কলকাতা, 31 জানুয়ারি: মৌনী অমাবস্যার দিন মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের ৷ সেদিনের পর থেকে নিখোঁজ ও মৃত্যু হয়েছে এ রাজ্যের কয়েকজনের ৷ রইল শুক্রবার পাওয়া পুণ্যার্থীদের জেলাভিত্তিক বর্ণনা ৷
বীরভূম :
আত্মীয়দের সঙ্গে 27 জানুয়ারি মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন রামপুরহাট শহরের 11নং ওয়ার্ডের গায়ত্রী দে (58) ৷ 28 জানুয়ারি পৌঁছে বাড়িতে ফোনে যোগাযোগ করেন ৷ তবে মৌনী অমাবস্যার দিন পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ শুক্রবার দুপুর নাগাদ সোশাল মিডিয়ায় মৃতদের ছবি দেখে মাকে শনাক্ত করেন ছেলে প্রতাপ দে । পরিবারের তরফ থেকে রামপুরহাট থানায় বিষয়টি জানানো হয় । মৃত গায়ত্রী দের ছেলে প্রতাপ দে বলেন, "মা কুম্ভ স্নানে গিয়েছিল । যাওয়ার পর ফোন করেছিল দু'বার । কিন্তু পদপিষ্টের ঘটনার পর আর কোনও খবর পাইনি । আজ পাড়ার একটি ছেলের মোবাইলে ছবি দেখে মা কে চিনতে পারি । বিষয়টি রামপুরহাট থানায় জানিয়েছি । প্রশাসন যেমন বলবে তেমনভাবেই মাকে আনার ব্যবস্থা করব ।"
হুগলি :
মহাকুম্ভে গিয়ে সঙ্গম ঘাট থেকে নিখোঁজ বৈদ্যবাটির বাসিন্দা । নাম দীনেশ ঘোষ । বয়স 48 বছর ৷ বাড়ি বৈদ্যবাটি জেএন গুপ্ত লেনে । 27 জানুয়ারি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী দীনেশ ও বৈদ্যবাটির আরও দুই বাসিন্দা কুম্ভমেলায় গিয়েছিলেন । তাঁরা শুক্রবার বাড়ি ফিরে এলেও দীনেশের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি । পরিবারের তরফে কুম্ভমেলার হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করা হয় । এক আধিকারিকের কাছে ছবি ও নাম ঠিকানা পাঠানো হয় পরিবারের তরফে । বাবাকে খুঁজতে পোস্টার তৈরি করে প্রয়াগরাজে যাচ্ছে দীনেশের ছেলে হিরন্ময় ঘোষ । শুক্রবার আজ হাওড়া থেকে সন্ধ্যায় ট্রেন ধরবেন তিনি । এর আগেও কুম্ভমেলা,গঙ্গাসাগর ও তারাপীঠ গিয়েছিল দীনেশ । কিন্তু এবার বাড়ি না ফেরায় চিন্তিত পরিবার ৷ প্রয়াগরাজে পদপিষ্টের ঘটনা আরও দুশ্চিন্তার বাড়িয়েছে পরিবারের ।
বৈদ্যবাটির তিনবাসিন্দা মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন । 28 জানুয়ারি দুপুর 2টোয় প্রয়াগরাজের সঙ্গমঘাটে গিয়ে 29 জানুয়ারি ভোর সাড়ে পাঁচটায় স্নান করেছিলেন তাঁরা । সেই সময় 1 নম্বর ঘাটে স্নানে করতে যাওয়ার আগেই দল ছুট হয়ে যান দীনেশ । তাঁর কাছে কোনও মোবাইল ফোন নেই । কিন্তু বাড়ির ফোন নম্বর জানতেন দীনেশ । সঙ্গম ঘাটে মাইকে খুঁজে পাওয়ার জন্য দীনেশের নামে ঘোষণা করা হয় । কিন্তু কোনওভাবেই খোঁজ পাওয়া যায়নি । বাধ্য হয়ে দীনেশের পরিবারকে নিখোঁজ হওয়ার খবর জানানো হয় ফোনে । এদিনই বেনারসে বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের । সেই মতো খোঁজার জন্য সেখানের নির্দিষ্ট হোটেলে গিয়েও দীনেশকে পাওয়া যায়নি ৷ এরপর 31 জানুয়ারি বাড়ি ফিরে আসে শুভঙ্কর ও সন্টু ।
ছেলে হিরন্ময়ের কথায়, "এর আগেও বাবা বিভিন্ন জায়গায় এদের সঙ্গে গিয়েছিল । অন্য সময় বেড়াতে গিয়ে দল ছুট হলেও অন্যের ফোন থেকে বাড়িতে জানাত । কিন্তু এবারে বাবার কোনও ফোন আসেনি । শারীরিক অসুস্থতা কিছু ছিল না । যেহেতু মহাকুম্ভে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে সেই কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি আমরা ।"
দীনেশের স্ত্রী সন্তোষী ঘোষ বলেন, "সোমবার সন্ধ্যায় আমাকে ফোন করেছিলেন । অন্যান্য যারা গিয়েছিল তাদের ফোন থেকেই শেষ আমাকে ফোন করে । আর কোনও ফোন করেনি । শনিবার ফেরার কথা ছিল । তার আগেই নিখোঁজের খবর আসে বাড়িতে ।"
উত্তর 24 পরগনা :
মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে গিয়ে পদপিষ্টের পর থেকে নিখোঁজ মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ ঘোষ (65)। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, গত সোমবার পরিবারের সঙ্গে প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন । গত বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর খোঁজ মিলছে না । এই নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ রেজিস্টার করার পাশাপাশি মধ্যমগ্রাম থানাতেও নিখোঁজের ডায়েরি করেছে পরিবার । মধ্যমগ্রামের এক ট্রাভেলিং এজেন্সির মাধ্যমে পরিবারের পাঁচজনের সঙ্গে মহাকুম্ভে গিয়েছিলেন দিয়েছিলেন প্রদীপ ঘোষ । সেখানে পৌঁছানোর পর বৃহস্পতিবার কুম্ভের সেক্টর 1 এলাকা থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি । শুক্রবার পর্যন্ত বৃদ্ধের কোনও রকম হদিশ না মেলায় চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারের ।
আলিপুরদুয়ার :
প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে তীর্থযাত্রা করতে গিয়ে মৃত্যু হল জয়গাঁওয়ের এক যুবকের । আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের অন্তর্গত জয়গাঁও থেকে অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে মহাকুম্ভে গিয়েছিল জয়গাঁওয়ের এনএস রোডের বাসিন্দা মিঠুন শর্মা (32)। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি স্থানীয় একটি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানির গাড়ির চালক ছিলেন । মিঠুনের বোন নীলম শর্মা বলেন,"মৌনী অমাবস্যায় অমৃতস্নান করতে মহাকুম্ভে গিয়েছিল দাদা । সেখানে বিশাল ভিড়ের কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় । সেই সময় দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । যদিও মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি ৷ মৃতদেহ এখনও বাড়িতে পৌঁছয়নি । কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল সেটি তাঁর মৃতদেহ এবং ওর সঙ্গে যারা গিয়েছিল তারা এলেই জানতে পারব । দাদার এক সহযাত্রী এই আকস্মিক মৃত্যুর খবর বাড়িতে জানান ।"
মালদা :
বাবা-মা'কে মহাকুম্ভে নিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে কালিয়াচকের এক প্রাথমিক শিক্ষকের ৷ বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃতদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় ৷ মৃত যুবকের নাম অমিয় সাহা (28) ৷ বাড়ি কালিয়াচক 3 নং ব্লকের বীরনগর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের চরবাবুপুর গ্রামে ৷ বাড়ির পাশেই কার্তিকটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি ৷ পরিবারের সদস্যরা জানান, বাবা-মা ও কাকু-কাকিমাকে নিয়ে মঙ্গলবার প্রয়োগরাজে পৌঁছন অমিয় ৷ মৌনী অমাবস্যায় স্নান সেরে তাঁরা বাসস্ট্যান্ডের দিকে ফিরছিলেন ৷ সেখানেই তাঁদের গাড়ি রাখা ছিল ৷ কিন্তু প্রবল ভিড়ে তাঁরা আলাদা হয়ে যান ৷ অনেক কষ্টে গাড়ির কাছে পৌঁছে তাঁর বাবা তাকে ফোন করেন ৷ বাবা-মা গাড়ির কাছে পৌঁছে গিয়েছেন জেনে কোনওরকমে তিনিও সেখানে পৌঁছন ৷ গিয়ে জানান ভিড়ের চাপে তাঁর বুকে ধাক্কা লেগেছে ৷ বুকে ব্যথা করছে ৷ এসব বলতে বলতেই অজ্ঞান হয়ে যায় ৷ পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷ শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অমিয়র মৃতদেহ ঘরে ফিরিয়ে আনা হয় ৷
অন্যদিকে, এখনও কোনও সন্ধান মেলেনি মহাকুম্ভে পুণ্যস্নানে যাওয়া মালদা শহরের উত্তর কৃষ্ণপল্লি ভাঙাপাড়ার বাসিন্দা অনিতা ঘোষের (60)৷ শুক্রবার তাঁর পুত্রবধূ অষ্টমী ঘোষ বলেন, "এখনও শাশুড়ির খোঁজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ প্রয়াগরাজের পুলিশও তাঁর খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করছে ৷ তবে এখনও তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ আমরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি ৷"