পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / opinion

যেন 'বিগ ব্রাদার'! চিনের শত্রু প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে বন্ধুত্ব ভারতের - India China relation

Big Brother Syndrome: চিনের তার সব প্রতিবেশীর দেশের সঙ্গে বিবাদ রয়েছে । ভারত ক্রমাগতভাবে চিনের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে এমন দেশগুলির বন্ধু হয়ে উঠছে ৷ ওই দেশগুলির সঙ্গে নিরাপত্তার দিক থেকে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে । এই নিয়ে লিখেছেন প্রাক্তন মেজর জেনারেল হর্ষ কাঁকর ৷

big brother syndrome
big brother syndrome

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 13, 2024, 7:59 PM IST

Updated : Mar 13, 2024, 8:32 PM IST

হায়দরাবাদ: চিনের সঙ্গে তার কোনও প্রতিবেশী দেশেরই খুব ভালো নয় ৷ তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এমনকী ব্রুনাইয়ের ছোট সালতানাতের সঙ্গেও মতবিরোধ রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী এই দেশের । এই বিবাদের সূত্রপাত হয়েছে দক্ষিণ এবং পূর্ব চিন সাগরের শোল এবং দ্বীপ, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা থেকে। বেজিং বিশ্বাস করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপাইন এবং জাপানের প্রতিরক্ষা চুক্তি তাদের চিনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে শক্তি জোগায় ৷ ভিয়েতনামের সঙ্গে চিনের বিরোধ চলছে ৷ এই বিবাদ খনিজ সমৃদ্ধ এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে নিয়ে বলে মনে করা হয় ।

তাইওয়ানের সঙ্গে পুনঃএকত্রীকরণকে চিন সবসময় প্রথম অগ্রাধিকার দেয় । আমেরিকা তাইওয়ানকে সশস্ত্র করছে এবং উচ্চ-পদস্থ মার্কিন রাজনীতিবিদরা বারবার সফর করছে সেখানে ৷ এর থেকে বোঝা যায় আমেরিকা তার এক-চিন নীতি মেনে চলছে না এবং তাইওয়ান যে স্বাধীনতার দাবি করে আসছে, আমেরিকা সেই দাবিকে সমর্থন করছে । বেইজিং বরাবরই দক্ষিণ কোরিয়াকে আমেরিকার আঞ্চলিক জোটের দুর্বল লিঙ্ক হিসেবে বিবেচনা করে আসছে । তবে মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক সম্পর্ক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিউলের সঙ্গে বেইজিংয়ের বিবাদ শুরু হয় ।

যে দেশগুলির সঙ্গে বেইজিংয়ের মতপার্থক্য রয়েছে তারা আবার ভারতের বন্ধু ৷ এর প্রধান কারণ ভারত দূরে রয়েছে এবং এই অঞ্চলে তাদের কোনও দাবি নেই । লাদাখ অচলাবস্থার পরে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো হয় ৷ সেই সময় ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছিল । পুরনো ধারনা, 'আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু' দু'দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল ৷

ভিয়েতনামের সঙ্গে ভারতের সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ ভিয়েতনামের উপকূলে তেল উৎত্তোলনে বিনিয়োগ করছে ভারত । জাপানের পাশাপাশি ভারতও কোয়াডের সদস্য থাকাকালীন ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনাম উভয়কেই ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে । ইন্দোনেশিয়ার সাবাং বন্দরটি ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে । ভারত ক্রমাগতভাবে চিনের শত্রু দেশগুলির সঙ্গে তার নিরাপত্তা দিক থেকে সহযোগিতা প্রসারিত করছে ।

ছোট প্রতিবেশী দেশগুলির প্রতি ভারত এবং চিনের নীতিগুলি ভিন্ন হতে পারে ৷ তবে বিশ্বব্যাপী বড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশীকে সবসময় আশেপাশের ছোট দেশগুলির উপর হুমকি বলে মনে করা হয় । ভারতের উদ্দেশ যতই ভালো হোক ছোট প্রতিবেশী দেশ মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ সন্দেহের চোখে দেখে ।

মালদ্বীপের চিনপন্থী রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজুর সাম্প্রতিক মন্তব্য তাঁর উদাহরণ ৷ মালদ্বীপের জনগণের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে ৷ ভারত মালেকে বিমান উপহার দিয়েছে ৷ সেই বিমান পরিষেবার জন্য মালেতে অসামরিক কর্মীদের পাঠিয়েছে ৷ তার এক সপ্তাহ পরে মালদ্বীপের একটি পোর্টাল রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, "10 মে দেশে কোনও ভারতীয় সেনা থাকবে না । ইউনিফর্মে এবং অসামরিক পোশাকেও নয় । ভারতীয় সামরিক বাহিনী কোনো পোশাকে এ দেশে থাকবে না । আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এটা বলছি ।"

মালদ্বীপ সরকার ভারতের পাশাপাশি চিনের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ এবং অ-প্রাণঘাতী সরঞ্জামের জন্য 'বিনামূল্যে সামরিক সহায়তা' চুক্তি স্বাক্ষর করেছে । তুরস্ক মালিদিভিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে । ঐতিহ্য না মেনে মুইজু ভারতকে উপেক্ষা করে প্রথম সরকারি সফরে চিনে গিয়েছিলেন । তিনি নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে 'বুলি' করার অভিযোগও করেছেন ৷ এর পালটা ভারতের বিদেশমন্ত্রী এশ জয়শংকর বলেছিলেন, "প্রতিবেশী দেশগুলি যখন দুর্দশায় থাকে তখন বড় বুলিরা 4.5 বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয় না ।" প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কুরুচিকর মন্তব্য করার পর ভারতীয়রা মালদ্বীপ বয়কট করে ৷ এরপরে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের অবনতি হয় ৷ এতে চিন আরও বেশি মালদ্বীপের কাছের লোক হয়ে ওঠে ৷

শ্রীলঙ্কায় সরকারগুলিও হয় ভারতপন্থী নইলে চিনপন্থী । ঐতিহাসিকভাবে সিংহলি সম্প্রদায় 1980-এর দশকে এলটিটিই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার জন্য ভারতকে দোষারোপ করে চলেছে । যুদ্ধের সময় ভারত শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিতে অস্বীকার করলেও চিনারা অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিল । ভারত উত্তর ও পূর্ব শ্রীলঙ্কার তামিলদের দাবি চায় বলে মনে করা হয় । কিছু শ্রীলঙ্কার বাসিন্দাদের বিশ্বাস ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে ।

ভারত ও চিন উভয়কেই প্রতিবেশীরা অবিশ্বাস করে । বড় ভাইয়ের চোখে দেখলেও দু'দেশের শক্তিতে বিশ্বাস করা কঠিন ৷ তাই বড় ভাইয়ের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । এই কারণে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় ৷ অন্যদিকে তার ছোট প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উত্থান-পতন হয় । এই পরিস্থিতিতে বড় ভাইকে সন্দেহ করা স্বাভাবিক ।

ভারত বছরের পর বছর ধরে প্রতিবেশী এলাকায় তার উদ্দেশ্য নিয়ে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সম্মুখীন হয়েছে ৷ তবে প্রতিবারই সেগুলি কাটিয়েও উঠেছে । বর্তমান পরিস্থিতিও আলাদা নয় । যেমনটা আগেও কখনও কখনও দেখা গিয়েছে, একটি ভারত-বিরোধী সরকার সর্বদাই ভারতপন্থী সরকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় এবং এর বিপরীতে চলে ।

আরও পড়ুন:

  1. আত্মনির্ভরতায় বদলে যাচ্ছে দেশের প্রতিরক্ষা মানচিত্র, পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ
  2. সারা বিশ্বের মন্দার প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে
  3. ভারতীয়দের অসাধারণ জেনেটিক বৈচিত্র্য
Last Updated : Mar 13, 2024, 8:32 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details