বোলপুর, 28 ডিসেম্বর: শনিবার রাতে শেষ হচ্ছে ছয় দিনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা ৷ তবে, এবার আর ভাঙা-মেলা থাকবে না ৷ এর জন্য কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও বীরভূম জেলা প্রশাসন ৷ শনিবার একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই 29 ডিসেম্বর থেকে বেচাকেনা করতে দেওয়া হবে না ব্যবসায়ীদের ৷
এই নিয়ে বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মাঠ পরিষ্কার করে 31 ডিসেম্বরে মধ্যে জাতীয় পরিবেশ আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে ৷ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শান্তিনিকেতনের পৌষমেলায় এবার প্রায় 7 লক্ষ জনসমাগম হয়েছিল বলে জানান তিনি ৷ পাশাপাশি, বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় 250টি মামলা রুজু করেছে বোলপুর পুলিশ-প্রশাসন ৷
'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' শান্তিনিকেতনে 2019 সালের পর প্রথমবার শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষর উদ্যোগে পৌষমেলা হল ৷ 23 ডিসেম্বর থেকে প্রথা মেনে শুরু হয়েছিল পৌষমেলা ৷ 28 ডিসেম্বর রাতের বেচাকেনার পর ছয়দিনের এই মেলার সমাপ্তি হবে ৷ তবে, মেলায় নজর রয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের ৷
কারণ, এবারের পৌষমেলা পরিবশবান্ধব ৷ আর ভাঙা-মেলায় সব থেকে বেশি দূষণ হয় ৷ তাই কোনোভাবেই ভাঙা-মেলা রাখা যাবে না ৷ এই নির্দেশিকা রয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের ৷ তাই ভাঙা-মেলা আটকাতে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে একটি বৈঠক হয় ৷ উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার, রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখ, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (বোলপুর) রানা মুখোপাধ্যায়, এসডিপিও বোলপুর রিকি আগরওয়াল-সহ বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, বোলপুর পুরসভা এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ৷
সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, 29 ডিসেম্বর অর্থাৎ, রাত বারোটার পর থেকে শান্তিনিকেতন থানা বরাবর দু’টি গেট ছাড়া, পূর্বপল্লির মাঠের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে ৷ কোনোরকম পর্যটককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না ৷ এমনকি বেচাকেনাও করতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা ৷ 31 ডিসেম্বরে মধ্যে সম্পূর্ণ মাঠ পরিষ্কার করে জাতীয় পরিবেশ আদালকে রিপোর্ট দেওয়া হবে ৷
অন্যদিকে, ছয় দিনের মেলায় বড় রকম কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি ৷ পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় 7 লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটেছিল ৷ মেলায় কেপমারি, ইভটিজিং-সহ একাধিক অপরাধের ঘটনায় মহিলা-সহ 550 জনকে আটক করেছে পুলিশ ৷ তার মধ্যে 250টি মামলা রুজু করা হয়েছে ৷ আর একটি বাল্য বিবাহও রুখেছে পুলিশ-প্রশাসন ৷
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন বলেন, "ভাঙা-মেলা কোনোভাবেই রাখা যাবে না ৷ চারদিনের জায়গায় মেলা বাড়িয়ে ছয় দিন করা হয়েছে ৷ এরপর আর ভাঙা-মেলা রাখার প্রশ্নই আসে না ৷ সব দোকানদারদের উঠে যেতে হবে ৷"
বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, "এত মানুষের সমাগম হয়েছে ৷ সেই তুলনায় কোনও বড় ক্রাইম হয়নি ৷ সুষ্ঠুভাবে মেলা হয়েছে ৷ পুলিশ প্রতিপদে মেলার নিরাপত্তায় নজর রেখেছিল ৷ 250টি কেস কোর্টে পাঠানো হয়েছে ৷ ভাঙা-মেলা রুখতে 28 ডিসেম্বর রাতে পুলিশ, বিশ্বভারতী, ট্রাস্ট, প্রশাসন মিলে একটি অভিযান চালানো হবে ৷ মেলায় ঘুরে দোকানদারদের বলা হবে ৷ দু’টি বাদে, মাঠের সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে ৷"