ETV Bharat / politics

ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত..., কর্মীদের মতাদর্শ শেখাতে ‘বুর্জোয়া’ রবির শরণাপন্ন সিপিএমের সূর্য - SURJYA KANTA MISHRA

গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ভাষণ দেন ৷ সেখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পাঠ করেন তিনি ৷

SURJYA KANTA MISHRA
কর্মীদের মতাদর্শ শেখাতে ‘বুর্জোয়া’ রবির শরণাপন্ন সিপিএমের সূর্য (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 3, 2025, 9:27 PM IST

কলকাতা, 3 জানুয়ারি: যে কবিকে সারা বিশ্ব ‘গুরুদেব’-এর আসনে বসিয়েছে, সেই বিশ্বকবি-কে একসময় ‘বুর্জোয়া’ মনে করত কমিউনিস্টরা ৷ অথচ সংকটকালে পার্টি কর্মীদের মতাদর্শের পাঠ দিতে গিয়ে সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই শরণাপন্ন হতে হল কমিউনিস্ট নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে ৷

তাও আবার যে দু’টি কবিতার লাইন উল্লেখ করে তিনি সিপিএম-কে রাজনীতির ময়দানে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন, তার একটি শুরু ‘ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে’ ৷ যা শুনে বিরোধীদের কটাক্ষ, কমিউনিউস্টরা ভগবানেই বিশ্বাস করে না !

স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে যে সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আউড়ে কোথায় ভগবানের শরণাপন্ন হলেন ?

GANASHAKTI
গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মহম্মদ সেলিম৷ (নিজস্ব চিত্র)

আসলে শুক্রবার ছিল সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’র 59তম প্রতিষ্ঠা দিবস ৷ সেই উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মতাদর্শের পাঠ দেন সূর্যকান্ত মিশ্র ৷ তা দিতে গিয়ে তিনি কবিগুরুর ‘প্রশ্ন’ ও ‘এবার ফিরাও মোরে’ এই কবিতা দু’টি পাঠ করেন ৷

তিনি ‘ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে’, এই লাইন দিয়ে শুরু করেন । লাইন বলতে গিয়ে সাময়িক আটকে গেলে দর্শকাশনে বসে থাকা উত্তর 24 পরগনা জেলার নেতা, যাঁকে মহিলা সাংবাদিককে হেনস্তা-কাণ্ডে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছে, সেই তন্ময় ভট্টাচার্য ধরিয়ে দেন । এর পর এক এক লাইন পাঠ করেন সূর্যকান্ত মিশ্র ৷ কী করণীয় পার্টি কর্মীদের তার ব্যাখ্যা দেন । কবিতার মধ্যে দিয়ে এত সহজে মতাদর্শের পাঠ নজিরবিহীন সিপিএমে । ফলে সকলের হাততালি কুড়িয়েছেন রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা ।

কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ভবানী সেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বুর্জোয়া কবি’ বলেছিলেন ৷ পরে সিপিআই ভেঙে সিপিএম হয়েছে ৷ কিন্তু সিপিএমকে এই নিয়ে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি ৷ বিরোধীরা এখনও সুযোগ পেলেই এই নিয়ে সিপিএমকে বিঁধতে ছাড়ে না ৷ ফলে সূর্যকান্ত মিশ্রর এই ভাষণ যে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য ৷

GANASHAKTI
গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সূর্যকান্ত মিশ্র৷ (নিজস্ব চিত্র)

সুযোগ বুঝে আসরে নেমে পড়েছে, সিপিএমের বিরোধী পক্ষ৷ তৃণমূল একে সিপিএমের স্ববিরোধিতা হিসেবেই দেখছে। আর বিজেপির দাবি, শুধু রবীন্দ্রনাথই নন, স্বামীজি-নেতাজিকেও একসময় অপমান করেছে সিপিএম।

বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, "সিপিএমের মধ্যে এই ধরনের অনেক স্ববিরোধিতা রয়েছে। এই স্ববিরোধিতার জন্য বাংলার মানুষ বারবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও এই বিষয়ে আমাদের আলাদা করে কিছু বলার নেই। এটা তাদের দলের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু মানুষ সব দেখছে। আর এই স্ববিরোধিতার জন্যই মানুষ তাদের বিশ্বাস করতে পারে না।"

GANASHAKTI
গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান৷ (নিজস্ব চিত্র)

এই নিয়ে বিজেপির সজল ঘোষ বলেন, "শুধু ওরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেননি। দেশের সমস্ত মনীষীকেই ওরা তির্যক মন্তব্য করেছেন। রবীন্দ্রনাথকে যেমন বুর্জোয়া কবি বলতেন, স্বামীজিকে যেমন ভন্ড সাধু বলতেন, নেতাজিকে তোজোর কুকুর বলতেন। রাজীব গান্ধিকে এরা বোফোর্সের চোর বলতেন। পরবর্তীকাল নেতাজী কে বাধ্য হয়ে সম্মান দিয়েছেন। এখন রবীন্দ্রনাথের উক্তি বলতে হচ্ছে। মরণকালে যেমন হরির নাম করতে হয়, এঁরা ঠিক তেমনটাই করছেন।"

এদিকে এই অনুষ্ঠানেই সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘2026-এর নির্বাচন আসছে । তাই চট্টগ্রামকে পোস্টার করে নকশা তৈরি করছে তৃণমূল ও বিজেপি । আসলে এই অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে উত্তাপ বজায় রেখে দুই শাসক দল সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর এড়াতে চাইছেন । আদবানীজির সময় থেকে শুনে এসেছি পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের হুংকার । এখন সেই কায়দায় বাংলাদেশ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে । পাকিস্তান, বাংলাদেশ ভারত বা কাশ্মীর নিজেদের জায়গায় আছে । শুধু সেখানকার মানুষগুলো এই রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে ভুগছেন ।’’

এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে বক্তব্য দিতে গিয়ে কাকাবাবুকে স্মরণ করে পার্টির বিপদ বোঝান সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু । তিনি বলেন, ‘‘সম্মেলনের দলিল সংবাদ মাধ্যমে চলে যাচ্ছে । তারা নানা খবর করছে । আর যাঁরা সেই ভিতরের খবর দিচ্ছেন, তাঁরাই বলছেন কারা করল । এটা ঠিক নয় । কাকাবাবু বলতেন বন্ধুর থেকে পার্টি বড় । আমিও সেই মেনেই চলেছি ।’’

কলকাতা, 3 জানুয়ারি: যে কবিকে সারা বিশ্ব ‘গুরুদেব’-এর আসনে বসিয়েছে, সেই বিশ্বকবি-কে একসময় ‘বুর্জোয়া’ মনে করত কমিউনিস্টরা ৷ অথচ সংকটকালে পার্টি কর্মীদের মতাদর্শের পাঠ দিতে গিয়ে সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই শরণাপন্ন হতে হল কমিউনিস্ট নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে ৷

তাও আবার যে দু’টি কবিতার লাইন উল্লেখ করে তিনি সিপিএম-কে রাজনীতির ময়দানে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেন, তার একটি শুরু ‘ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে’ ৷ যা শুনে বিরোধীদের কটাক্ষ, কমিউনিউস্টরা ভগবানেই বিশ্বাস করে না !

স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে যে সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আউড়ে কোথায় ভগবানের শরণাপন্ন হলেন ?

GANASHAKTI
গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মহম্মদ সেলিম৷ (নিজস্ব চিত্র)

আসলে শুক্রবার ছিল সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’র 59তম প্রতিষ্ঠা দিবস ৷ সেই উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পার্টির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মতাদর্শের পাঠ দেন সূর্যকান্ত মিশ্র ৷ তা দিতে গিয়ে তিনি কবিগুরুর ‘প্রশ্ন’ ও ‘এবার ফিরাও মোরে’ এই কবিতা দু’টি পাঠ করেন ৷

তিনি ‘ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে’, এই লাইন দিয়ে শুরু করেন । লাইন বলতে গিয়ে সাময়িক আটকে গেলে দর্শকাশনে বসে থাকা উত্তর 24 পরগনা জেলার নেতা, যাঁকে মহিলা সাংবাদিককে হেনস্তা-কাণ্ডে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছে, সেই তন্ময় ভট্টাচার্য ধরিয়ে দেন । এর পর এক এক লাইন পাঠ করেন সূর্যকান্ত মিশ্র ৷ কী করণীয় পার্টি কর্মীদের তার ব্যাখ্যা দেন । কবিতার মধ্যে দিয়ে এত সহজে মতাদর্শের পাঠ নজিরবিহীন সিপিএমে । ফলে সকলের হাততালি কুড়িয়েছেন রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা ।

কিন্তু অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ভবানী সেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বুর্জোয়া কবি’ বলেছিলেন ৷ পরে সিপিআই ভেঙে সিপিএম হয়েছে ৷ কিন্তু সিপিএমকে এই নিয়ে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি ৷ বিরোধীরা এখনও সুযোগ পেলেই এই নিয়ে সিপিএমকে বিঁধতে ছাড়ে না ৷ ফলে সূর্যকান্ত মিশ্রর এই ভাষণ যে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য ৷

GANASHAKTI
গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সূর্যকান্ত মিশ্র৷ (নিজস্ব চিত্র)

সুযোগ বুঝে আসরে নেমে পড়েছে, সিপিএমের বিরোধী পক্ষ৷ তৃণমূল একে সিপিএমের স্ববিরোধিতা হিসেবেই দেখছে। আর বিজেপির দাবি, শুধু রবীন্দ্রনাথই নন, স্বামীজি-নেতাজিকেও একসময় অপমান করেছে সিপিএম।

বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, "সিপিএমের মধ্যে এই ধরনের অনেক স্ববিরোধিতা রয়েছে। এই স্ববিরোধিতার জন্য বাংলার মানুষ বারবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও এই বিষয়ে আমাদের আলাদা করে কিছু বলার নেই। এটা তাদের দলের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু মানুষ সব দেখছে। আর এই স্ববিরোধিতার জন্যই মানুষ তাদের বিশ্বাস করতে পারে না।"

GANASHAKTI
গণশক্তির 59তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান৷ (নিজস্ব চিত্র)

এই নিয়ে বিজেপির সজল ঘোষ বলেন, "শুধু ওরা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেননি। দেশের সমস্ত মনীষীকেই ওরা তির্যক মন্তব্য করেছেন। রবীন্দ্রনাথকে যেমন বুর্জোয়া কবি বলতেন, স্বামীজিকে যেমন ভন্ড সাধু বলতেন, নেতাজিকে তোজোর কুকুর বলতেন। রাজীব গান্ধিকে এরা বোফোর্সের চোর বলতেন। পরবর্তীকাল নেতাজী কে বাধ্য হয়ে সম্মান দিয়েছেন। এখন রবীন্দ্রনাথের উক্তি বলতে হচ্ছে। মরণকালে যেমন হরির নাম করতে হয়, এঁরা ঠিক তেমনটাই করছেন।"

এদিকে এই অনুষ্ঠানেই সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘2026-এর নির্বাচন আসছে । তাই চট্টগ্রামকে পোস্টার করে নকশা তৈরি করছে তৃণমূল ও বিজেপি । আসলে এই অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে উত্তাপ বজায় রেখে দুই শাসক দল সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর এড়াতে চাইছেন । আদবানীজির সময় থেকে শুনে এসেছি পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের হুংকার । এখন সেই কায়দায় বাংলাদেশ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে । পাকিস্তান, বাংলাদেশ ভারত বা কাশ্মীর নিজেদের জায়গায় আছে । শুধু সেখানকার মানুষগুলো এই রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে ভুগছেন ।’’

এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চে বক্তব্য দিতে গিয়ে কাকাবাবুকে স্মরণ করে পার্টির বিপদ বোঝান সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু । তিনি বলেন, ‘‘সম্মেলনের দলিল সংবাদ মাধ্যমে চলে যাচ্ছে । তারা নানা খবর করছে । আর যাঁরা সেই ভিতরের খবর দিচ্ছেন, তাঁরাই বলছেন কারা করল । এটা ঠিক নয় । কাকাবাবু বলতেন বন্ধুর থেকে পার্টি বড় । আমিও সেই মেনেই চলেছি ।’’

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.