ETV Bharat / state

নিষিদ্ধপল্লির অন্ধকারে শিক্ষার প্রদীপ নিয়ে ছুটছেন শিক্ষাকর্তা - LITERACY IN RED LIGHT AREA

মালদার হংসগিরি লেন ৷ সেখানকার শিশুদের কাছেও যাতে শিক্ষার আলো পৌঁছায়, তা নিয়ে উদ্যোগী শিক্ষাকর্তা বাণীব্রত দাস ৷

LITERACY IN RED LIGHT AREA
নিষিদ্ধপল্লির অন্ধকারে শিক্ষার প্রদীপ নিয়ে ছুটছেন শিক্ষাকর্তা (প্রতীকী ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 14 hours ago

মালদা, 28 ডিসেম্বর: রেড লাইট এরিয়া ৷ শব্দগুলি কানে গেলেই ভ্রূ কুঁচকে যায় তথাকথিত সিভিল সোসাইটির ৷ একই কথা প্রযোজ্য মালদা শহরের হংসগিরি লেন নিয়েও ৷ কেউ জানে না, এই গলির প্রতিটি কুঠুরিতে লুকিয়ে রয়েছে কত করুণ কাহিনি ৷ সেসব কেউ জানার প্রয়োজনও মনে করে না ৷

তাই 224 বছরের পুরোনো এই গলি এখনও থেকে গিয়েছে আলোর পিছনে ৷ গলির ছেলেমেয়েরা ছোট থেকে দেখে আসছে মায়েদের পেশা ৷ কখনও মা বলেছেন, তাদের পড়াশোনা করতে হবে ৷ মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে ৷ কিন্তু তাদের স্কুলে ভর্তি করবে কে ? স্কুলে সহপাঠীদের তীর্যক মন্তব্যের মুখোমুখি হবে কীভাবে ? এসব চিন্তা করে ইচ্ছে বুকে চেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন মায়েরা ৷

নিষিদ্ধপল্লির অন্ধকারে শিক্ষার প্রদীপ নিয়ে ছুটছেন শিক্ষাকর্তা (ইটিভি ভারত)

কিন্তু এবার তাঁদের সেই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক ৷ বিষয়টি জানতে পেরেই সহকর্মীদের নিয়ে সোজা চলে গিয়েছেন সেই গলিতে ৷ কথা বলেছেন মায়েদের সঙ্গে ৷ ছেলেমেয়েদের আশ্বাস দিয়েছেন, এবার তারাও স্কুলে যাবে ৷ পড়াশোনা করবে৷ ভবিষ্যতে চাকরি করবে ৷

শুধু মৌখিক আশ্বাস নয়, ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি ৷ আগামী 5 জানুয়ারি তাঁরা ফের সেই গলিতে ক্যাম্প করবেন ৷ যেসব ছেলেমেয়ের আধার কার্ড কিংবা অন্য সরকারি নথি নেই, সেদিনই তাদের সেসব দেওয়া হবে ৷ এই কাজে তাঁকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন খোদ জেলাশাসক ৷ বিষয়টি জেনে শিক্ষা দফতরের কর্তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত জেলার শিক্ষা মহলও ৷

শিক্ষাকর্তা বাণীব্রত দাস বলেন, “আগামী 1 থেকে 8 জানুয়ারি জেলাজুড়ে পালিত হবে শিক্ষা সপ্তাহ ৷ জেলার 584টি স্কুল এই বিশেষ সপ্তাহ পালন করবে ৷ মূল লক্ষ্য, জেলায় একটি বাচ্চাও যেন স্কুলছুট না-থাকে ৷ এর জন্য আমাদের টিম ওই রেড লাইট এরিয়ায় গিয়েছিলাম ৷ সেখানে আমরা একটি প্রচার অভিযানও চালাই ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই এলাকার ছেলেমেয়েদের পিতৃত্বের যে পরিচয় নেই, সেটা ঠিক ৷ কিন্তু এখন মায়ের পরিচয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হতে পারে ৷ আগামী 5 তারিখ আমরা ওই এলাকায় একটি বড় ধরনের প্রচার ক্যাম্প করব ৷ গম্ভীরার মাধ্যমে সেখানকার বাসিন্দাদের সচেতন করা হবে ৷ শিক্ষা একটা অধিকার৷ তাই কোনও বাচ্চা যেন অধিকারহীন না হয় ৷’’

LITERACY IN RED LIGHT AREA
শিক্ষাকর্তা বাণীব্রত দাস (বাঁদিকে) (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও জানান, এই বাচ্চারা সমাজেরই অংশ ৷ তাই ওই শিশুদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকা উচিত নয় ৷ প্রাথমিক 12 জন শিশুকে দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু হচ্ছে ৷ এই শিশুদের মধ্যে একজনের আধার কার্ড রয়েছে ৷ তাকেই মডেল করা হচ্ছে ৷

বাণীব্রত দাস বলেন, ‘‘ওখানে আমরা যে বাচ্চাদের চিহ্নিত করেছি, তার মধ্যে তিনটি বাচ্চার কোনও নথিপত্র নেই ৷ বাকিদের সব আছে ৷ এনিয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব ৷ তারপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব ৷ আমরা ওই এলাকায় স্থানীয় একটি স্কুলের এক শিক্ষিকাকেও নিয়ে গিয়েছিলাম ৷ তিনি জানিয়েছেন, তিনি এমন বাচ্চাকে আগে ভর্তি করিয়েছেন ৷ সেই বাচ্চারা এখন চিন্তামনি স্কুলে পড়ছে ৷ তাই আশা করছি, এই বাচ্চাগুলিকে তাদের সহপাঠীরা স্কুলে উত্যক্ত করবে না ৷ যদি তেমন হয়, তবে আমাদের টিম স্কুলে গিয়ে সচেতনতা শিবির করবে ৷”

এই কাজে শিক্ষা দফতরের দিকে সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি ৷ সমিতির তরফে ফিল্ড ওয়ার্কার আম্বারি খাতুন বলেন, “আমি আজ একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে এসেছি ৷ সোমবার দু’টি বাচ্চাকে সেখানে ভর্তি করব ৷ যে বাচ্চাদের বয়স পাঁচ বছরের বেশি, তাদের স্কুলে ভর্তির জন্য ডিআই আর এসআই পদক্ষেপ করবেন ৷ তাঁরা এখানে এসেছিলেন৷ সব দেখে, জেনে গিয়েছেন ৷’’

আম্বারি আরও বলেন, ‘‘ডিআই স্যারের এই উদ্যোগে আমি আপ্লুত ৷ 26 বছরের বেশি সময় ধরে এই মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি ৷ তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে অনেক করুণ কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে ৷ তাদের সঙ্গে থেকে, তাদের কাছে সব শুনে আমরা তাদের সমস্যার কথা জানতে পারছি ৷”

বিষয়টি জেনে উচ্ছ্বসিত জেলার অন্যতম প্রবীণ শিক্ষাবিদ মহম্মদ আতাউল্লাহ ৷ তাঁর বক্তব্য, “খুব ভালো খবর ৷ এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ডিআইকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হবে ৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার এতদিন বাদে এদিকে নজর পড়েছে ৷ দেরি হলেও, এই উদ্যোগ সত্যিই আনন্দের ৷ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মনে হচ্ছে, সত্যিই কোনও ভালো কাজ আমি দেখে যাচ্ছি ৷’’

প্রবীণ ওই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘‘ওই মহিলাদের কতটা দুর্ভাগ্য, তা বলার নয় ৷ কিন্তু তাঁদের পরের প্রজন্ম যাতে মানুষের মতো বাঁচে তার জন্য এমন উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল ৷ আমরা যেটা করতে পারিনি, জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাঁর পদে থেকে সেই কাজটি করছেন ৷ আমার ধারণা, তাঁর এই উদ্যোগ আগামীতে দেশের প্রতিটি এমন মহল্লায় অনুসৃত হবে ৷ এসব মহল্লার মহিলাদের মনে আশার আলো জ্বলবে ৷”

জেলার শিক্ষাকর্তার এই উদ্যোগ চোখে জল এনে দিয়েছে হংসগিরি লেনের অনেক মহিলার চোখেই ৷ চোখের জল মুছতে মুছতে তাঁদেরই একজন বললেন, “আমার বাড়ি বহরমপুরে ৷ মা-বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইরা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ খেতে পেতাম না ৷ বাধ্য হয়ে এই পেশায় ঢুকতে হয়েছে ৷ বছর ছয়েক ধরে এই গলিই আমার ঠিকানা ৷ একটি মেয়ে আছে ৷ ওর ভবিষ্যৎ যেন আমার মতো না-হয় ৷ ওকে আমি পড়াশোনা করাব ৷ বড় হয়ে ও নিজের পায়ে দাঁড়াবে ৷ এই স্বপ্নই দেখে যাচ্ছি ৷”

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় সঞ্জয় লীলা বনসালির তৈরি সিনেমায় গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ির কথা, “কোঠি সে হোতা হ্যায় তো ক্যায়া হুয়া ! শিক্ষা কা হক সবকো হ্যায় ৷” এক্ষেত্রে বাণীব্রতবাবুই যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছেন সেই গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্রের সঙ্গে ৷

মালদা, 28 ডিসেম্বর: রেড লাইট এরিয়া ৷ শব্দগুলি কানে গেলেই ভ্রূ কুঁচকে যায় তথাকথিত সিভিল সোসাইটির ৷ একই কথা প্রযোজ্য মালদা শহরের হংসগিরি লেন নিয়েও ৷ কেউ জানে না, এই গলির প্রতিটি কুঠুরিতে লুকিয়ে রয়েছে কত করুণ কাহিনি ৷ সেসব কেউ জানার প্রয়োজনও মনে করে না ৷

তাই 224 বছরের পুরোনো এই গলি এখনও থেকে গিয়েছে আলোর পিছনে ৷ গলির ছেলেমেয়েরা ছোট থেকে দেখে আসছে মায়েদের পেশা ৷ কখনও মা বলেছেন, তাদের পড়াশোনা করতে হবে ৷ মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে ৷ কিন্তু তাদের স্কুলে ভর্তি করবে কে ? স্কুলে সহপাঠীদের তীর্যক মন্তব্যের মুখোমুখি হবে কীভাবে ? এসব চিন্তা করে ইচ্ছে বুকে চেপে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন মায়েরা ৷

নিষিদ্ধপল্লির অন্ধকারে শিক্ষার প্রদীপ নিয়ে ছুটছেন শিক্ষাকর্তা (ইটিভি ভারত)

কিন্তু এবার তাঁদের সেই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক ৷ বিষয়টি জানতে পেরেই সহকর্মীদের নিয়ে সোজা চলে গিয়েছেন সেই গলিতে ৷ কথা বলেছেন মায়েদের সঙ্গে ৷ ছেলেমেয়েদের আশ্বাস দিয়েছেন, এবার তারাও স্কুলে যাবে ৷ পড়াশোনা করবে৷ ভবিষ্যতে চাকরি করবে ৷

শুধু মৌখিক আশ্বাস নয়, ইতিমধ্যে সেই কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি ৷ আগামী 5 জানুয়ারি তাঁরা ফের সেই গলিতে ক্যাম্প করবেন ৷ যেসব ছেলেমেয়ের আধার কার্ড কিংবা অন্য সরকারি নথি নেই, সেদিনই তাদের সেসব দেওয়া হবে ৷ এই কাজে তাঁকে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন খোদ জেলাশাসক ৷ বিষয়টি জেনে শিক্ষা দফতরের কর্তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত জেলার শিক্ষা মহলও ৷

শিক্ষাকর্তা বাণীব্রত দাস বলেন, “আগামী 1 থেকে 8 জানুয়ারি জেলাজুড়ে পালিত হবে শিক্ষা সপ্তাহ ৷ জেলার 584টি স্কুল এই বিশেষ সপ্তাহ পালন করবে ৷ মূল লক্ষ্য, জেলায় একটি বাচ্চাও যেন স্কুলছুট না-থাকে ৷ এর জন্য আমাদের টিম ওই রেড লাইট এরিয়ায় গিয়েছিলাম ৷ সেখানে আমরা একটি প্রচার অভিযানও চালাই ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই এলাকার ছেলেমেয়েদের পিতৃত্বের যে পরিচয় নেই, সেটা ঠিক ৷ কিন্তু এখন মায়ের পরিচয়ে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ভর্তি হতে পারে ৷ আগামী 5 তারিখ আমরা ওই এলাকায় একটি বড় ধরনের প্রচার ক্যাম্প করব ৷ গম্ভীরার মাধ্যমে সেখানকার বাসিন্দাদের সচেতন করা হবে ৷ শিক্ষা একটা অধিকার৷ তাই কোনও বাচ্চা যেন অধিকারহীন না হয় ৷’’

LITERACY IN RED LIGHT AREA
শিক্ষাকর্তা বাণীব্রত দাস (বাঁদিকে) (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও জানান, এই বাচ্চারা সমাজেরই অংশ ৷ তাই ওই শিশুদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকা উচিত নয় ৷ প্রাথমিক 12 জন শিশুকে দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু হচ্ছে ৷ এই শিশুদের মধ্যে একজনের আধার কার্ড রয়েছে ৷ তাকেই মডেল করা হচ্ছে ৷

বাণীব্রত দাস বলেন, ‘‘ওখানে আমরা যে বাচ্চাদের চিহ্নিত করেছি, তার মধ্যে তিনটি বাচ্চার কোনও নথিপত্র নেই ৷ বাকিদের সব আছে ৷ এনিয়ে আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব ৷ তারপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব ৷ আমরা ওই এলাকায় স্থানীয় একটি স্কুলের এক শিক্ষিকাকেও নিয়ে গিয়েছিলাম ৷ তিনি জানিয়েছেন, তিনি এমন বাচ্চাকে আগে ভর্তি করিয়েছেন ৷ সেই বাচ্চারা এখন চিন্তামনি স্কুলে পড়ছে ৷ তাই আশা করছি, এই বাচ্চাগুলিকে তাদের সহপাঠীরা স্কুলে উত্যক্ত করবে না ৷ যদি তেমন হয়, তবে আমাদের টিম স্কুলে গিয়ে সচেতনতা শিবির করবে ৷”

এই কাজে শিক্ষা দফতরের দিকে সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি ৷ সমিতির তরফে ফিল্ড ওয়ার্কার আম্বারি খাতুন বলেন, “আমি আজ একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে এসেছি ৷ সোমবার দু’টি বাচ্চাকে সেখানে ভর্তি করব ৷ যে বাচ্চাদের বয়স পাঁচ বছরের বেশি, তাদের স্কুলে ভর্তির জন্য ডিআই আর এসআই পদক্ষেপ করবেন ৷ তাঁরা এখানে এসেছিলেন৷ সব দেখে, জেনে গিয়েছেন ৷’’

আম্বারি আরও বলেন, ‘‘ডিআই স্যারের এই উদ্যোগে আমি আপ্লুত ৷ 26 বছরের বেশি সময় ধরে এই মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি ৷ তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে অনেক করুণ কাহিনি জড়িয়ে রয়েছে ৷ তাদের সঙ্গে থেকে, তাদের কাছে সব শুনে আমরা তাদের সমস্যার কথা জানতে পারছি ৷”

বিষয়টি জেনে উচ্ছ্বসিত জেলার অন্যতম প্রবীণ শিক্ষাবিদ মহম্মদ আতাউল্লাহ ৷ তাঁর বক্তব্য, “খুব ভালো খবর ৷ এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ডিআইকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হবে ৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার এতদিন বাদে এদিকে নজর পড়েছে ৷ দেরি হলেও, এই উদ্যোগ সত্যিই আনন্দের ৷ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মনে হচ্ছে, সত্যিই কোনও ভালো কাজ আমি দেখে যাচ্ছি ৷’’

প্রবীণ ওই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘‘ওই মহিলাদের কতটা দুর্ভাগ্য, তা বলার নয় ৷ কিন্তু তাঁদের পরের প্রজন্ম যাতে মানুষের মতো বাঁচে তার জন্য এমন উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল ৷ আমরা যেটা করতে পারিনি, জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক তাঁর পদে থেকে সেই কাজটি করছেন ৷ আমার ধারণা, তাঁর এই উদ্যোগ আগামীতে দেশের প্রতিটি এমন মহল্লায় অনুসৃত হবে ৷ এসব মহল্লার মহিলাদের মনে আশার আলো জ্বলবে ৷”

জেলার শিক্ষাকর্তার এই উদ্যোগ চোখে জল এনে দিয়েছে হংসগিরি লেনের অনেক মহিলার চোখেই ৷ চোখের জল মুছতে মুছতে তাঁদেরই একজন বললেন, “আমার বাড়ি বহরমপুরে ৷ মা-বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইরা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ খেতে পেতাম না ৷ বাধ্য হয়ে এই পেশায় ঢুকতে হয়েছে ৷ বছর ছয়েক ধরে এই গলিই আমার ঠিকানা ৷ একটি মেয়ে আছে ৷ ওর ভবিষ্যৎ যেন আমার মতো না-হয় ৷ ওকে আমি পড়াশোনা করাব ৷ বড় হয়ে ও নিজের পায়ে দাঁড়াবে ৷ এই স্বপ্নই দেখে যাচ্ছি ৷”

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় সঞ্জয় লীলা বনসালির তৈরি সিনেমায় গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ির কথা, “কোঠি সে হোতা হ্যায় তো ক্যায়া হুয়া ! শিক্ষা কা হক সবকো হ্যায় ৷” এক্ষেত্রে বাণীব্রতবাবুই যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছেন সেই গাঙ্গুবাইয়ের চরিত্রের সঙ্গে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.