর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ এত বেশি যে তারা থ্রেট করতে ভয় পায় না ।’’
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে, তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন এটা। নিম্ন আদালতের বিচারকরা পর্যন্ত ভয় পাচ্ছেন আদেশ দিতে । এখনই যদি কোনও পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আগামিদিনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের ও শঙ্কায় পড়তে হবে ।"