পটনা, 3 জানুয়ারি: মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এসে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করুন ৷ তা না-হলে তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন। এমনই দাবি বিহারে জন সূরয পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোরের ৷ সম্প্রতি বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)-এর পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করেছেন। নতুন করে পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনেও নেমেছেন তাঁরা ৷ ছাত্রদের সমর্থনে বৃহস্পতিবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছেন প্রশান্ত কিশোর ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি পরীক্ষা করে দেখেন চিকিৎসকরা।
শুক্রবার বিকেলে পটনার গান্ধি ময়দানে তিনি বলেন, "অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যা কথা হয়েছে তা জনসমক্ষেই হয়েছে ৷ আমার সব সঙ্গীরা তা শুনেছেন ৷ এডিএম এসেছিলেন এবং তিনি আমায় আন্দোলন তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন ৷ আমিও বলেছি যে এটা সম্ভব নয় ৷ সবাই শুনেছে ৷ এত লোক আমার উপর ভরসা করেছে ৷ বিশ্বাস করেছে ৷ এই জায়গা থেকে পিছিয়ে যেতে পারি না ৷"
#WATCH | Patna | BPSC protest | Jan Suraaj chief Prashant Kishor says, " ...the adm said that you should withdraw the protest and i said that it is not possible because a large number of people have expressed their trust in me... i will not withdraw the protest under any… pic.twitter.com/QzoWX6OKrc
— ANI (@ANI) January 3, 2025
তিনি 29 ডিসেম্বর আন্দোলনকারী বিপিএসসি পরীক্ষার্থীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জের ঘটনা উত্থাপন করেন ৷ কিশোর বলেন, "29 তারিখ প্রশাসনের বলার পর আমি ছাত্রদের ওই জায়গা থেকে উঠতে বলেছিলাম ৷ এরপরও প্রশাসন তাদের উপর লাঠিচার্জ করে ৷ তাই এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন যতই বলুক না কেন, আমি আন্দোলন প্রত্যাহার করব না ৷"
এর সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর স্পষ্ট করে দেন, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ৷ তিনি বলেন, "সেটা ঠিক করার আমি একটা শর্ত রেখেছি যে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করবেন ৷ সেখানে প্রশান্ত কিশোর বা অন্য কেউ থাকবেন না ৷ তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) পাঁচ জন ছাত্রকে বেছে নিন ৷ তাঁরা গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন ৷ এরপর তাঁরা যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, তা অন্তত আমি মেনে নেব ৷"
এডিএম আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলে প্রশান্ত তাঁকে বলেন, "আপনারা যদি আমাদের ধরতে চান, তার জন্য কোনও লাঠিচার্জ করার দরকার নেই ৷ আমাকে মারুন, ছাত্রদের কোনও লাঠিচার্জ হবে না ৷ আমায় ধরে নিয়ে যান ৷ কিন্তু আমি ফিরে এলে এর থেকেও বড় আকারে আন্দোলন করব ৷" তিনি হুঁশিয়ারি দেন, 29 তারিখ সরকার তাঁদের সঙ্গে একবার প্রতারণা করেছে ৷ তার ফলে ছাত্ররা গান্ধি ময়দানের একাংশ দখল করে আন্দোলন করছে ৷ এরপরেও যদি সরকার আবার এমন কিছু করে তাহলে পুরো গান্ধি ময়দানটাই দখল করে আন্দোলন হবে ৷
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতি অসংবেদনশীল বলেও মনে করেন কিশোর ৷ তিনি বলেন, "এই আন্দোলন চলবে ৷ আমি গত আড়াই বছর ধরে বিহারের জন্য কাজ করছি ৷ আমি রাজনীতি করছি না ৷ আপনি কাউকে মারধর করছেন এবং আমি সেখানে তাঁদের সমর্থনে বসে আছি আর আপনি সেটাকেই রাজনীতি বলছেন ? হ্যাঁ, তাহলে আমি রাজনীতিই করছি ৷" তিনি জোর দিয়ে বলেন, "সমাধান একটাই ৷ সরকারের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ৷ কিন্তু নীতীশ কুমার পরিশ্রম না করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান ৷"
আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীদের দাবি, 13 ডিসেম্বর বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) ইন্টিগ্রেটেড কম্বাইনড (প্রিলিমিনারি) কমপিটিটিভ এগজামিনেশন (সিসিই) পরীক্ষার পরিচালনা করে ৷ সেই পরীক্ষা বাতিল করতে হবে ৷ এদিন এক পরীক্ষার্থী এগজামিনেশন সেন্টারে গিয়েও পরীক্ষা বয়কট করেন ৷ তাঁর অভিযোগ, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিতে দেরি হচ্ছে ৷ এছাড়া পরীক্ষায় যথেষ্ট নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়নি ৷ পরীক্ষা চলাকালীন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ এরপরেই বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ এই অবস্থায় বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশন শুধুমাত্র এই সেন্টারের পরীক্ষাটি বাতিল করে এবং পরবর্তী পরীক্ষার দিন 4 জানুয়ারি ধার্য করে ৷ কিন্তু ছাত্রদের দাবি, সব ক'টি কেন্দ্রের পরীক্ষা বাতিল করতে হবে ৷
এরপরই ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেন ৷ 29 ডিসেম্বর পরিস্থিতির অবনতি হয় ৷ বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনের দিকে মিছিল করে যাচ্ছিলেন ৷ সেই সময় তাঁদের রুখতে জল কামান ছোড়া হয়, লাঠিচার্জ করে পুলিশ ৷ অনেকেই আহত হন ৷
এই প্রতিরোধের পরেও ছাত্ররা তাঁদের দাবিতে অটল থাকেন ৷ তাঁরা পরীক্ষা পদ্ধতিতে তদন্তের দাবি তোলে ৷ পাশাপাশি নতুন করে পরীক্ষা নিতে হবে বলেও জানায় ৷ 30 ডিসেম্বর বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল বিহারের মুখ্যসচিব অমৃত লাল মীনার সঙ্গে দেখা করেন ৷ তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করেন, তাঁদের বিষয়গুলি ভেবে দেখা হবে ৷ এদিকে আগামিকাল ফের পরীক্ষা হওয়ার কথা ৷ এই অবস্থায় বিহার সরকারও পরীক্ষা বাতিল নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি ৷ এতেই আন্দোলনে অবিচল ছাত্ররা ৷