কোচবিহার ও ফুলবাড়ি, 20 জুলাই: মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য সংরক্ষিত কোটার জেরে ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। গত বুধবার থেকে ওপার বাংলার রাজপথের দখল নিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার রাত থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। পরিস্থিতি অশান্ত ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে ফুলবাড়ি সংলগ্ন রংপুর ও পঞ্চগড় জেলায়। শনিবার সকাল থেকে আতঙ্কে এপার বাংলায় ফিরতে শুরু করেছেন ভারত, নেপাল এবং ভুটানের বাসিন্দারা। তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
আতঙ্কে ভারতে ফিরলেন আরও অনেক পড়ুয়া (ইটিভি ভারত) ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তের ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে সকাল থেকে ফিরতে শুরু করেছেন পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। কারফিউ জারি হওয়ায় গাড়ির সমস্যায় পড়তে হয়েছে ওই মানুষদের। আগামীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। তবে এখন তাঁরা চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব শান্তি ফিরুক বাংলাদেশে। এদিকে, কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, "গত দু'দিনে মোট 46 জন মেডিক্যাল পড়ুয়া বাংলাদেশ থেকে এদেশে প্রবেশ করেছেন। এরপর তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাবেন। এদের মধ্যে ভারতের বাসিন্দা ছাড়াও নেপাল, মায়ানমার ও মলদ্বীপের বাসিন্দারাও রয়েছেন।
বাংলাদেশের বীরগঞ্জের বাসিন্দা চিরঞ্জিত রায় বলেন, "মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বরাদ্দ নিয়ে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে আমার দেশ। আমি একজন ছাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের 56 শতাংশ কোটা বরাদ্দ করেছে সরকার। এতে আমাদের হয়রানি হচ্ছে। আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। কারফিউ জারি করায় যাতায়াতের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। থমথমে পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। আমরা চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছি। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।"
আরেক বাসিন্দা রন্টু চৌধুরী বলেন, "দেশের পরিস্থিতি ভালো না। আমরা চাই দেশে শান্তি ফিরুক। ছাত্রদের দাবি মেনে নিক সরকার।" নেপালের কাঠমাণ্ডুর বাসিন্দা অস্মিতা কার্কি বলেন, "আমি ভেটেরেনারি মেডিসিন পড়তে গিয়েছিলাম। ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় বাড়ির লোকও আতঙ্কিত। যে কারণে আমরা বেশ কয়েকজন মিলে গাড়ি রিজার্ভ করে একসঙ্গে ফিরেছি। রাস্তায় মাঝে মাঝে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলছে। আমরা বেশ আতঙ্কিত। কারফিউ জারি করার পরই আমরা ফেরার সিদ্ধান্ত নিই।"
উল্লেখ্য, কোটা বিরোধিতা আন্দোলনের জেরে গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল কলেজগুলোও। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন ভিনদেশের পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতেও আতঙ্কিত বাইরের দেশের পড়ুয়ারাও। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যে কোনও উপায়ে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছেন। কারফিউয়ের জেরে বন্ধ রয়েছে ইন্দো-বাংলাদেশ ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে পণ্য সামগ্রী রফতানি। ফুলবাড়ি সীমান্তে এদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।