প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও স্টার্টআপগুলির মধ্যে একটি পারস্পরিক শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে: যখন এই প্রযুক্তিগুলি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন পথ খুলে দেয়, তখন স্টার্টআপগুলি উদীয়মান প্রযুক্তিগুলিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন চালায় ৷ এইভাবে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলি হল অনুঘটক, যা স্টার্টআপগুলি কী অর্জন করতে পারে তা নির্ধারণ করে ৷ প্রায়শই প্রথাগত ব্যবসায়িক মডেলগুলিকে ব্যাহত করে সম্পূর্ণরূপে ব্যবসার একটি নতুন পথ প্রশস্ত করে এবং নতুন বাজার তৈরি করে ৷
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বছরের পর বছর ধরে, ভারত একটি শক্তিশালী উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা বৃদ্ধির শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে । ভারত তার ক্রমবর্ধমান স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পরিচালনা করছে ।
ইনোভেশন ইনডেক্স 2024 নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (উইপো) রিপোর্টে 133টি বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে ভারতকে 39তম স্থানে রাখা হয়েছে । 2015 সালে ভারত 81তম অবস্থানে ছিল, 2024 সালে 39তম স্থানে উঠেছিল, যা বিভিন্ন সেক্টর জুড়ে উদ্ভাবন নীতি লালন করার প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে । শীর্ষ 40টি অর্থনীতির মধ্যে চিন ছাড়া ভারত এবং অন্যান্য চারটি মধ্যম আয়ের অর্থনীতি রয়েছে, সেগুলি হল - মালয়েশিয়া (33), তুরস্ক (37), বুলগেরিয়া (38)৷ ভারতের অবস্থান 39তম স্থানে ।
ভারত টানা 14 তম বছরে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী উদ্ভাবন আউটপারফর্মার হিসাবে এগিয়ে রয়েছে । 2009 সালে আর্থিক সংকটের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী পেটেন্ট ফাইলিং 2 শতাংশ কমেছে 2023 সালে । উইপো-প্রশাসিত পেটেন্ট কোঅপারেশন ট্রিটি (পিসিটি) এর অধীনে আন্তর্জাতিক পেটেন্ট ফাইলিং প্রায় 2 শতাংশ কমেছে 2023 সালে । এটি 2009 সালে আর্থিক সংকটের পর প্রথম পতন হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে । একই ভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো উন্নত দেশগুলি যথাক্রমে 5.3 শতাংশ এবং 2.9 শতাংশের তীব্র পতনের সম্মুখীন হয়েছে । অন্যদিকে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যথেষ্ট হয়েছে ৷ পিসিটি অ্যাপ্লিকেশনগুলি একটি চিত্তাকর্ষক 44.6 শতাংশ বৃদ্ধির রিপোর্ট করেছে ৷
সাধারণত, স্টার্ট-আপগুলি হল নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা বা নতুন বা উদ্ভাবনী ব্যবসার প্রস্তাব-সহ বিদ্যমান উদ্যোগগুলির সম্প্রসারণ । উদ্যোক্তারা উদ্ভাবনী পণ্য, পরিষেবা বা ব্যবসায়িক মডেল বিকাশের জন্য স্টার্টআপগুলি প্রতিষ্ঠা করে । আজ, স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বৃদ্ধির সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দ্বারা চিহ্নিত গভীর পরিবর্তনের সম্মুখীন হচ্ছে । বৃদ্ধির সুযোগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে উদ্ভূত হয়েছে । এন্টারপ্রাইজগুলি পণ্য ও পরিষেবাগুলির নিরাপত্তা, গুণমান ও কার্যকারিতা উন্নত করতে তাদের প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগ করছে ।
2023 সালে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রায় 40 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল, যা এআই-এর রূপান্তরমূলক সম্ভাবনা এবং ব্যবসার জন্য মূল্য প্রস্তাবের উপর জোর দেয় । সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলি দেখায় যে বিশ্বব্যাপী 67 হাজার 200টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে 25 শতাংশ সংস্থা এবং স্টার্টআপগুলি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিত্তিক ।
ভারতে এআই ইকোসিস্টেম বিকশিত হচ্ছে এবং দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে । আজ, ভারতে প্রায় 1 লক্ষ 67 হাজার স্বীকৃত স্টার্টআপ রয়েছে, যার মধ্যে 6636টি এআই স্টার্টআপ । এআই স্টার্টআপগুলি মোট স্টার্টআপের মাত্র 4 শতাংশ, যার বিনিয়োগ এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি৷ এর সঙ্গে রয়েছে স্থির বৃদ্ধি ।
ভারতে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রযুক্তি সেক্টরে স্টার্টআপগুলিও টেলিমেডিসিন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য রেকর্ডের ডিজিটাইজিংয়ের মতো স্বতন্ত্র পরিষেবাগুলির সঙ্গে অসাধারণ বৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে ৷ এইভাবে রোগীর যত্ন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহকে কার্যকরভাবে রূপান্তরিত করেছে । প্রতিবেদন অনুসারে, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রযুক্তি এলাকায় 12 হাজারের বেশি স্টার্টআপ কাজ করছে ।
ফিনটেক ল্যান্ডস্কেপে ভারত অনেক কোম্পানি এবং পণ্যের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে । ফিনটেক ইন্ডাস্ট্রি ক্রমাগত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্ব নেতা হিসেবে তার অবস্থানকে মজবুত করছে । 26টিরও বেশি ফিনটেক ইউনিকর্ন এবং একটি ডেকাকর্ন-সহ ভারতের ফিনটেক কোম্পানিগুলির মোট বাজার মূল্য প্রায় 90 বিলিয়ন মার্কিন ডলার । ভারতে ফিনটেক স্টার্টআপের সংখ্যা গত তিন বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে, 2021 সালে 2100 থেকে 2024-এ 10200 হয়েছে ৷
ভালো খবর হল যে উদ্যোক্তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, বর্জ্য হ্রাস ও দীর্ঘমেয়াদী নগর উন্নয়ন-সহ পরিবেশগত টেকসই সমাধানগুলি বিকাশের দিকেও মনোনিবেশ করছে ৷
যদিও স্টার্টআপ বৃদ্ধির গল্প এখনও পর্যন্ত চিত্তাকর্ষক ছিল, অনেকে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করে । চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে, গ্লোবাল স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে । তহবিলের সুযোগের অভাব সর্বদা প্রতিটি দেশে স্টার্টআপগুলিকে বাধা দিচ্ছে এবং ভারতও এর ব্যতিক্রম নয় ।