ETV Bharat / opinion

ভারত ও কানাডার মধ্যে ভিসা-যুদ্ধ - INDIA CANADA VISA ISSUE

ভিসা নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছে ভারত ও কানাডার মধ্যে ৷ কানাডার একটি সংবাদমাধ্যম এই নিয়ে ভারতকেই কাঠগড়ায় তুলেছে ৷

INDIA CANADA VISA ISSUE
ভারত ও কানাডার মধ্যে ভিসা-যুদ্ধ (ইটিভি ভারত)
author img

By Major General Harsha Kakar

Published : 3 hours ago

কানাডার একটি সংবাদসংস্থা গ্লোবাল নিউজ গত সপ্তাহে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম - 'ভিসা ভারতীয় বিদেশী হস্তক্ষেপের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ।' এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতীয় হাইকমিশন এবং কনস্যুলেটগুলি খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ কানাডার গুরুদ্বারগুলিতে যাঁরা খালিস্তানের পক্ষে প্রচার করেছেন, তাঁদের ভিসা প্রত্যাখান করা হয়েছে ।

সেখানে আরও বলা হয়েছে যে খালিস্তানিদের নিন্দা ও ভারতের প্রতি 'গভীর শ্রদ্ধা' আছে বলে যাঁরা চিঠি জমা দিয়েছেন, শুধু তাঁদের ভিসা দেওয়া হয়েছে ৷ ভিসা প্রত্যাখ্যান হয়েছে, খালিস্তানের এমন একজন সমর্থক উল্লেখ করেছেন, 'আপনারা কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না, তাঁরা মূলত সেই বিষয়টিকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে ৷'

ওই নিবন্ধে আরও লেখা হয়েছে যে সময়ে সময়ে ভিসা-প্রত্যাশীদের খালিস্তান কর্মী এবং কার্যকলাপের উপর হাই কমিশনের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । আরসিএমপি এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো উভয়ই খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কানাডিয়ান শিখদের ভিসা না-দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন । কানাডার সরকার এটিকে 'বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং আন্তঃদেশীয় দমনপীড়ন' বলে অভিহিত করেছে ।

জাস্টিন ট্রুডো গত বছরের সেপ্টেম্বরে খালিস্তান সন্ত্রাসী বলে পরিচিত হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার পিছনে ভারতকে দায়ী করার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ আরও বেড়েছে । এখনও পর্যন্ত ভারতের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।

সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কানাডা ও ভারত উভয় পক্ষের সিনিয়র কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে । এর আগে ভারত কানাডাকে তাদের কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়ে কানাডার 41 জন অতিরিক্ত কূটনীতিককে এই দেশ থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল ।

কূটনৈতিক যুদ্ধ অবসানের কোনও লক্ষণ ছাড়াই অব্যাহত রয়েছে । সম্প্রতি, ভারতীয় মিশনে বার্ষিক জীবন-শংসাপত্র প্রদানে ইন্দো-কানাডিয়ানদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ইভেন্টগুলি বাতিল করা হয়েছিল ৷ কারণ, স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তাবিত স্থানগুলিতে প্রধানত মন্দির ও কমিউনিটি হলগুলিতে হিংসার আশঙ্কা করেছিল ৷

গ্লোবাল নিউজ শুধুমাত্র কানাডার দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করেছে ৷ কারণ, কানাডা একটি দেশ হিসাবে, বিশেষ করে ট্রুডোর অধীনে, ভারত-বিরোধী খালিস্তান আন্দোলনকে বৃদ্ধির জায়গা করে দিয়েছে । গ্লোবাল নিউজ কানাডার বিষয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করে এমন সরকারি লাইনকে সামনে রেখেছে ৷ তারা কানাডার জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটল ভারতের নীতির কারণে হয়েছে ।

যাঁদের পরিবারের সদস্যরা স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে কানাডায় রয়েছেন, তাঁদের ভিসা দেওয়ার সময় কানাডার হাইকমিশন এবং ভারতে কনস্যুলেটগুলি দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে ওই নিবন্ধে ৷ সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স (সিএপিএফ) এবং পঞ্জাব পুলিশের কর্মীদের কানাডার ভিসা চাওয়ার সময় অতিরিক্ত বিবরণ পূরণ করতে হবে । এটাও উপেক্ষা করা হয়েছে সেখানে ৷

কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ, সশস্ত্র বাহিনী এবং সিএপিএফ-এর সদস্যদের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে পরিষেবার বিশদ চাওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোথায় কাজ করেছেন সেই সময়কাল এবং স্থানগুলিও জানতে চান । এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের তথ্য প্রাপ্তি বোঝায়, যাকে একটি প্রতিপক্ষ শক্তির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে ।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘অনুমান করে’ জম্মু ও কাশ্মীরে কাজ করার জন্য অনেককে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল । সিএপিএফ-এর একজন কনস্টেবলকে একটি 'কুখ্যাত হিংস্র' বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাঁর ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় । জম্মু ও কাশ্মীরে 'সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের' মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একজন সিনিয়র সেনা প্রবীণ ব্যক্তির ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল ।

কাশ্মীরে নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থায় এই ব্যক্তিরা কাজ করেছেন, সেটা জানার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ৷ ভারত সরকার বারবার কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে ৷ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । কিন্তু যখন ভারতে অবাঞ্ছিত কানাডিয়ান নাগরিকদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করার প্রসঙ্গ ওঠে, তখন অটোয়া হইচই শুরু করে ।

তথ্য বলছে যে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন প্রত্যাখানের চেয়ে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন বাতিলের সংখ্যা অনেক বেশি । গ্লোবাল নিউজ ভিসা সংক্রান্ত কানাডার সরকার কর্তৃক গৃহীত এই ধরনের পরিসংখ্যান এবং পদক্ষেপের কোনও উল্লেখ করা হয়নি ৷ সেখানে শুধুমাত্র ভারতীয় পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হয়েছে ।

এটা সত্য যে ভিসা মঞ্জুর করার বিষয়টি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশের উপরই ৷ কানাডার ভিসা প্রত্যাখান করার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে 'বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক দমন' হিসাবে অভিহিত করেছে ৷ আর নিজেদের তরফে কারও ভিসার আবেদন বাতিল করার ক্ষেত্রে 'একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত' বলে উল্লেখ করেছে ৷ তাদের ওয়েবসাইটেই এই কারণ দেওয়া রয়েছে ৷

ইন্দো-কানাডিয়ান সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও ভারত কানাডায় ট্রাক সংগঠনের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ট্রুডো সরকারের কঠোর পদক্ষেপের সম্পর্কে কখনও মন্তব্য করেনি । অন্যদিকে, ট্রুডো কৃষক আন্দোলন নিয়ে ভারত সরকারের মনোভাব নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন । আসলে এটা ভারতীয় বিষয়ে কানাডার হস্তক্ষেপ ।

দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী বা অপরাধমূলক কাজ করার পরও সেই সন্ত্রাসী এবং অপরাধীদের অন্য কোনও দেশই স্বাগত জানায় না ৷ কানাডা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ৷ মূলত, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে কানাডা বছরের পর বছর ধরে অপরাধী ও খালিস্তানি সমর্থকদের গ্রহণ করে আসছে ।

যাঁরা ভারতকে, ভারতের আইন ও রীতিনীতিকে সম্মান করে, তাঁদের ভারত স্বাগত জানায় ৷ কিন্তু যাঁরা ভারতের সমাজ ও একজাতীয়তা ভাঙতে চায়, তাদের স্বাগত জানানো হয় না । বেশিরভাগ ইন্দো-কানাডিয়ান, যাঁদের জন্মভূমির সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই, তাঁরা ওসিআই (ভারতের বিদেশি নাগরিক) কার্ডের ধারক । খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা এই সুবিধা অস্বীকার করেছে ।

খালিস্তানি সমর্থকরা ভারতে ধর্মীয় নিপীড়নের দাবি করে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন । অনেকে কানাডায় প্রবেশের জন্য জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন, যা গৃহীত হয়েছিল এবং তারা নাগরিকত্ব প্রদান করেছিল । কানাডিয়ান হাই কমিশন তাদের দাবি সত্য কি না, তা যাচাই করার চেষ্টা করেনি ।

কানাডিয়ান নাগরিক হওয়ার পর, এই ব্যক্তিরা এখন তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে, তাঁদের ভারতীয় সম্পত্তির নিষ্পত্তি করতে এবং খালিস্তান আন্দোলনকে ভিতরে ছড়িয়ে দিতে ভারতে ফিরে আসতে চান । তাঁদের প্রবেশ সীমিত করা উচিত এবং তাঁদের অভিপ্রায় ও পূর্বসূচী নিশ্চিত করার পরে বেছে বেছে ভিসা দেওয়া উচিত । সর্বোপরি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত-সহ বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতে প্রবেশ একটি বিশেষাধিকার এবং অধিকার নয় ।

পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়ায় কানাডার চাপ এবং নিবন্ধের কাছে ভারতের মাথা নত করা উচিত নয় । খালিস্তান আন্দোলনকে দমন করার জন্য এটিকে অটোয়ার উপর চাপ প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে । যাঁরা খালিস্তান সমর্থন করেন, তাঁদের কখনই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না । এই বার্তা যাওয়া উচিত যে যারা ভারতকে বিভক্ত করতে চান, তাঁরা এই দেশের নাগরিক হলেও, তাঁরা এঁদের মাটিতে অবাঞ্ছিত ।

আরও, আসন্ন নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি বা জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট না-দেওয়ার জন্য ভারতকে কানাডার মধ্যে তার প্রবাসীদের প্রভাবিত করতে হবে । কানাডা যদি এটিকে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করে, তাই হোক । ভারতের কানাডার চাপ ও অভিযোগ সহ্য করার শক্তি রয়েছে ।

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

কানাডার একটি সংবাদসংস্থা গ্লোবাল নিউজ গত সপ্তাহে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম - 'ভিসা ভারতীয় বিদেশী হস্তক্ষেপের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ।' এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভারতীয় হাইকমিশন এবং কনস্যুলেটগুলি খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে ৷ কানাডার গুরুদ্বারগুলিতে যাঁরা খালিস্তানের পক্ষে প্রচার করেছেন, তাঁদের ভিসা প্রত্যাখান করা হয়েছে ।

সেখানে আরও বলা হয়েছে যে খালিস্তানিদের নিন্দা ও ভারতের প্রতি 'গভীর শ্রদ্ধা' আছে বলে যাঁরা চিঠি জমা দিয়েছেন, শুধু তাঁদের ভিসা দেওয়া হয়েছে ৷ ভিসা প্রত্যাখ্যান হয়েছে, খালিস্তানের এমন একজন সমর্থক উল্লেখ করেছেন, 'আপনারা কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না, তাঁরা মূলত সেই বিষয়টিকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে ৷'

ওই নিবন্ধে আরও লেখা হয়েছে যে সময়ে সময়ে ভিসা-প্রত্যাশীদের খালিস্তান কর্মী এবং কার্যকলাপের উপর হাই কমিশনের পক্ষ থেকে নজরদারি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । আরসিএমপি এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো উভয়ই খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কানাডিয়ান শিখদের ভিসা না-দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন । কানাডার সরকার এটিকে 'বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং আন্তঃদেশীয় দমনপীড়ন' বলে অভিহিত করেছে ।

জাস্টিন ট্রুডো গত বছরের সেপ্টেম্বরে খালিস্তান সন্ত্রাসী বলে পরিচিত হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যার পিছনে ভারতকে দায়ী করার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ আরও বেড়েছে । এখনও পর্যন্ত ভারতের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।

সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কানাডা ও ভারত উভয় পক্ষের সিনিয়র কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে । এর আগে ভারত কানাডাকে তাদের কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়ে কানাডার 41 জন অতিরিক্ত কূটনীতিককে এই দেশ থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল ।

কূটনৈতিক যুদ্ধ অবসানের কোনও লক্ষণ ছাড়াই অব্যাহত রয়েছে । সম্প্রতি, ভারতীয় মিশনে বার্ষিক জীবন-শংসাপত্র প্রদানে ইন্দো-কানাডিয়ানদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত ইভেন্টগুলি বাতিল করা হয়েছিল ৷ কারণ, স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তাবিত স্থানগুলিতে প্রধানত মন্দির ও কমিউনিটি হলগুলিতে হিংসার আশঙ্কা করেছিল ৷

গ্লোবাল নিউজ শুধুমাত্র কানাডার দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখ করেছে ৷ কারণ, কানাডা একটি দেশ হিসাবে, বিশেষ করে ট্রুডোর অধীনে, ভারত-বিরোধী খালিস্তান আন্দোলনকে বৃদ্ধির জায়গা করে দিয়েছে । গ্লোবাল নিউজ কানাডার বিষয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করে এমন সরকারি লাইনকে সামনে রেখেছে ৷ তারা কানাডার জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটল ভারতের নীতির কারণে হয়েছে ।

যাঁদের পরিবারের সদস্যরা স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে কানাডায় রয়েছেন, তাঁদের ভিসা দেওয়ার সময় কানাডার হাইকমিশন এবং ভারতে কনস্যুলেটগুলি দ্বারা গৃহীত পদক্ষেপগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে ওই নিবন্ধে ৷ সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স (সিএপিএফ) এবং পঞ্জাব পুলিশের কর্মীদের কানাডার ভিসা চাওয়ার সময় অতিরিক্ত বিবরণ পূরণ করতে হবে । এটাও উপেক্ষা করা হয়েছে সেখানে ৷

কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ, সশস্ত্র বাহিনী এবং সিএপিএফ-এর সদস্যদের জন্য জম্মু ও কাশ্মীরে পরিষেবার বিশদ চাওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোথায় কাজ করেছেন সেই সময়কাল এবং স্থানগুলিও জানতে চান । এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের তথ্য প্রাপ্তি বোঝায়, যাকে একটি প্রতিপক্ষ শক্তির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে ।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘অনুমান করে’ জম্মু ও কাশ্মীরে কাজ করার জন্য অনেককে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল । সিএপিএফ-এর একজন কনস্টেবলকে একটি 'কুখ্যাত হিংস্র' বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাঁর ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় । জম্মু ও কাশ্মীরে 'সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের' মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একজন সিনিয়র সেনা প্রবীণ ব্যক্তির ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল ।

কাশ্মীরে নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থায় এই ব্যক্তিরা কাজ করেছেন, সেটা জানার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় ৷ ভারত সরকার বারবার কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছে ৷ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । কিন্তু যখন ভারতে অবাঞ্ছিত কানাডিয়ান নাগরিকদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করার প্রসঙ্গ ওঠে, তখন অটোয়া হইচই শুরু করে ।

তথ্য বলছে যে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন প্রত্যাখানের চেয়ে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন বাতিলের সংখ্যা অনেক বেশি । গ্লোবাল নিউজ ভিসা সংক্রান্ত কানাডার সরকার কর্তৃক গৃহীত এই ধরনের পরিসংখ্যান এবং পদক্ষেপের কোনও উল্লেখ করা হয়নি ৷ সেখানে শুধুমাত্র ভারতীয় পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হয়েছে ।

এটা সত্য যে ভিসা মঞ্জুর করার বিষয়টি নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশের উপরই ৷ কানাডার ভিসা প্রত্যাখান করার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানকে 'বিদেশি হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক দমন' হিসাবে অভিহিত করেছে ৷ আর নিজেদের তরফে কারও ভিসার আবেদন বাতিল করার ক্ষেত্রে 'একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত' বলে উল্লেখ করেছে ৷ তাদের ওয়েবসাইটেই এই কারণ দেওয়া রয়েছে ৷

ইন্দো-কানাডিয়ান সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও ভারত কানাডায় ট্রাক সংগঠনের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ট্রুডো সরকারের কঠোর পদক্ষেপের সম্পর্কে কখনও মন্তব্য করেনি । অন্যদিকে, ট্রুডো কৃষক আন্দোলন নিয়ে ভারত সরকারের মনোভাব নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন । আসলে এটা ভারতীয় বিষয়ে কানাডার হস্তক্ষেপ ।

দেশের মধ্যে সন্ত্রাসবাদী বা অপরাধমূলক কাজ করার পরও সেই সন্ত্রাসী এবং অপরাধীদের অন্য কোনও দেশই স্বাগত জানায় না ৷ কানাডা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ৷ মূলত, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে কানাডা বছরের পর বছর ধরে অপরাধী ও খালিস্তানি সমর্থকদের গ্রহণ করে আসছে ।

যাঁরা ভারতকে, ভারতের আইন ও রীতিনীতিকে সম্মান করে, তাঁদের ভারত স্বাগত জানায় ৷ কিন্তু যাঁরা ভারতের সমাজ ও একজাতীয়তা ভাঙতে চায়, তাদের স্বাগত জানানো হয় না । বেশিরভাগ ইন্দো-কানাডিয়ান, যাঁদের জন্মভূমির সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই, তাঁরা ওসিআই (ভারতের বিদেশি নাগরিক) কার্ডের ধারক । খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা এই সুবিধা অস্বীকার করেছে ।

খালিস্তানি সমর্থকরা ভারতে ধর্মীয় নিপীড়নের দাবি করে কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন । অনেকে কানাডায় প্রবেশের জন্য জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করেছিলেন, যা গৃহীত হয়েছিল এবং তারা নাগরিকত্ব প্রদান করেছিল । কানাডিয়ান হাই কমিশন তাদের দাবি সত্য কি না, তা যাচাই করার চেষ্টা করেনি ।

কানাডিয়ান নাগরিক হওয়ার পর, এই ব্যক্তিরা এখন তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে, তাঁদের ভারতীয় সম্পত্তির নিষ্পত্তি করতে এবং খালিস্তান আন্দোলনকে ভিতরে ছড়িয়ে দিতে ভারতে ফিরে আসতে চান । তাঁদের প্রবেশ সীমিত করা উচিত এবং তাঁদের অভিপ্রায় ও পূর্বসূচী নিশ্চিত করার পরে বেছে বেছে ভিসা দেওয়া উচিত । সর্বোপরি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত-সহ বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতে প্রবেশ একটি বিশেষাধিকার এবং অধিকার নয় ।

পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়ায় কানাডার চাপ এবং নিবন্ধের কাছে ভারতের মাথা নত করা উচিত নয় । খালিস্তান আন্দোলনকে দমন করার জন্য এটিকে অটোয়ার উপর চাপ প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে । যাঁরা খালিস্তান সমর্থন করেন, তাঁদের কখনই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না । এই বার্তা যাওয়া উচিত যে যারা ভারতকে বিভক্ত করতে চান, তাঁরা এই দেশের নাগরিক হলেও, তাঁরা এঁদের মাটিতে অবাঞ্ছিত ।

আরও, আসন্ন নির্বাচনে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি বা জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট না-দেওয়ার জন্য ভারতকে কানাডার মধ্যে তার প্রবাসীদের প্রভাবিত করতে হবে । কানাডা যদি এটিকে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করে, তাই হোক । ভারতের কানাডার চাপ ও অভিযোগ সহ্য করার শক্তি রয়েছে ।

(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.