কলকাতা, 20 ফেব্রুয়ারি: রাজ্যের সংশোধনাগারে বন্দিদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । সেই বৈঠকের নির্যাস রিপোর্ট আকারে আগামী আট মার্চ পরবর্তী শুনানিতে আদালতে পেশ করতে হবে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে । মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ ।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, "এমন একটা অভিযোগের কী সামাজিক প্রভাব পড়তে পারে সেটা আমরা জানি । এটা মহিলাদের কালিমালিপ্ত করার চরম পথ । এমনিতেই তাঁরা অভিযুক্ত হয়ে জেলবন্দি । এই অবস্থায় এমন একটা অভিযোগ যদি সামনে আনা হয়, সেটা তাঁদের আরও বেশি কলঙ্কিত করতে পারে । এটা দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিদের আরও বেশি করে মাথায় রাখা জরুরি ।"
তারপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, এই মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করতে হবে রাজ্যকে । তার নির্যাস রিপোর্ট আকারে আট মার্চ পরবর্তী শুনানিতে আদালতে দিতে হবে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে । এই মামলায় যুক্ত আদালত বান্ধব আইনজীবী তাপসকুমার ভঞ্জ বলেন, "সব জেলে মহিলা বন্দিদের নিজেদের এনক্লোজারে যেতে হলে মূল গেট দিয়ে ঢুকে পুরুষ বন্দিদের সেলের সামনে দিয়ে অনেকটা রাস্তা যেতে হয় । রাতে কোর্ট থেকে নিয়ে যাওয়ার পর বন্দিরা ওই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় পুরুষ বন্দিরা হায়নার মতো আচরণ করে । নিয়মিত প্রেগনেন্সি টেস্ট করার ব্যবস্থা করা হোক ।" বিচারপতি বাগচি তখন বলেন, "একেবারেই না । কেউ স্বেচ্ছায় চাইলেন বা কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু করতে হল, সেটা আলাদা কথা । কিন্তু কোর্ট কোনওভাবে এমন টেস্ট করার ব্যাপারে অনুমতি দেবে না । কিছু সমস্যা আছে, আমরা সবটা মানছি । কিন্তু সেটা নিয়ে আলোচনা করুন । আপনার পরামর্শ দিন রাজ্যকে । পুরুষ ও মহিলা বন্দীদের আলাদা পথ করা যায় কি না ৷"
বিচারপতি আরও বলেন, রাজ্যকে সব পক্ষের সঙ্গে বসতে হবে । সেখানেই বাড়তি বন্দির ভিড়, মহিলা বন্দি, জেলে বন্দির মৃত্যু, জেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অসুস্থ বন্দিদের মুক্তি-সহ নানা বিষয়ে সহমতের ভিত্তিতে একটা রূপরেখা তৈরি করার পর আদালত প্রতিটি সমস্যা ধরে ধরে শুনানি করবে ।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেই রাজ্যের কারাদফতরের একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে এই মামলায় নিযুক্ত আদালত বান্ধব হাইকোর্টে জানান, রাজ্যের সংশোধনাগারে এই মুহূর্তে 196টি শিশুর জন্ম দিয়েছেন বন্দিরা । আদালত বান্ধব আইনজীবী আদালতের কাছে আর্জি জানান, অবিলম্বে মহিলা সেলে যেকোনও ধরনের পুরুষের প্রবেশ বন্ধ করা হোক । তাঁদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করুক আদালত । প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য তরেন এবং বিষয়টি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান ।
আরও পড়ুন: