পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

টাকা দিলেই আইন ভেঙে গ্রামীণ হাসপাতালে ডেঙ্গি পরীক্ষা!

সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালে অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে ডেঙ্গি-সহ বেশ কিছু রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷

Illegal Blood Test in Malda Rural Hospital
মালদার গ্রামীণ হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে রক্ত পরীক্ষা (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 22 hours ago

মালদা, 24 অক্টোবর: সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালের দেওয়ালে লাগানো বোর্ডে ডেঙ্গি কিংবা সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষার উল্লেখ নেই ৷ এসব রক্তের পরীক্ষা রাজ্যের কোনও গ্রামীণ হাসপাতালেই হয় না ৷ এদিকে টাকা দিলেই এসব পরীক্ষা হচ্ছে খোদ সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ অভিযোগ, দিনের পর দিন এমনই বেআইনি কাজ হয়ে আসছে পুরাতন মালদার মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ৷

অভিযুক্ত হাসপাতালের ল্যাব ম্যানেজার নিজেই ৷ কলকাতা থেকে টেস্ট করিয়ে আনছেন দাবি করে মোটা টাকা নিচ্ছেন রোগীদের থেকে। শুধু তাই নয়, জানিয়েছেন এবার থেকে পাকা বিলও দেবেন। আইন ভেঙে এমন কাজে কোনও অন্য়ায় আছে বলেও তিনি মনে করছেন না। প্রশাসন অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ।

মালদার সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালে অবৈধ রক্ত পরীক্ষা (ইটিভি ভারত)

এদিন পুরাতন মালদার মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের নলডুবির বাসিন্দা, 54 বছর বয়সি অনিমা দাসকে মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালের আউটডোরে নিয়ে আসা হয় ৷ জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন তিনি ৷ তাঁকে ডেঙ্গি-সহ বেশ কয়েক ধরনের রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় ৷ তিনি হাসপাতালেই রক্ত পরীক্ষা করাতে যান ৷ সেখানে ডেঙ্গি, সিবিসি-সহ আরও কয়েক ধরনের পরীক্ষার জন্য তাঁর রক্তের নমুনা নেওয়া হয় ৷ কিন্তু সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী গ্রামীণ হাসপাতালে ডেঙ্গি ও সিবিসি পরীক্ষা করা হয় না ৷ এই দু'টি পরীক্ষার জন্য তাঁর কাছ থেকে 900 টাকা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ৷

অনিমা দেবীর ছেলে অজয় দাস বলেন, "মা-কে নিয়ে মৌলপুর হাসপাতালে আসি ৷ চিকিৎসক মায়ের ম্যালেরিয়া, সিবিসি এবং ডেঙ্গি পরীক্ষা করানোর কথা বলেন ৷ এখানে বিনামূল্যেই ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা হয়েছে ৷ তারপর সিবিসি পরীক্ষার সময় আমার থেকে 250 টাকা চাওয়া হয় ৷ ডেঙ্গি পরীক্ষার চার্জ 700 টাকা বলে জানানো হয় ৷ তবে দু'টি পরীক্ষা একসঙ্গে করলে 900 টাকা লাগবে বলেও জানান ল্যাবের দায়িত্বে থাকা কর্মী ৷ আমি জানতাম না, সরকারিভাবে এখানে ডেঙ্গি পরীক্ষার অনুমতি নেই ৷ আমি 900 টাকা দিলে একটি স্লিপে শুধু পেইড শব্দটি লিখে দেওয়া হয় ৷"

অজয় দাস আরও জানান, হাসপাতালের ল্যাব ম্যানেজার বাবুল রায় নাকি কলকাতা থেকে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে আনছেন ৷ এই পরীক্ষার জন্য কোনও বিল দেওয়া হয়নি ৷ তাঁর অভিযোগ, "আমার মনে হচ্ছে, হাসপাতালেও কাটমানি চালু হয়ে গিয়েছে ৷"

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন্ত দাস জানান, "সরকারিভাবে নথিভুক্ত না হলেও এই হাসপাতালে ডেঙ্গি আর সিবিসি পরীক্ষা করা হচ্ছে ৷ সরকারি কর্মীরা কোনও স্লিপ ছাড়াই টাকার বিনিময়ে এই কাজ করছেন ৷ হাসপাতালে এমনই দুর্নীতি চলছে ৷ এর সঙ্গে শুধু কর্মী নন, খোদ বিএমওএইচও জড়িত রয়েছেন ৷ শুধু টাকার খেলা চলছে ৷ এই ব্যবস্থা পুরসভার আছে ৷ আমি পুরসভাকে অনুরোধ করব, তারা যেন দ্রুত হাসপাতালে রোগী সহায়তা কেন্দ্র চালু করে ৷"

এদিকে অভিযুক্ত হাসপাতালের ল্যাব ম্যানেজার বাবুল রায় বলেন, "আমাদের বোঝার জন্য স্লিপে পেইড লিখেছি ৷ আমি রোগীকে টাকার অঙ্কের কথা বলেছি ৷ তিনি সেই টাকা দেওয়ার পরই স্লিপে পেইড লেখা হয়েছে ৷ এখানে ডেঙ্গি কিংবা সিবিসি পরীক্ষার নিয়ম না থাকলেও আমরা করে দিই ৷ তাহলে রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয় না ৷" তিনি জোর দিয়ে জানান, এটা অবশ্যই বৈধ ৷

ল্যাব ম্যানেজার আরও দাবি করেন, এরপর থেকে তিনি এসব রক্ত পরীক্ষার পাকা বিলও রোগীদের দেবেন ৷ এই ঘটনায় শুক্রবারের মধ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ৷ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বৈশিষ্ঠ্য ত্রিবেদীর অভিযোগ, এই বেআইনি ঘটনায় শুধু ল্যাব ম্যানেজার নন, বিএমওএইচ, এমনকী সিএমওএইচও জড়িত ৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুরাতন মালদায় ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details