নয়াদিল্লি, 12 ডিসেম্বর: এক দেশ এক নির্বাচন সংক্রান্ত বিলে সায় দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। একটি সূত্রের দাবি, চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই খসড়া প্রস্তাব পেশ করতে পারে সরকার পক্ষ। এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার বিলের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চাইছে। তাছাড়া বিলটিতে সংসদীয় কমিটিতেও পাঠানো হতে পারে বলে জানা গিয়েছে । পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য বিধানসভার স্পিকারদের সঙ্গেও কথা বলতে চাইছে সরকার। 'এক দেশ,এক নির্বাচন' লাগু করা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটির সুপারিশ সেপ্টেম্বর মাসে গ্রহণ করে সরকার।
কী কী সুপারিশ করেছিল কমিটি ?
সংবিধানের 82-এ ধারার সংশোধন
সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ঠিক হয়েছিল ভারতীয় সংবিধানের 82-এ ধারায় দুটি উপধারা যুক্ত করা হবে। নির্বাচনের দিন-তারিখ থেকে শুরু করে লোকসভা ও বিধানসভার মেয়াদ কবে শেষ হবে সেই সংক্রান্ত তথ্য এখানে বলা আছে । এমতাবস্থায় লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে করতে হলে সংবিধানের এই অংশে সংশোধনী আনতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
সংবিধানের 83 (2) ধারায় সংশোধন
নতুন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় আইনি ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে 83(2) ধারাতেও সংশোধন করা দরকার বলে অভিমত কমিটির। এছাড়া এখনেই 3 এবং 4 উপধারা যুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। লোকসভার সম্পূর্ণ মেয়াদ থেকে শুরু করে কীভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে সময়ের আগে লোকসভার মেয়াদ শেষ হতে পারে তার বিবরণ আছে এখানে। এর পরিবর্তন না হলে নতুন ব্যবস্থা কখনই কার্যকর হবে না।
রাজ্য সরকারের ভূমিকা
কমিটির সুপারিশে আরও বলা হয়েছিল, বিধানসভার সঙ্গে লোকসভা নির্বাচন করতে কমপক্ষে 50 শতাংশ রাজ্যকে সহমত দিতে হবে এমন কোনও মানে নেই। তবে কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে লোকসভা এবং বিধানসভার সঙ্গে পঞ্চায়েত এবং পুরসভার মতো স্থানীয় ভোটও করাবে তাহলে অবশ্য 50 শতাংশ রাজ্যকে সহমত পোষণ করতে হবে।
কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের কী হবে?
পাশাপাশি পুদুচেরি থেকে শুরু করে দিল্লি এবং জম্মু কাশ্মীরের মতো কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের বিধানসভাগুলিকে নতুন ব্যবস্থার মধ্যে আনার জন্যও সংবিধানে কয়েকটি সংশোধন করতে হবে। এই তিনটি বিধানসভার জন্য 1991 1963 এবং 2009 সালে তিনটি পৃথক আইন পেশ হয়েছিল । সেগুলিতেও বদল আনতে হবে ।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরল ইটিভি ভারত।
প্রতিবাদে সরব হয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, "কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু অসাংবিধানিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। এর মাধ্যমে বিরোধীদের বুলডোজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।" তাঁর পাশাশি আরও কয়েকজন বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সংসদে 'এক দেশ, এক নির্বাচন বিল' পেশ করার অনুমোদন দিয়েছে। এই অবাস্তব এবং গণতান্ত্রিক বিরোধী পদক্ষেপ দেশের মধ্যে থাকা আঞ্চলিক কণ্ঠস্বরকে মুছে ফেলবে । ফেডারেলিজমের অবক্ষয় ঘটাবে এবং শাসন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করবে।
এদিকে, পুরীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে অসমের মুখ্য়মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, "এক দেশ, এক নির্বাচন পদ্ধতি লাগু হওয়া উচিত । ওড়িশায় একযোগে নির্বাচন হয়েছিল। বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন একসঙ্গে না হওয়ায় উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা এক দেশ এক নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি।"