নানুর, 10 অক্টোবর:গুটি কতক হিন্দু পরিবারের খুশির জন্য দুর্গোৎসবের আয়োজন করে গোটা মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম ৷ হাতে হাত লাগিয়ে পুজোর আয়োজন করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজন ৷ সম্প্রীতির এই অনন্য নজির নানুরের পাপুড়ি গ্রামে ৷ আজ থেকে 13 বছর আগে কাজল শেখের হাত ধরে এই সর্বজনীন পুজোর সূচনা হয়েছিল ৷ আজ যিনি বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি।
পাপুড়ি গ্রামের বাসিন্দা তথা শিক্ষক নূরুল হক বলেন, "এক সময় দেখতাম পুজো এলেই গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলি বাইরে যেত ঠাকুর দেখতে ৷ আমরাও বাইরেই যেতাম। তাই কাজল শেখ গ্রামে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন, যাতে সবাই এখানেই উৎসবে সামিল হতে পারেন ৷ হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে এই সম্প্রীতির পুজোয় মাতেন সকলে ৷ উৎসবের আয়োজনে আমরা-সহ সব মুসলমান ভাইরা হাত লাগান।"
দুর্গাপুজোয় মিশে যায় দুই সম্প্রদায় (ইটিভি ভারত) পাপুড়ি পুজো কমিটির সম্পাদক পরমেশ্বর ঘোষ বলেন, "এই গ্রামে কয়েকটি হিন্দু বাড়ি, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম ৷ পুজোয় যাতে কারও মন খারাপ না-হয় তাই কাজলকাকু এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। হিন্দু-মুসলমান সবাইকে ডেকে উনি কমিটি গঠন করেছিলেন ৷ গ্রামের সবাই না-থাকলে অল্প সংখ্যক হিন্দুদের পক্ষে দুর্গাপুজো করা সম্ভব ছিল না।"
একদা 'সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘর' হিসাবে পরিচিত ছিল বীরভূমের নানুর ৷ বিশেষ করে নানুরের পাপুড়ি গ্রাম মানে বোমা-বারুদের গ্রাম হিসাবে তুলে ধরা হত ৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই তকমা দূর হয়েছে ৷ শান্তির বাতাবরণ রয়েছে ৷ তবে এই পাপুড়ি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম। এখানে 5 শতাংশেরও কম হিন্দু পরিবার রয়েছে ৷ বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটি হিন্দু বাড়ি ৷ তাই পুজোর সময় এই হিন্দু পরিবারগুলি বাইরে চলে যেতেন। গ্রামটি কার্যত মনমরা হয়ে থাকত ৷ পরে কাজল শেখের উদ্যোগে 13 বছর আগে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল ৷
পাপুড়ি গ্রামের দুর্গা প্রতিমা (নিজস্ব ছবি) বর্তমানে তিনি বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি। পুজোর প্যান্ডেল থেকে লাইট লাগানো, সাজানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, সবেতেই হাত লাগান মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন ৷ বলতে গেলে তাঁদের আয়োজনেই এই গ্রামে দুর্গাপুজো হয় ৷ এতে রীতিমতো খুশি হিন্দু পরিবারগুলি ৷ আর পুজোর সময় কাউকে অন্য গ্রামে যেতে হয় না, যা সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়েছে।
এ নিয়ে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন, "এই গ্রামে দুর্গাপুজো হতো না। বেশিরভাগ বাসিন্দাই অন্য গ্রামে পুজো দেখতে যেতেন ৷ পুজোর দিনগুলি গ্রামে বিষণ্ণতা থাকত ৷ তাই আমরা হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে বসে এই পুজো শুরু করেছিলাম, যাতে কারও মন খারাপ না থাকে। পুজোর 4 দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া হয় ৷ হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলেই পাত পেরে খান ৷ এটাই আমাদের বাংলা।"