কলকাতা, 12 জুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের তদন্তে গাফিলতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রোষের মুখে পড়ল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । ইডির আধিকারিকদের চূড়ান্তভাবে সতর্ক থাকতে বললেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
এদিন ইডির আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, "আপনাদের কিছু আধিকারিককে সতর্ক হতে বলুন । আদালতের কাছেও বিভিন্ন তথ্য আসছে । এবং বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকেই সেই তথ্যগুলি আসছে । কিছু আধিকারিকের মধ্যে তদন্তে গাফিলতির প্রবণতা দেখা দিয়েছে । কী তদন্ত করা হবে, কী তদন্ত করা হবে না, তা নিয়ে বাছবিচার করা হচ্ছে । আদালতের নজরদারিতে তদন্ত চলছে । তাই আমার কাছেও কিন্তু খবর আসছে । চূড়ান্তভাবে সতর্ক থাকতে বলুন আপনার অফিসারদের ।"
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনও পর্যন্ত 148 কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট । সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । এপ্রিল মাসে পাওয়া দু'টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলছে । তার মধ্যে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের রয়েছে সাড়ে সাত কোটি টাকা । বুধবার আদালতে এ কথা জানান ইডির আইনজীবী ।
তবে এদিনও বিচারপতি অমৃতা সিনহা আগের মতোই অসন্তোষ প্রকাশ করে ফের বলেন, "লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কী সম্পত্তি পাওয়া গিয়েছে সেটা আপনারা জানেন, কোর্টও জানে । সোর্স অফ মানি কী ? কোথা থেকে আসছে সেই টাকা, সেটা জানা দরকার । যা তথ্য আপনাদের রিপোর্ট থেকে দেখেছি, সেখানে কোম্পানি কোনও অর্থ জেনারেট করেনি । অন্য কোনও জায়গা থেকে এসেছে সেই টাকা ।"
ইডির তরফে আইনজীবী অবশ্য তখন পালটা জানান, সেই তথ্য সিবিআই দেবে । ইডি সম্পত্তির তথ্য পাওয়ার পর সিবিআইকে সেই সব তথ্য দিয়ে দেয় । তারা তদন্ত করে যে এর পিছনে কারা আছে ৷ কাজেই তারাই জানাতে পারবে । এদিন সিবিআইও মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিয়েছে । সম্প্রতি সিবিআই প্রায় 13 কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে জানায় ৷
এদিন প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট পেশ করে সিবিআই ও ইডি । সিবিআইয়ের আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী দাবি করেন, "এই মামলার তদন্তে অন্যতম ব্যক্তি হলেন মানিক ভট্টাচার্য । তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাচ্ছে না সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে বলে । তাই তাঁকে ঠিকমতো জেরা করা যাচ্ছে না । আমাদের কিছুটা সময় দেওয়া হোক । মানিক ভট্টাচার্যকে লন্ডনের কথা বললে তিনি উত্তর দিচ্ছেন টোকিয়ো ।"
যদিও কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত নিয়ে সন্তুষ্ট নন বিচারপতি সিনহা । এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত কালীঘাটের কাকু তথা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার পর কেন তদন্ত এগোচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত । পাশাপাশি এই মামলায় গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্যকে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছিল । রাজ্য এখনও সেই রিপোর্ট জমা দেয়নি । তা নিয়েও এদিন ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বিচারপতি সিনহা । 30 জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি । ওই দিন তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য জানাতে হবে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ।