ব্যারাকপুর, 3 সেপ্টেম্বর: অভিনেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে নাট্যক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার' ফিরিয়ে দিতে চলেছেন প্রবীণ নাট্যকার চন্দন সেন ৷ নিজের সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবার তিনি ইমেইল মারফত সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি সচিবের কাছে জানিয়েছেন ৷ শুধু পুরস্কারই নয় ! পুরস্কারবাবদ নগদ অর্থও ফিরিয়ে দিতে চান তিনি ৷
কাঞ্চন মল্লিকের মন্তব্যে জেরে দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিলেন নাট্যকার চন্দন সেন (ইটিভি ভারত) আরজি করে নির্যাতিতার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় গণআন্দোলন চলছে রাজ্যজুড়ে ৷ নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদে নেমেছেন থিয়েটার থেকে টলি পাড়ার শিল্পী, কলা-কুশলীরা ৷ এই প্রতিবাদে সামিল হওয়া নিয়ে অভিনেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক বলেন, "শিল্পীরা কি তাঁদের পুরস্কার ফিরিয়ে দেবেন ?" তিনি কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকদের বেতন নেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ৷এই মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয় ৷ অভিনেতা-বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব হন টলিপাড়া ৷ কাঞ্চনের এই বিতর্কিত জেরেই তৃণমূল সরকারকে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন অশীতিপর শিল্পী নাট্যকার চন্দন সেন ৷ কাঞ্চন থিয়েটারেও অভিনয় করেছেন ৷
রবিবার বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সোমবার অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চনকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় ৷ তিনি তাঁর সহ-শিল্পীদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন ৷ এরপর সোমবার রাতে তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন ৷ তাতে বিতর্কে রাশ পড়েনি ৷ মঙ্গলবার সকালে নাট্যকার চন্দন সেন ঘোষণা করেন, রাজ্য সরকার তাঁকে নাট্যক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার’ দিয়েছিল ৷ 2017 সালে পাওয়া সেই পুরস্কার ফিরিয়ে দেবেন বলে জানান প্রবীণ নাট্যকার ৷
এই প্রসঙ্গে চন্দন সেন বলেন, "আমার পরিচিত নাট্যকর্মী, এখন তিনি বিধায়ক, কাঞ্চন মল্লিক ৷ তিনি বলছেন, যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের আগে পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে হবে ৷ এই কথাটা যখন তিনি বলছেন, আমি মনে করছি এটা তাঁর মন্তব্য নয়, সরকারেরই কথা ৷ রাত 12টা পর্যন্ত আমি যখন ঘুমোতে যাচ্ছি, তখনও দেখলাম, সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ৷ তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য, তাঁকে কোনও চাপ দেওয়া হয়েছে বলে জানি না ৷ ভোরবেলা উঠেই আমি অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে নাটককার হিসেবে যে সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছিলাম, তা ফেরত দেওয়ার জন্য সংস্কৃতি অধিকর্তার কাছে ইমেইল পাঠিয়েছি ৷" যদিও সেই ইমেলের উত্তর আসেনি, জানিয়েছেন প্রবীণ নাট্যকার ৷ এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে আরজি করে চিকিৎসকের উপর বর্বরোচিত অত্যাচারও রয়েছে, জানান চন্দন সেন ৷
এনিয়ে ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা উত্তম দাস বলেন, "চন্দন সেনকে দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার কাঞ্চন মল্লিক দেননি ৷ রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন ৷ কাঞ্চন মল্লিক বিধায়ক হলেও আমি মনে করি না তাঁর সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও ক্ষমতা আছে ৷ তাই কাঞ্চন মল্লিক কি বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না ৷"