মহম্মদবাজার, 3 জানুয়ারি: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর দেউচা-পাচামি কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ৷ খোলা মুখ খনির পাশাপাশি সুড়ঙ্গ করেও কয়লা উত্তোলনের চিন্তাভাবনা রয়েছে প্রশাসনের ৷ যাতে বেশি সংখ্যক মানুষের জমি অধিগ্রহণ করতে না হয়, তার জন্যই এই নতুন পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই 326 একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। আরও 40 একর জমি অধিগ্রহণ করে দ্রুত প্রথম ধাপের খনন কাজ শুরু করা হবে বলে জানালেন মুখ্যসচিব ৷ 1.2 বিলিয়ন মেট্রিকটন কয়লা মজুত রয়েছে দেউচা-পাচামিতে ৷ এই কারণে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর কয়লা খনি।
তিনি বলেন, "সবাইকে নিয়ে খুবই গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। সকলেই এই প্রকল্প নিয়ে উৎসাহী। দ্রুত খনন কাজ শুরু হবে ৷ তবে আমরা আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিংয়ের কথাও ভেবেছি। এতে বেশি মানুষকে সরাতে হবে না ৷ ওপেন মাইনিং ও আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং দুটোই হবে ৷ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং শুরু করার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলে দিয়েছেন যাঁরা জমি দিচ্ছেন তাঁদের কেউ বঞ্চিত হবেন না ৷ এখানে খনি হলে সবাই উপকৃত হবেন ৷ কর্মসংস্থানও হবে।"
বীরভূমের দেউচা-পাচামিতে প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে। এই নিয়ে 2 জানুয়ারি নবান্নের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায়কে কার্যত ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বীরভূমের আসেন রাজ্যের প্রশাসনিক শীর্ষকর্তারা ৷
মহম্মদবাজারের বিডিও অফিসে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের তত্ত্বাবধানে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় ৷ ছিলেন পিডিসিএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর পিবি সেলিম, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম, বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, জেলা শাসক বিধান রায়-সহ অতিরিক্ত জেলাশাসক, বিডিও, বিএলআরও সরকারি অফিসাররা ৷ পুলিশ প্রশাসনের তরফে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (পশ্চিমাঞ্চল) অশোক কুমার প্রসাদ, ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) শ্যাম সিং, বীরভূম পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়-সহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি, আইসি, ওসিরাও হাজির ছিলেন বৈঠকে ৷
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তিনি জানান, 15 থেকে 20 দিনের মধ্যে প্রাথমিক খননের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে ৷ ইতিমধ্যে 326 একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও 40 একর জমি দ্রুত অধিগ্রহণ করা হবে ৷ তবে খোলা মুখ কয়লাখনির পাশাপাশি সুরঙ্গ করেও কয়লা উত্তোলন নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। প্রথমে পাথরের স্তর তুলে নেওয়া হবে, তারপর খনন কাজ শুরু করে কয়লা উত্তোলন করা হবে ৷ সুরঙ্গ করে কয়লা উত্তোলন করলে বসতি উচ্ছেদ করতে হবে না ৷ অর্থাৎ, এতকাল শুরুমাত্র খোলা মুখ কয়লা খনি নিয়েই প্রকল্পের কাজ হচ্ছিল ৷ এবার সুরঙ্গ করে কয়লা উত্তোলন করার বিষয় নিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে পিডিসিএল ৷ এই দেউচা-পাচামিতে কমপক্ষে 1.2 বিলিয়ন মেট্রিকটন কয়লা মজুত রয়েছে বলেও জানান মুখ্যসচিব।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলা মুখ কয়লা খনি হতে চলেছে বীরভূমের এই দেউচা-পাচামি ৷ 3400 একর জমি জুড়ে 20টি গ্রাম রয়েছে ৷ যাতে 21 হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। এছাড়া, রয়েছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি। তাই কয়লা খনির জন্য জমি দিতে প্রথম থেকেই নারাজ অধিকাংশ বাসিন্দা ৷ যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে চলেছেন ৷ তবে জমি অধিগ্রহণ করার বিষয়ে আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি সরকারি চাকরির কথা আগেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু কয়লা নয়, ব্যসল্ট শিলার স্তরও রয়েছে এখানে। সেই সম্পদও সব বিচারেই বিপুল ৷