কলকাতা, 14 অগস্ট: আরজি কর কাণ্ডে রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ এরকম নির্মম ঘটনা মানবতার পক্ষে লজ্জা বলে কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷ অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুলিশ প্রশাসনের কড়া নিন্দা করে পথে নামলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷
এদিন রাজভবনের তরফে জারি করা ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বলেন, "শকিং ! এরকম নির্মম ঘটনা নজিরবিহীন। এটা বাংলার লজ্জা, দেশের লজ্জা, মানবতার লজ্জা। তবে, এটা প্রথম নয়। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলায় এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। যেখানে দেশ এগিয়ে চলেছে, সেখানে বাংলায় এধরনের ঘটনা ঘটছে। অথচ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য'-র কথা বলেছিলেন। আজ সেই বাংলায় এরকম ঘটনা ঘটছে। মহিলাদের উপর অত্যাচার বেড়ে চলেছে। সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে হবে। সমাজকে অপকাজের বিরুদ্ধে একতা থাকতে হবে। বাংলা তথা ভারতে মহিলাদের নিরাপদে থাকা সুনিশ্চিত করতে হবে। আমাদের একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।"
অন্যদিকে বুধবার দুপুরে বিধান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে পর ধর্মতলার উদ্দেশে তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা মিছিলে পা মেলালেন। মিছিল শেষে বেলা সাড়ে চারটে নাগাদ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে অধীর চৌধুরীর বৈঠক করতে পারেন বলে সূত্রের দাবি ৷
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, "মানসিকভাবে, আন্তরিকভাবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ৷ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে ৷ ধর্ষণ-সহ মহিলাদের উপর হামলা বেড়েই চলেছে ৷ অপরাধীদের সাহস এত বেড়ে চলেছে কীভাবে ? ভাবা দরকার। প্রিন্সিপালকে বাঁচানোর এত সক্রিয়তা কেন ?"
মহিলা চিকিৎসকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তাঁকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে ৷ গোটা ঘটনার নিন্দা করে অধীর বলেন, "রাজনীতির পতাকা ছেড়ে প্রাতিবাদ আন্দোলনে সামিল হতে চেয়েছি ৷ রাতে মেয়েদের প্রতিবাদকে মন থেকে সমর্থন জানাচ্ছি ৷ কোনও রাজনৈতিক স্বার্থ নয় ৷ আজকের প্রতিবাদকে সমর্থন করছি ৷ কারণ, আজকের আন্দোলন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ৷ শাসক দলের নেতানেত্রীদের পরিবারের সদস্যরা রাজ্যের হাসপাতালে যুক্ত রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে ৷ তৃণমূলের কোনও সদস্যের পরিবার থেকে কি আরজি করে পড়াশোনা করেনি ?"
রাজ্য পুলিশের সমালোচনা করে অধীরের বক্তব্য, "এখানকার পুলিশ তদন্তকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করেছে ৷ তারা যে বয়ান দিচ্ছে, তখন তাদের চোখমুখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে তারা কিছু লুকোচ্ছে ৷ এরাই তো কামদুনি, হাঁসখালি ঘটনার এদিক ওদিক করার নায়ক ৷ পুলিশ নির্যাতিতার পরিবারদের ধমক দিয়েছে ৷ আসলে পুলিশকে দিয়েই অপরাধীরা ধমক দেওয়ায় ৷" মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গে বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদের কথায়, "সারাভারত জুড়ে আন্দোলন হচ্ছে ৷ নিন্দার ঝড় বইছে ৷ বাংলার মহিলা মুখ্যমন্ত্রী কী করছেন ? হৃদয়হীন, অনুতাপহীন এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে দেখছি আমরা ৷ লজ্জা লাগছে। লজ্জা লাগছে ৷ সেরা পুলিশ তৈরি করে লালবাজার ৷ সেই সেরা পুলিশ অপরাধীকে জেরা করে বাকি অপরাধীদের খোঁজ পাওয়ার ক্ষমতা হল না !"
আজ রাজ্যের সর্বত্র কন্যাশ্রী দিবস পালিত হচ্ছে ৷ এই প্রসঙ্গে অধীর বলেন, "আজ কন্যাশ্রী দিবসে কেক কেটে রাজ্যের দুই মহিলা মন্ত্রী একে অপরকে কেক খাওয়াচ্ছেন ৷ এঁদের লাজ লজ্জা, ঘৃণা... কিছু নেই ৷ এঁরা জানেন, যেমন তেমন করে ভোট হবে ৷"