পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

অনুপ্রেরণা 'দিদি তিলোত্তমা' ! রুমেলিকার গবেষণা পত্রে মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের যন্ত্রণার কাহিনি

জুনিয়র চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার তাঁর গবেষণা পত্রে তুলে ধরলেন মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের যন্ত্রণার কাহিনি ৷ গবেষণা পত্র উৎসর্গ করেছেন আরজি করের নির্যাতিতাকে ৷

ETV BHARAT
রুমেলিকার গবেষণা পত্রে মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের যন্ত্রণার কাহিনি (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 24, 2024, 5:53 PM IST

কলকাতা, 24 অগস্ট: ডাক্তার হয়ে গরিব মানুষদের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন আরজি করের নির্যাতিতা ৷ মর্মান্তিক মৃত্যুর পর তাঁর এই ইচ্ছের কথা বারবার শোনা গিয়েছে তাঁর বাবা-মায়ের গলায় ৷ চিকিৎসক ছাত্রীর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি ৷ তাঁরই ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম মুখ রুমেলিকা কুমারও একইরকমভাবে চিন্তাশীল সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য ৷ তাঁদেরই কথা উঠে এসেছে তাঁর গবেষণা পত্রে ৷ উত্তর কলকাতার চিকিৎসক ছাত্রী তাঁর গবেষণা পত্র উৎসর্গ করেছেন 'দিদি তিলোত্তমা'কে ৷

সমাজ বদলের জন্য বারবার পথে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসক রুমেলিকা কুমার । নিজেও সামিল হয়েছিলেন আমরণ অনশনে । তরুণী এই জুনিয়র চিকিৎসকের চোখে বারবার কাঁটার মতো বিঁধেছে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের যন্ত্রণা । তাই তাঁদের কথাই নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও তুলে ধরলেন রুমেলিকা ৷ নিজের গবেষণার পত্রে তিনি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের প্রতি ।

রুমেলিকার গবেষণা পত্র (নিজস্ব চিত্র)

রুমেরিলা লিখেছেন, "আমরা যাঁরা এখন পড়াশোনা করছি, তাঁদের কাছে এই গবেষণাপত্র জমা দেওয়া স্বপ্নের মতো । আমি আমার গবেষণাপত্র জমা দিলাম । কিন্তু আমার দিদিকে তা করতে দেওয়া হল না । তারও নিশ্চয়ই অনেক স্বপ্ন ছিল এই পেপার নিয়ে । সে কারণেই আমি আমার নিজের গবেষণা পত্রে দিদির কথা লিখেছি ।"

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্‌থ-এ পভার্টি মেডিসিনের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া রুমেলিকা কুমার । সেখানেই তিনি দুটি বিষয়ে গবেষণা করেছেন । একটি হল বিড়ি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, অন্যটি ঋতুচক্র চলাকালীন মহিলা বিড়ি শ্রমিকদের অবস্থা । এই গবেষণার পর রীতিমতো অবাক তিনি ৷ রুমেলিকার কথায়, "সমাজ অনেক দূর এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের কাছে গেলে বোঝা যাবে ঋতুচক্র নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণা রয়েছে ।"

'দিদি তিলোত্তমা'র পথ অনুসরণ রুমেলিকার ! (নিজস্ব চিত্র)

গবেষণা করার সুবাদে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন রুমেলিকা । সেখানকার চিত্র দেখে তিনি বলেন, "মাসিক হলে অধিকাংশ মহিলাই বাড়ি থেকে বেরোন না । কারণ বহু মানুষ এখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না । ওই এলাকার মানুষজন বলেন, 'চাল কিনব নাকি স্যানিটারি ন্যাপকিন ?' আবার বহু স্কুল-কলেজে স্যানিটারি ন্যাপকিন ফেলার মতো ব্যবস্থাও নেই । ফলে মাসের ওই ক'টা দিন তাঁরা বাড়িতেই থাকেন ।"

আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ রুমেলিকা (নিজস্ব চিত্র)

তবে শুধুই পিরিয়ডস নয়, রুমেলিকা গবেষণা চালিয়েছেন ওই এলাকার মানুষের বিভিন্ন রোগ নিয়েও । রুমেলিকার কথায়, "তামাক শরীরের জন্য খারাপ, কিন্তু এই তামাক বেচেই সংসার চলে ওই বিড়ি শ্রমিকের পরিবারগুলোর । কিন্তু বিড়ি বাঁধার জন্য তাঁদের মধ্যে দেখা যায় অতিমাত্রায় চর্মরোগ, শ্বাসজনিত সমস্যা-সহ একাধিক রোগ । কারণ এই কাজের ক্ষেত্রে যে সুরক্ষা অবলম্বন করা দরকার, তা করার সামর্থ্য ওই পরিবারগুলোর নেই ।"

অনশন করেছেন রুমেলিকা (নিজস্ব চিত্র)

জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁদের 77 দিন ধরে চলা আন্দোলনে বারবার তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা । কেন সেই দাবি বারবার তাঁদের মুখে শোনা গিয়েছে ! সেবিষয়ে রুমেলিকা বলেন, "আমি সার্ভে করতে গিয়ে দেখেছি, সমাজের এই মানুষগুলোর বাড়ির সামনে যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই । তাই কলকাতা অথবা বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে যেতে হয় তাঁদের ৷ ফলে একদিনের মজুরি সম্পূর্ণ বন্ধ । সেইটা অনেকেই করতে চান না । তাই যথাযথ চিকিৎসা এই ধরনের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের আর করা হয় না । খুব অদ্ভুত বিষয়, সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাণ্ডারী এঁরা, অথচ তাঁরাই গুরুত্ব পান না ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details