ETV Bharat / opinion

সিরিয়ার আসাদ জমানার অবসানে বিপাকে ইরান-রাশিয়া, লাভ হতে পারে ইজরায়েলের - FALL OF DAMASCUS

সিরিয়ায় পতন হয়েছে আসাদ সরকারের ৷ নয়া সরকার গড়েছে বিদ্রোহীরা ৷ এতে কার লাভ হল ? কেই বা ক্ষতিগ্রস্ত হল ?

FALL OF DAMASCUS
সিরিয়ার দামাস্কাসে আসাদ সরকারের পতনের পর বিদ্রোহীদের উৎসব৷ সোমবার৷ (এপি)
author img

By Bilal Bhat

Published : Dec 11, 2024, 8:42 PM IST

দামাস্কাসের পতন কাবুল, ঢাকা ও কলম্বোর পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ একইভাবে বাশার আল আসাদও রাশিয়ায় আশ্রয় নিতে সিরিয়া থেকে পালিয়েছেন ৷

আসাদ সরকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাত গত 8 ডিসেম্বর সিরিয়ার সরকারের পতনের সঙ্গে সমাপ্ত হয় ৷ এর ফলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলি দামাস্কাসের দখল নেয় এবং আসাদকে রাশিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করে ৷ সেখানে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে আশ্রয় দেন ।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের তুলনা করা যেতে পারে ৷ সেখানেও বড় ধরনের সমাবেশ সরকারকে উৎখাত করেছিল এবং ছাত্র নেতৃত্ব দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল ৷ অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে মিল রয়েছে ৷ সেখানে দোহা চুক্তির ফলে তালিবানরা ওই দেশ দখল করে ৷

খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে সংঘাতের বিস্তৃত রূপ কেমন ছিল ৷ আর এটা শুধুমাত্র 'অত্যাচারী' শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই নয় । সিরিয়ার এবারের প্রতিরোধকে 2011 সালের গণ-অভ্যুত্থানের আরও একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে ৷ সেই প্রতিরোধকে আসাদ সরকার কড়া হাতে দমন করার চেষ্টা বিফলে যায় ৷ তার পরই তা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে ৷ প্রতিবাদকারীদের জেলে পাঠানো হয় এবং নির্যাতন করা হয় ৷ অনেকে তো নিখোঁজই হয়ে গিয়েছেন ৷

অনেক আন্দোলনকারী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন প্রাক্তন সৈনিক । প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগদানকারী আল-কায়েদার সদস্যরা এই আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদের রূপ দেয় ৷ যার ফলে সিরিয়ার প্রতিরোধে প্রতিবেশী দেশগুলির প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়ার সুযোগ কমে যায় । এর মধ্যে, বেশ কয়েকটি শক্তিশালী দেশ মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আধিপত্য প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিল ৷ কারণ, তারা সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ইন্ধন দিয়েছিল ।

FALL OF DAMASCUS
বাসার আল আসাদ (এপি)

ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইন্ধন যোগানো শক্তিগুলো হল আসাদ ডিক্টেটরশিপ, লেবানিজ হিজবুল্লা এবং ইরানিয়ান রেভোলিউশনারি গার্ডস (আইআরজি) ৷ আসাদের শাসনকালে সিরিয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল ৷ বিশেষ করে ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষের পরে তা আরও ভয়াবহ হয় ৷ এর জেরে লেবাননের অর্থনীতি এবং পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েল-বিরোধী প্রতিরোধের প্রধান সমর্থক ইরানের অর্থনীতি, উভয়ের উপরই মারাত্মক প্রভাব পড়ে ।

হামাসের যুদ্ধের শিকার হওয়ার পর আসাদ তাঁর সামরিক সৈন্যদের বেতন দিতে অক্ষম হয়ে পড়েন ৷ এর জেরে বিরোধী দলগুলো শক্তি অর্জন করে এবং সমন্বিত ধর্মঘট শুরু করে । আলেপ্পো, ইদলিব থেকে বিদ্রোহ শুরুর পর তা সামা হয়ে শেষ পর্যন্ত দামাস্কাসে চলে আসে ৷ চারদিক থেকে একত্রিত আক্রমণের কারণে 50 বছরেরও বেশি রাজবংশের শাসনের পরও আসাদ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন । গত সপ্তাহে বিরোধী বাহিনী সিরিয়া দখল করার সময় হয় সামান্য প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ৷ অথবা একেবারেই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি । দেশের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ছিল এইচটিএস (হায়াত তাহরির আল শাম) ৷ ওই গোষ্ঠী দামাস্কাস-সহ দেশের প্রধান সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণে নেয় ৷

FALL OF DAMASCUS
মহম্মদ ইউনুস (আইএএনএস)

সিরিয়ায় কীভাবে ঘটনাগুলি ঘটেছে, আর এতে পশ্চিমী বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ! কেউ এই যুক্তি দিতে পারে যে বর্তমান পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমী বিশ্বের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা দেয় ৷ কারণ, ইরানে এর প্রভাব পড়তে পারে ৷ আসাদ সরকারের পতন হল প্রতিরোধের অক্ষ, যা এই অঞ্চলের চারপাশে জঙ্গি গোষ্ঠী এবং ছায়াযুদ্ধকারীদের সমর্থন করার জন্য তেহরানের দশকব্যাপী কৌশলের উপর একটি আঘাত ৷ আসাদের অধীনে সিরিয়া সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ছিল ।

দামাস্কাস আইআরজি ও হিজবুল্লা এবং আসাদ সরকারের মধ্যে একটি প্রধান সংযোগ বজায় রেখেছিল । জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আসাদকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইরান ৷ আসাদের দেশ শাসনের স্বৈরাচারী পদ্ধতি জানা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইরান ৷ সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না ৷ আসাদ সরকার প্রতিরোধের সময় সিরিয়দের উপর যে অত্যাচার চালিয়েছিল, ইরান ও হিজবুল্লাকে তার সমর্থক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল । অসামরিক জনগণ এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ যা আইআরজি-র বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছিল ৷ আগে পশ্চিম এশিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের 'ত্রাণকর্তা' হিসাবে দেখা হতো আইআরজি-কে ।

FALL OF DAMASCUS
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি ভবনে তালিবানরা৷ (এপি)

ইরান আসাদের একনায়কতন্ত্রের প্রতি অপ্রতিরোধ্য এবং নিঃশর্ত সমর্থন দেখানোর পর প্যালেস্তাইন সুন্নি এবং শিয়া জাতির মধ্যে ভাগ হয়ে যায় ৷ ইজরায়েলকে ঘিরে থাকা শিয়া দেশগুলি ইজরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল, যখন আরব বিশেষ করে সুন্নি দেশগুলি প্যালেস্তাইনের প্রতি তাদের সমর্থন কমিয়ে রেখেছিল ৷ ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি অনুমান করেছে এবং এইচটিএস নেতৃত্বের প্রতি একটি নমনীয় পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, যা তারা তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে করেছিল ৷ উভয় ক্ষেত্রেই আগে নেতারা সন্ত্রাসবাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা ছিল ৷ তার পরও ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা করে ৷

দামাস্কাস এইচটিএস-এর দখলে চলে যাওয়ার পরপরই একটি বিবৃতি দেন জো বাইডেন ৷ সেখানে তিনি জানান যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ৷ আবু মোহাম্মদ আল জুলানির নামে কাজ করা আহমদ আল শারার দেওয়া বিবৃতির আলোকে এইচটিএস নেতৃত্বকে ইঙ্গিত দেন তিনি । উপরন্তু, বাইডেন জানিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু সিরিয়ান গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে ।

FALL OF DAMASCUS
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিঙ্ঘে (আইএএনএস)

ইজরায়েলের সীমান্তে যেভাবে ঘটনা ঘটছে, তা থেকে বোঝা যায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের আগে নেপথ্যে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে । দেশের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তির উত্থান হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে ইঞ্জিনিয়র থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া একজনের নাম অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে ৷ সিরিয়া সরাসরি ইজরায়েল, তুরস্ক, রাশিয়া, ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত ৷ তাই তাদের আগে বেঁচে থাকার কৌশল তৈরি করতে হবে, যাতে তারা চারপাশে শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে না-যায় ৷ রাশিয়া ও ইরান উভয়ই এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছে ৷ অন্যদিকে ইজরায়েল সিরিয়ার সীমান্তে আক্রমণের মুক্ত পথ পেয়ে গিয়েছে ৷

যে বাহিনী সিরিয়ার দখল নিয়েছে, তাদের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ৷ বোঝাতে হবে যে তারা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে । তবে সিরিয়া আফগানিস্তানের পথে যায়, নাকি গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার বিষয় ।

দামাস্কাসের পতন কাবুল, ঢাকা ও কলম্বোর পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ একইভাবে বাশার আল আসাদও রাশিয়ায় আশ্রয় নিতে সিরিয়া থেকে পালিয়েছেন ৷

আসাদ সরকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাত গত 8 ডিসেম্বর সিরিয়ার সরকারের পতনের সঙ্গে সমাপ্ত হয় ৷ এর ফলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলি দামাস্কাসের দখল নেয় এবং আসাদকে রাশিয়ায় চলে যেতে বাধ্য করে ৷ সেখানে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে আশ্রয় দেন ।

সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের তুলনা করা যেতে পারে ৷ সেখানেও বড় ধরনের সমাবেশ সরকারকে উৎখাত করেছিল এবং ছাত্র নেতৃত্ব দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল ৷ অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে মিল রয়েছে ৷ সেখানে দোহা চুক্তির ফলে তালিবানরা ওই দেশ দখল করে ৷

খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে সংঘাতের বিস্তৃত রূপ কেমন ছিল ৷ আর এটা শুধুমাত্র 'অত্যাচারী' শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই নয় । সিরিয়ার এবারের প্রতিরোধকে 2011 সালের গণ-অভ্যুত্থানের আরও একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে ৷ সেই প্রতিরোধকে আসাদ সরকার কড়া হাতে দমন করার চেষ্টা বিফলে যায় ৷ তার পরই তা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে ৷ প্রতিবাদকারীদের জেলে পাঠানো হয় এবং নির্যাতন করা হয় ৷ অনেকে তো নিখোঁজই হয়ে গিয়েছেন ৷

অনেক আন্দোলনকারী সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন প্রাক্তন সৈনিক । প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগদানকারী আল-কায়েদার সদস্যরা এই আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদের রূপ দেয় ৷ যার ফলে সিরিয়ার প্রতিরোধে প্রতিবেশী দেশগুলির প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়ার সুযোগ কমে যায় । এর মধ্যে, বেশ কয়েকটি শক্তিশালী দেশ মধ্যপ্রাচ্যে তাদের আধিপত্য প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিল ৷ কারণ, তারা সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ইন্ধন দিয়েছিল ।

FALL OF DAMASCUS
বাসার আল আসাদ (এপি)

ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইন্ধন যোগানো শক্তিগুলো হল আসাদ ডিক্টেটরশিপ, লেবানিজ হিজবুল্লা এবং ইরানিয়ান রেভোলিউশনারি গার্ডস (আইআরজি) ৷ আসাদের শাসনকালে সিরিয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল ৷ বিশেষ করে ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষের পরে তা আরও ভয়াবহ হয় ৷ এর জেরে লেবাননের অর্থনীতি এবং পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েল-বিরোধী প্রতিরোধের প্রধান সমর্থক ইরানের অর্থনীতি, উভয়ের উপরই মারাত্মক প্রভাব পড়ে ।

হামাসের যুদ্ধের শিকার হওয়ার পর আসাদ তাঁর সামরিক সৈন্যদের বেতন দিতে অক্ষম হয়ে পড়েন ৷ এর জেরে বিরোধী দলগুলো শক্তি অর্জন করে এবং সমন্বিত ধর্মঘট শুরু করে । আলেপ্পো, ইদলিব থেকে বিদ্রোহ শুরুর পর তা সামা হয়ে শেষ পর্যন্ত দামাস্কাসে চলে আসে ৷ চারদিক থেকে একত্রিত আক্রমণের কারণে 50 বছরেরও বেশি রাজবংশের শাসনের পরও আসাদ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন । গত সপ্তাহে বিরোধী বাহিনী সিরিয়া দখল করার সময় হয় সামান্য প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ৷ অথবা একেবারেই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি । দেশের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ছিল এইচটিএস (হায়াত তাহরির আল শাম) ৷ ওই গোষ্ঠী দামাস্কাস-সহ দেশের প্রধান সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণে নেয় ৷

FALL OF DAMASCUS
মহম্মদ ইউনুস (আইএএনএস)

সিরিয়ায় কীভাবে ঘটনাগুলি ঘটেছে, আর এতে পশ্চিমী বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কী ছিল ! কেউ এই যুক্তি দিতে পারে যে বর্তমান পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমী বিশ্বের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা দেয় ৷ কারণ, ইরানে এর প্রভাব পড়তে পারে ৷ আসাদ সরকারের পতন হল প্রতিরোধের অক্ষ, যা এই অঞ্চলের চারপাশে জঙ্গি গোষ্ঠী এবং ছায়াযুদ্ধকারীদের সমর্থন করার জন্য তেহরানের দশকব্যাপী কৌশলের উপর একটি আঘাত ৷ আসাদের অধীনে সিরিয়া সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ছিল ।

দামাস্কাস আইআরজি ও হিজবুল্লা এবং আসাদ সরকারের মধ্যে একটি প্রধান সংযোগ বজায় রেখেছিল । জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আসাদকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইরান ৷ আসাদের দেশ শাসনের স্বৈরাচারী পদ্ধতি জানা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইরান ৷ সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না ৷ আসাদ সরকার প্রতিরোধের সময় সিরিয়দের উপর যে অত্যাচার চালিয়েছিল, ইরান ও হিজবুল্লাকে তার সমর্থক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল । অসামরিক জনগণ এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷ যা আইআরজি-র বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছিল ৷ আগে পশ্চিম এশিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের 'ত্রাণকর্তা' হিসাবে দেখা হতো আইআরজি-কে ।

FALL OF DAMASCUS
আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি ভবনে তালিবানরা৷ (এপি)

ইরান আসাদের একনায়কতন্ত্রের প্রতি অপ্রতিরোধ্য এবং নিঃশর্ত সমর্থন দেখানোর পর প্যালেস্তাইন সুন্নি এবং শিয়া জাতির মধ্যে ভাগ হয়ে যায় ৷ ইজরায়েলকে ঘিরে থাকা শিয়া দেশগুলি ইজরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল, যখন আরব বিশেষ করে সুন্নি দেশগুলি প্যালেস্তাইনের প্রতি তাদের সমর্থন কমিয়ে রেখেছিল ৷ ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি অনুমান করেছে এবং এইচটিএস নেতৃত্বের প্রতি একটি নমনীয় পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, যা তারা তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে করেছিল ৷ উভয় ক্ষেত্রেই আগে নেতারা সন্ত্রাসবাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা ছিল ৷ তার পরও ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা করে ৷

দামাস্কাস এইচটিএস-এর দখলে চলে যাওয়ার পরপরই একটি বিবৃতি দেন জো বাইডেন ৷ সেখানে তিনি জানান যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ৷ আবু মোহাম্মদ আল জুলানির নামে কাজ করা আহমদ আল শারার দেওয়া বিবৃতির আলোকে এইচটিএস নেতৃত্বকে ইঙ্গিত দেন তিনি । উপরন্তু, বাইডেন জানিয়েছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু সিরিয়ান গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে ।

FALL OF DAMASCUS
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিঙ্ঘে (আইএএনএস)

ইজরায়েলের সীমান্তে যেভাবে ঘটনা ঘটছে, তা থেকে বোঝা যায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের আগে নেপথ্যে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে । দেশের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তির উত্থান হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে ইঞ্জিনিয়র থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া একজনের নাম অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে ৷ সিরিয়া সরাসরি ইজরায়েল, তুরস্ক, রাশিয়া, ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত ৷ তাই তাদের আগে বেঁচে থাকার কৌশল তৈরি করতে হবে, যাতে তারা চারপাশে শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে না-যায় ৷ রাশিয়া ও ইরান উভয়ই এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছে ৷ অন্যদিকে ইজরায়েল সিরিয়ার সীমান্তে আক্রমণের মুক্ত পথ পেয়ে গিয়েছে ৷

যে বাহিনী সিরিয়ার দখল নিয়েছে, তাদের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ৷ বোঝাতে হবে যে তারা এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে । তবে সিরিয়া আফগানিস্তানের পথে যায়, নাকি গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার বিষয় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.