বাদুড়িয়া, 22 নভেম্বর: বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়কের পর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়া অভিযোগে পোস্টার পড়ল ৷ এবার ঘটনাস্থল উত্তর 24 পরগনার বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর পঞ্চায়েত ৷ অভিযোগ, আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বুরহানুল মুকাদ্দিম ওরফে লিটনের বিরুদ্ধে 'কাটমানি' পোস্টার পড়েছে ৷ একইসঙ্গে, পোস্টারে দলীয় কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করা হয়েছে ৷
এই ঘটনার জেরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে শাসকদলের অন্দরেই ৷ প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার নেপথ্যে কি তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল ? এই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে পোস্টারের নীচে 'বসিরহাট জেলা তৃণমূল সম্মান রক্ষা কমিটি'র উল্লেখ থাকায় । যদিও, এই নামে কোনও কমিটি তাঁদের নেই বলে দাবি করেছে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ পালটা এর নেপথ্যে বিরোধী দলের চক্রান্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে ৷ যার জবাবও দিয়েছে গেরুয়া শিবির ৷ এই চাপানউতোরের জেরে সরগরম বসিরহাটের রাজনীতি ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, বাদুড়িয়ার রামচন্দ্রপুর এলাকায় বাড়ি তৃণমূল নেতা বুরহানুল মুক্কাদিমের ৷ লোকে তাঁকে চেনে লিটন নামে ৷ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকেই জেলা পরিষদের টিকিটে জিতে বুরহানুল শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ হন ৷ এলাকায় ডাকাবুকো নেতা হিসেবেই পরিচিত তিনি ৷ সেই লিটনের বিরুদ্ধেই 'কাটমানি' পোস্টার পড়েছে ৷ বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা দেখতে পান রামচন্দ্রপুরের অলিগলিতে ছেয়ে গিয়েছে একাধিক পোস্টার ৷
পোস্টারে অভিযোগ করা হয়েছে, "পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট বিলির নামে দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে তোলাবাজি করেছেন বুরহানুল মুক্কাদিম ৷ আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামেও ওই তৃণমূল নেতা কাটমানি নিয়েছেন দলীয় কর্মী এবং গ্রামবাসীদের কাছ থেকে ৷" দলীয় কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে ৷
দিন কয়েক আগে বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধেও 'সন্ধান চাই' বলে পোস্টার পড়েছিল হাসনাবাদের মুরারিশাতে ৷ সেই পোস্টারের নীচেও লেখা ছিল 'বসিরহাট জেলা তৃণমূল সম্মান রক্ষা কমিটি' ৷ সেই একই নামে এবার জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বুরহানুল মুক্কাদিম ওরফে লিটনের নামে পোস্টার বাদুড়িয়ায় ৷
এই বিষয়ে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বুরহানুল মুক্কাদিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয় ইটিভি ভারতের তরফে ৷ সব অভিযোগ খারিজ করে তিনি বলেন, "এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার ৷ সামনে দলের অনেক কর্মসূচি রয়েছে ৷ সেগুলিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি ৷" এমনকি ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, এসব নিয়ে খবর করার দরকার নেই ৷
কাটমানি পোস্টার ইস্যুতে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবিরে ৷ বসিরহাটের জেলা তৃণমূল নেতা কৌশিক দত্ত বলেন, "এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ৷ বুরহানুল মুক্কাদিম একজন শিক্ষিত মানুষ ৷ এলাকায় ওঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ৷ তাঁর ইমেজ কালিমালিপ্ত করতেই রাতের অন্ধকারে কেউ এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে ৷ আমরা দলীয় স্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি ৷ এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের কারও হাত নেই ৷"
যদিও, এর নেপথ্যে শাসকদলের গোষ্ঠী কোন্দলকেই দায়ী করেছেন বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ ৷ তাঁর কথায়, "শুধু লিটন কেন ? গোটা তৃণমূল দলটাই কাটমানি ও তোলাবাজিতে যুক্ত ৷ যে যেখান থেকে পারছে, সেখান থেকেই কাটমানি-তোলাবাজি করতে ব্যস্ত ৷ বিরোধীদের দিকে আঙুল না-তুলে, বরং তৃণমূল নেতৃত্ব নিজেদের দলের দিকে তাকিয়ে দেখুক ৷"