কলকাতা, 4 অক্টোবর: দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর চলাফেরার ক্ষমতা ৷ তবে আঘাত হানতে পারেনি তাঁর অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ৷ সেজন্যই দু'হাতে ক্রাচ নিয়ে তিনি দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে ৷ রাত হোক বা ভোর দখল, মিছিলে অগ্রণী থেকেছেন ৷ আর এবার তিনি দুর্গাপুজোর মণ্ডপগুলিকে নারী সুরক্ষায় সচেতন হতে উৎসাহ দিচ্ছেন ৷ নিজ উদ্যোগে দিচ্ছেন পুরস্কার ৷
ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা সমিতকুমার দত্ত । পেশায় আইনজীবী ৷ দুর্ঘটনার পর জীবনটা বদলে গিয়েছিল ৷ প্রায় অচল হয়ে পড়ে দুটি পা ৷ চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আর কোনওদিনই তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন না । তবে তাঁর বাবা স্বর্গীয় অরুণকুমার দত্তের থেকে পাওয়া শিক্ষা ও আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি আবারও ফিরে এসেছেন জীবনের মূল স্রোতে । ক্রাচে ভর দিয়ে আগের মতোই যাবতীয় কাজকর্ম সামলান ৷ এভাবেই গত দেড় মাস ধরে পা মিলিয়েছেন আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ মিছিলে ৷
শুধুমাত্র আরজি করের ঘটনাই নয়, দেশে এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটছে, যা সামাজিক অবক্ষয়েরই পরিণতি বলে মনে করেন সমিতকুমার দত্ত । তাঁর কথায়, "আরজি কর নিয়ে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে । এর ফলে নারী সুরক্ষার বিষয়টি বহুল আলোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে । তবে দেখা যাচ্ছে যে, নারীদের সম্মান করার বিষয়টি সমাজ থেকে হারাতে বসেছে । তাই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারগুলিকে ৷"
নারীকে সুরক্ষা ও মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সমাজকে উৎসাহ দিতে তিনি বিশেষ পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন এবারের দুর্গাপুজোয় ৷ পুজো কমিটিগুলো মহিলা দর্শনার্থীদের সুরক্ষা ও সম্মানরক্ষায় কতটা ব্যবস্থা নিয়েছে, মণ্ডপগুলিকে কতটা মহিলাদের জন্য সুলভ করে তোলা হয়েছে, তার উপরেই নির্ভর করবে যে, কাকে দেওয়া হবে 'সর্বোত্তম তিলোত্তমা সম্মান' । একেবারে নিজ উদ্যোগেই পুজো কমিটিগুলোকে এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমিতকুমার দত্ত ৷ এই সম্মান তিনি তাঁর বাবাকে উৎসর্গ করছেন বলে জানিয়েছেন ৷
তিনি বলেন, নাগরিক এবং অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । ব্রেস্ট ফিডিং রুম থেকে শুরু করে মহিলাদের শৌচালয়ের ব্যবস্থা পুজো মণ্ডপে রয়েছে কি না, বয়স্ক মহিলাদের জন্য কী কী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, নিজে বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে এই সবদিক খতিয়ে দেখছেন তিনি ৷ পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যবহার কী রকম এই বিষয়টিও রাখা হবে পুরস্কার জয়ের মাপকাঠিতে ৷
বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন জুনিয়ার চিকিৎসক, মৃৎশিলী থেকে সাধারণ মানুষও । পুরস্কার জিতলে পুজো মণ্ডপগুলিকে স্মারক ও মানপত্র দেওয়া হবে । সমিতকুমার দত্ত জানিয়েছেন, অনেক আবেদন জমা পড়েছে ৷ বিচারকমণ্ডলী সবক'টি পুজো প্যান্ডেল ঘুরে দেখা শুরু করেছেন মহালয়ার দিন থেকেই । পুরস্কার প্রদান শুরু হবে ষষ্ঠী থেকে ।