ETV Bharat / opinion

দিল্লির বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস জোট না-হওয়ার ফল ভুগতে পারেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল - DELHI ASSEMBLY ELECTIONS 2025

সায়ন্তন ঘোষ লিখেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কংগ্রেসের ভোটের ভাগ 10 শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছে দিল্লিতে ৷ ফলে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সামান্য প্রভাব ফেলেছে ।

Arvind Kejriwal
অরবিন্দ কেজরিওয়াল (আইএএনএস)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 21, 2024, 9:21 PM IST

আম আদমি পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে 2025 সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার কথা অস্বীকার করেছে । নেপথ্যে আলোচনার বিষয়টি অব্যাহত থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিসরে ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের তরফে এই ধরনের কোনও জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম । কেজরিওয়ালের জন্য, এই নির্বাচন একটি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ৷ তাঁর নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার থেকে কম কিছু নয় এবারের ভোট ৷

তাঁর সাম্প্রতিক গ্রেফতারি এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা জামিন মঞ্জুর করার পরে, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ৷ আর অতীশিকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ করেন । এই পদক্ষেপটি আসন্ন নির্বাচনকে কেবল আপের শাসন মডেলের জন্য নয়, দিল্লির ভোটারদের উপর কেজরিওয়ালের কর্তৃত্বের ক্ষেত্রেও একটি লিটমাস টেস্ট ৷

অন্যদিকে রয়েছে কংগ্রেস ৷ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তাদের সামান্য প্রভাব থাকে ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার ভোটের ভাগ 10 শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছে । এমনকি যখন আপ এবং কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনের সময় জোট করেছিল, তখনও কংগ্রেস দিল্লিতে একটিও জিততে পারেনি ৷ তা সত্ত্বেও ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনী গতিশীলতা পরিবর্তন করতে পারে ।

ভোটে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ বিশেষ করে কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট মুসলিম এবং দলিত সম্প্রদায় ৷ তাদের ভোট ভাগ হলে, তা আপের কাছে চ্যালেঞ্জ হবে । এই অসন্তোষের জেরে হয়তো কংগ্রেস জিতবে না ৷ কিন্তু তারা আপকে দুর্বল করে দেবে ৷ যার ফলে বিজেপির লাভ হতে পারে ৷

শেষ পর্যন্ত, জোটের অনুপস্থিতি একটি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, যাতে কংগ্রেসের লাভের থেকে বেশি ক্ষতি হতে পারে আপের । কেজরিওয়ালের লাভ বেশি হবে না ৷ আপের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে দিল্লিকে ধরে রাখার তাঁর ক্ষমতা নির্ধারণ করবে এবং এই উচ্চগ্রামের লড়াইয়ে তাঁর রাজনৈতিক ব্র্যান্ড অক্ষত আছে, নাকি হ্রাস পেয়েছে, তা বোঝা যাবে ।

দিল্লির নির্বাচনী পরিবর্তনের বিশ্লেষণ: বিধানসভা বনাম লোকসভার গতিশীলতা

দিল্লির নির্বাচনী প্রবণতা বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে সম্পূর্ণ বৈপরীত ফলাফল দেখায় ৷ ভোটারদের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় দ্বৈত-মনোভাব দেখা যায় ৷ 2020 দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ) 53 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ বিজেপি পায় 38 শতাংশ ও কংগ্রেস মাত্র 4 শতাংশ ভোট পায় ৷

এই প্যাটার্ন 2015 সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছিল ৷ যেখানে AAP 54 শতাংশ, বিজেপি 32 শতাংশ এবং কংগ্রেস 9 শতাংশ অর্জন করেছিল । উল্লেখযোগ্যভাবে, 2013 ছিল শেষবার কংগ্রেস রাজ্য নির্বাচনে ঠিকঠাক পারফর্ম করেছিল ৷ সেবার বিজেপি 33 শতাংশ পেয়েছিল ৷ কংগ্রেস পেয়েছিল 24 শতাংশ ৷ প্রথমবার ভোটের ময়দানে নেমে আপ 29 শতাংশ ভোট পেয়েছিল । লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে দিল্লিতে বিজেপির জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে ৷

2024 সালে বিজেপি 54 শতাংশ ভোট পায় ৷ আপ 24 শতাংশ এবং কংগ্রেস 18 শতাংশ ভোট পায় ৷ 2019 একই ছবি ছিল ৷ সেবার বিজেপি 56 শতাংশ, আপ 22 শতাংশ ও কংগ্রেস 18 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ 2014 সালে বিজেপি 46 শতাংশ, আপ 32 শতাংশ ও কংগ্রেস 15 শতাংশ ৷ তখনও বিজেপির আধিপত্যই দেখেছিল দিল্লি ৷ এক্ষেত্রে দিল্লির ভোটিং আচরণকে যা অনন্য করে তোলে, তা হল সমর্থনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র মনোভাব ৷ দিল্লি আদর্শগতভাবে বিজেপির দুর্গ ৷ এখানে বিজেপির ভোট 32 শতাংশ ৷ আপের মূল নির্বাচনী এলাকা প্রায় 18 শতাংশ ৷ এর মধ্যে লোকসভা ভোটে যাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেন, সেই ভোটাররাও রয়েছেন ৷ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে 18 শতাংশ ভোট পাচ্ছে ৷ কিন্তু এই সমর্থন বিধানসভা নির্বাচনে মূলত আপের দিকে স্থানান্তরিত হয় ।

এই গতিশীলতার সঙ্গে যোগ হচ্ছে 10-15 শতাংশ ‘ভাসমান’ ভোটার, যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে আপের দিকে থাকেন এবং লোকসভা ভোটের সময় বিজেপিকে সমর্থন করেন ৷ এই সুইং রাজ্য স্তরে আপের আধিপত্য এবং সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির অদম্য নেতৃত্বের একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে । দিল্লির অনন্য ভোটার আচরণ তার রাজনৈতিক পরিসরের জটিলতাকে উপেক্ষা করে ৷ ফলে স্থানীয় শাসন এবং জাতীয় আখ্যান ভোটারদের ভিন্ন দিকে ঠেলে দেয় ।

মুসলিম ভোট নিয়ে উদ্বেগ

2025 সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না-করার সিদ্ধান্তের জেরে আপ মুসলিম ভোট হারাতে পারে ৷ ঐতিহাসিকভাবে, মুসলিম সম্প্রদায় দিল্লির নির্বাচনী পরিসরে একটি নির্ধারক শক্তি ৷ প্রায়শই তারা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফলাফল নির্ধারণ করে ।

2015 সালে সিএসডিএস-লোকনীতি সমীক্ষা অনুসারে আপ মুসলমানদের কাছ থেকে অপ্রতিরোধ্য সমর্থন উপভোগ করেছে, তাদের 77 শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং দশটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের মধ্যে নয়টিতে জিতেছে । যাইহোক, এই সম্পর্ক 2020 সাল নাগাদ কমতে শুরু করে ৷ মুসলমানদের মধ্যে আপের ভোট শতাংশ 69-এ নেমে আসে ।

এই পতন 2022 সালের দিল্লি মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশন (এমসিডি) নির্বাচনে আরও তীব্র হয়েছিল, যেখানে কংগ্রেস মুসলিম অধ্যুষিত মুস্তাফাবাদ ও শাহিনবাগের মতো এলাকায় বেশি ভোট পেয়েছিল ৷ এর কারণ ছিল, 2020 সালের হিংসার সময় আপের নিষ্ক্রিয়তা এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান ৷

জোট না-হলে মুসলিম আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে ৷ তাদের সম্মিলিত শক্তিকে ক্ষুণ্ন করে । এই বিভাজনে ভেঙে যাওয়া ধর্মনিরপেক্ষ ভোটকে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে তার অবস্থান সুসংহত করতে পারে ।

আপ একটি দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি: মুসলিম ভোটার, যাদের মোহভঙ্গ হয়েছে তাদের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে ৷ বিরোধীদের অনৈক্যের বৃহত্তর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে । এটি করতে ব্যর্থ হলে, কেবল দিল্লির উপর তার দখল দুর্বল করবে না, রাজধানীতে বিজেপির আধিপত্যকেও শক্তিশালী করবে ।

দলিতদের সমর্থন ধরে রাখা

ঐতিহাসিকভাবে, দলিতরা ছিল কংগ্রেসের মূল ভোটার ৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই আপের প্রতি তাদের আনুগত্য স্থানান্তরিত করে । তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে ৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল রাজেন্দ্র পাল গৌতমের পদত্যাগ ৷ যিনি একজন বিশিষ্ট দলিত নেতা এবং দিল্লির প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ।

গৌতমকে 2022 সালের অক্টোবরে একটি ধর্মান্তর অনুষ্ঠান, যেখানে দলিতদের হিন্দু ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, সেখানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁদের মন্ত্রিসভা পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল । ওই অনুষ্ঠান বিতর্কের জন্ম দেয় ৷ ফলে দলিত সমর্থকদের আকাঙ্খা ও সংবেদনশীলতা মোকাবিলায় যে আপের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে তা তুলে ধরেছে ।

গৌতমের পদত্যাগের পর রাজকুমার আনন্দ, আরেকজন বিশিষ্ট দলিত নেতা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন । যাইহোক, আনন্দও 2024 সালের এপ্রিলে আপ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ৷ তিনি দলের নীতিগুলির প্রতি অসন্তোষ উল্লেখ করেন এবং আপকে দলিত বিরোধী বলে অভিযুক্ত করেন । আনন্দের চলে যাওয়া আপের দলিত নেতাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে আরও স্পষ্ট করেছে ৷

রাজেন্দ্র পাল গৌতমের মতো আপ থেকে কংগ্রেসে প্রধান দলিত নেতাদের সাম্প্রতিক ত্যাগের কারণে এই অনুভূতিটি বিশেষভাবে শক্তিশালী । সম্প্রতি, কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিত সম্প্রতি আপের শাসনের সমালোচনা করেছেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার প্রতি কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়েছেন । এই আখ্যানটি দলিত ভোটারদের সঙ্গে অনুরণিত হতে পারে ৷ কারণ, তাদের আপের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে ৷ এইভাবে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোটের অভাব দলিত সমর্থন ধরে রাখার ক্ষেত্রে আপকে প্রভাবিত করতে পারে ।

আম আদমি পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে 2025 সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার কথা অস্বীকার করেছে । নেপথ্যে আলোচনার বিষয়টি অব্যাহত থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিসরে ও আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের তরফে এই ধরনের কোনও জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম । কেজরিওয়ালের জন্য, এই নির্বাচন একটি ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ৷ তাঁর নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার থেকে কম কিছু নয় এবারের ভোট ৷

তাঁর সাম্প্রতিক গ্রেফতারি এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা জামিন মঞ্জুর করার পরে, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ৷ আর অতীশিকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ করেন । এই পদক্ষেপটি আসন্ন নির্বাচনকে কেবল আপের শাসন মডেলের জন্য নয়, দিল্লির ভোটারদের উপর কেজরিওয়ালের কর্তৃত্বের ক্ষেত্রেও একটি লিটমাস টেস্ট ৷

অন্যদিকে রয়েছে কংগ্রেস ৷ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তাদের সামান্য প্রভাব থাকে ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তার ভোটের ভাগ 10 শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছে । এমনকি যখন আপ এবং কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনের সময় জোট করেছিল, তখনও কংগ্রেস দিল্লিতে একটিও জিততে পারেনি ৷ তা সত্ত্বেও ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনী গতিশীলতা পরিবর্তন করতে পারে ।

ভোটে ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ বিশেষ করে কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে অসন্তুষ্ট মুসলিম এবং দলিত সম্প্রদায় ৷ তাদের ভোট ভাগ হলে, তা আপের কাছে চ্যালেঞ্জ হবে । এই অসন্তোষের জেরে হয়তো কংগ্রেস জিতবে না ৷ কিন্তু তারা আপকে দুর্বল করে দেবে ৷ যার ফলে বিজেপির লাভ হতে পারে ৷

শেষ পর্যন্ত, জোটের অনুপস্থিতি একটি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়, যাতে কংগ্রেসের লাভের থেকে বেশি ক্ষতি হতে পারে আপের । কেজরিওয়ালের লাভ বেশি হবে না ৷ আপের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে দিল্লিকে ধরে রাখার তাঁর ক্ষমতা নির্ধারণ করবে এবং এই উচ্চগ্রামের লড়াইয়ে তাঁর রাজনৈতিক ব্র্যান্ড অক্ষত আছে, নাকি হ্রাস পেয়েছে, তা বোঝা যাবে ।

দিল্লির নির্বাচনী পরিবর্তনের বিশ্লেষণ: বিধানসভা বনাম লোকসভার গতিশীলতা

দিল্লির নির্বাচনী প্রবণতা বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে সম্পূর্ণ বৈপরীত ফলাফল দেখায় ৷ ভোটারদের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় দ্বৈত-মনোভাব দেখা যায় ৷ 2020 দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ) 53 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ বিজেপি পায় 38 শতাংশ ও কংগ্রেস মাত্র 4 শতাংশ ভোট পায় ৷

এই প্যাটার্ন 2015 সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছিল ৷ যেখানে AAP 54 শতাংশ, বিজেপি 32 শতাংশ এবং কংগ্রেস 9 শতাংশ অর্জন করেছিল । উল্লেখযোগ্যভাবে, 2013 ছিল শেষবার কংগ্রেস রাজ্য নির্বাচনে ঠিকঠাক পারফর্ম করেছিল ৷ সেবার বিজেপি 33 শতাংশ পেয়েছিল ৷ কংগ্রেস পেয়েছিল 24 শতাংশ ৷ প্রথমবার ভোটের ময়দানে নেমে আপ 29 শতাংশ ভোট পেয়েছিল । লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে দিল্লিতে বিজেপির জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে ৷

2024 সালে বিজেপি 54 শতাংশ ভোট পায় ৷ আপ 24 শতাংশ এবং কংগ্রেস 18 শতাংশ ভোট পায় ৷ 2019 একই ছবি ছিল ৷ সেবার বিজেপি 56 শতাংশ, আপ 22 শতাংশ ও কংগ্রেস 18 শতাংশ ভোট পেয়েছিল ৷ 2014 সালে বিজেপি 46 শতাংশ, আপ 32 শতাংশ ও কংগ্রেস 15 শতাংশ ৷ তখনও বিজেপির আধিপত্যই দেখেছিল দিল্লি ৷ এক্ষেত্রে দিল্লির ভোটিং আচরণকে যা অনন্য করে তোলে, তা হল সমর্থনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র মনোভাব ৷ দিল্লি আদর্শগতভাবে বিজেপির দুর্গ ৷ এখানে বিজেপির ভোট 32 শতাংশ ৷ আপের মূল নির্বাচনী এলাকা প্রায় 18 শতাংশ ৷ এর মধ্যে লোকসভা ভোটে যাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেন, সেই ভোটাররাও রয়েছেন ৷ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে 18 শতাংশ ভোট পাচ্ছে ৷ কিন্তু এই সমর্থন বিধানসভা নির্বাচনে মূলত আপের দিকে স্থানান্তরিত হয় ।

এই গতিশীলতার সঙ্গে যোগ হচ্ছে 10-15 শতাংশ ‘ভাসমান’ ভোটার, যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে আপের দিকে থাকেন এবং লোকসভা ভোটের সময় বিজেপিকে সমর্থন করেন ৷ এই সুইং রাজ্য স্তরে আপের আধিপত্য এবং সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির অদম্য নেতৃত্বের একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করে । দিল্লির অনন্য ভোটার আচরণ তার রাজনৈতিক পরিসরের জটিলতাকে উপেক্ষা করে ৷ ফলে স্থানীয় শাসন এবং জাতীয় আখ্যান ভোটারদের ভিন্ন দিকে ঠেলে দেয় ।

মুসলিম ভোট নিয়ে উদ্বেগ

2025 সালের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না-করার সিদ্ধান্তের জেরে আপ মুসলিম ভোট হারাতে পারে ৷ ঐতিহাসিকভাবে, মুসলিম সম্প্রদায় দিল্লির নির্বাচনী পরিসরে একটি নির্ধারক শক্তি ৷ প্রায়শই তারা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফলাফল নির্ধারণ করে ।

2015 সালে সিএসডিএস-লোকনীতি সমীক্ষা অনুসারে আপ মুসলমানদের কাছ থেকে অপ্রতিরোধ্য সমর্থন উপভোগ করেছে, তাদের 77 শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং দশটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের মধ্যে নয়টিতে জিতেছে । যাইহোক, এই সম্পর্ক 2020 সাল নাগাদ কমতে শুরু করে ৷ মুসলমানদের মধ্যে আপের ভোট শতাংশ 69-এ নেমে আসে ।

এই পতন 2022 সালের দিল্লি মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশন (এমসিডি) নির্বাচনে আরও তীব্র হয়েছিল, যেখানে কংগ্রেস মুসলিম অধ্যুষিত মুস্তাফাবাদ ও শাহিনবাগের মতো এলাকায় বেশি ভোট পেয়েছিল ৷ এর কারণ ছিল, 2020 সালের হিংসার সময় আপের নিষ্ক্রিয়তা এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান ৷

জোট না-হলে মুসলিম আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে ৷ তাদের সম্মিলিত শক্তিকে ক্ষুণ্ন করে । এই বিভাজনে ভেঙে যাওয়া ধর্মনিরপেক্ষ ভোটকে কাজে লাগিয়ে বিজেপিকে তার অবস্থান সুসংহত করতে পারে ।

আপ একটি দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি: মুসলিম ভোটার, যাদের মোহভঙ্গ হয়েছে তাদের মধ্যে আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে ৷ বিরোধীদের অনৈক্যের বৃহত্তর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে । এটি করতে ব্যর্থ হলে, কেবল দিল্লির উপর তার দখল দুর্বল করবে না, রাজধানীতে বিজেপির আধিপত্যকেও শক্তিশালী করবে ।

দলিতদের সমর্থন ধরে রাখা

ঐতিহাসিকভাবে, দলিতরা ছিল কংগ্রেসের মূল ভোটার ৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই আপের প্রতি তাদের আনুগত্য স্থানান্তরিত করে । তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এই সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে ৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল রাজেন্দ্র পাল গৌতমের পদত্যাগ ৷ যিনি একজন বিশিষ্ট দলিত নেতা এবং দিল্লির প্রাক্তন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ।

গৌতমকে 2022 সালের অক্টোবরে একটি ধর্মান্তর অনুষ্ঠান, যেখানে দলিতদের হিন্দু ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, সেখানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁদের মন্ত্রিসভা পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল । ওই অনুষ্ঠান বিতর্কের জন্ম দেয় ৷ ফলে দলিত সমর্থকদের আকাঙ্খা ও সংবেদনশীলতা মোকাবিলায় যে আপের সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে তা তুলে ধরেছে ।

গৌতমের পদত্যাগের পর রাজকুমার আনন্দ, আরেকজন বিশিষ্ট দলিত নেতা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন । যাইহোক, আনন্দও 2024 সালের এপ্রিলে আপ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ৷ তিনি দলের নীতিগুলির প্রতি অসন্তোষ উল্লেখ করেন এবং আপকে দলিত বিরোধী বলে অভিযুক্ত করেন । আনন্দের চলে যাওয়া আপের দলিত নেতাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে আরও স্পষ্ট করেছে ৷

রাজেন্দ্র পাল গৌতমের মতো আপ থেকে কংগ্রেসে প্রধান দলিত নেতাদের সাম্প্রতিক ত্যাগের কারণে এই অনুভূতিটি বিশেষভাবে শক্তিশালী । সম্প্রতি, কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিত সম্প্রতি আপের শাসনের সমালোচনা করেছেন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার প্রতি কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতির উপর জোর দিয়েছেন । এই আখ্যানটি দলিত ভোটারদের সঙ্গে অনুরণিত হতে পারে ৷ কারণ, তাদের আপের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে ৷ এইভাবে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোটের অভাব দলিত সমর্থন ধরে রাখার ক্ষেত্রে আপকে প্রভাবিত করতে পারে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.