ETV Bharat / politics

নদী ভাঙন ও শিল্প নিয়ে ক্ষুব্ধ ভোটাররা, খগেন মুর্মুর 5 বছরের খতিয়ান

BJP's Khagen Murmu's Report Card: মালদা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র 2019 সালে কংগ্রেস থেকে বিজেপির দখলে যায় ৷ 84 হাজার 288 ভোটে জয়ী হন বিজেপির খগেন মুর্মু ৷ লোকসভার ভোটারদের একাধিক আশা ছিল সাংসদের কাছে ৷ তিনি তা পূরণ করতে পেরেছেন ? না পারলে, কেন সেই ব্যর্থতা ? খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷

Etv Bharat
Etv Bharat
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 11, 2024, 12:13 PM IST

Updated : Mar 11, 2024, 12:21 PM IST

মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মুর 5 বছরের খতিয়ান

মালদা, 11 মার্চ: প্রথম দফায় রাজ্যের 20টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি ৷ ঘোষিত প্রার্থীদের তালিকায় উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে নাম রয়েছে বিদায়ী সাংসদ খগেন মুর্মুর ৷ 5 বছর ধরে তিনিই এই কেন্দ্রের সাংসদ ৷ তাই এই কেন্দ্রের ভোটাররা এখন এই সময়ের মধ্যে পাওয়া আর না-পাওয়ার হিসেব তৈরি করতে বসে পড়েছে ৷ পাঁচ বছরে সাংসদ মানুষের কথা কতটা সংসদে তুলে ধরেছেন ? সাংসদ তহবিলের টাকা তিনি কী কী উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করেছেন ? মানুষের চাহিদা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন ? সেই সব তথ্য জানার চেষ্টা করেছে ইটিভি ভারত ৷

সাংসদের দাবি অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তাঁর সাংসদ তহবিলে মোটি 17 কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে ৷ যেখানে করোনার জন্য 2020-21 অর্থবর্ষে সাংসদরা টাকা পাননি ৷ কিন্তু, তাঁর কাজের খতিয়ানে পাওয়ার থেকে না-পাওয়ার তালিকাটাই সবচেয়ে বেশি ৷ সাংসদ খগেন মুর্মুর কাজের মধ্যে রয়েছে:

চাঁচল ও মালদায় দু’টি উন্নত মানের অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছে ৷

প্রতিটি এলাকায় সোলার ওয়াটার সোর্স দেওয়া ৷

একাধিক সোলার লাইট, মিনি হাইমাস্ট ল্যাম্প টাওয়ার করা হয়েছে ৷

রাস্তাঘাট-সহ আরও কিছু ছোটখাটো স্কিম কার্যকর ৷

সাংসদের দাবি, প্রকল্প অনুমোদন এতে একটু দেরি হয়েছে ৷ কারণ, এখন আগের মতো জেলাশাসকের মাধ্যমে স্কিম জমা দেওয়া যায় না ৷ পোর্টালে আপলোড করতে হয় ৷ দিল্লি থেকে সেই স্কিম অনুমোদিত হয়ে আসে ৷ তারপরেও আরও কিছু প্রক্রিয়া থাকে ৷ তবে, সাংসদ কোটার টাকায় কাজ করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন খগেন মুর্মু ৷ আর সেই কারণে, বেশ কিছু স্কিম ঝুলে রয়েছে ৷

তবে, না পাওয়ার তালিকাটা সবচেয়ে বড় ৷ মূলত, কেন্দ্রে অধীনে থাকা বিভিন্ন বিষয়ের সমস্যার সমাধান খগেন মুর্মু করতে পারেননি বলে অভিযোগ ৷ সেগুলি হল-

গঙ্গার ভাঙনের সমস্যায় কোনও সমাধান 5 বছরে করতে পারেননি সাংসদ ৷

মালদা উত্তর লোকসভা থেকে প্রচুর লোকজন বাইরের রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ৷ তার সমাধান করতে পারেননি খগেন মুর্মু ৷

গাজোলের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধায় পীরগঞ্জ ঘাটে সেতুর দাবি মেটাতে পারেননি ৷

মালদার আম শিল্পের উন্নতিতে কোনও উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ ৷

জেলায় শিল্পতালুক ও কলকারখানা তৈরির দাবিও মেটাতে ব্যর্থ মালদা উত্তরের সাংসদ ৷

মালদার পাট চাষ ও পাট শিল্পের উন্নতিতেও কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি ৷

উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের ভাঙন প্রবণ রতুয়া এলাকার বাসিন্দা সহিদুর রহমানকে এনিয়ে ধরা হলে তিনি বলেন, "খগেন মুর্মু গত পাঁচ বছর আমাদের সাংসদ ছিলেন ৷ কিন্তু, আমাদের এলাকায় তাঁর কোনও কাজ দেখতে পাচ্ছি না ৷ আমাদের মূল সমস্যা গঙ্গা ভাঙন ৷ এখন এটা জাতীয় সমস্যা ৷ ভাঙন নিয়ে সংসদে তিনি কোনও দিন কথা বলেছেন কি না, তা জানি না ৷ তবে, গত বন্যার সময় টিভিতে একবার তাঁর ছবি দেখেছি ৷ আমাদের অন্যতম অর্থকরি ফসল পাট ৷ কিন্তু, আমরা পাটের দাম পাই না ৷ সঠিক দাম না-পেয়ে অনেক পাটচাষি আত্মহত্যা করেছে ৷ ধানের মতো সরকারি সহায়ক মূল্যে পাট কেনা হলে আমরা একটু বাঁচতাম ৷ আমের জন্যও তিনি কিছু করেননি ৷ অথচ এসব নিয়ে তিনি সংসদে আবেদন করতে পারতেন ৷ এখানে শিল্প গড়তেও তাঁকে উদ্যোগী হতে হত ৷"

পুরাতন মালদার নরহাট্টা পঞ্চায়েতের বুধিয়া গ্রামের বাসিন্দা সফিকুল আলম বলছেন, "কিছু পাওয়া তো দূরের কথা, আমরা এখনও পর্যন্ত সাংসদকে দেখতেই পাইনি ৷ দেখতে পেলে তো তাঁর কাছে আবেদন করব! এখানে সাংসদ কোটার টাকায় কোনও কাজই হয়নি ৷ সারা দেশে জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম ৷ এখানকার শ্রমিকরা বাইরে কাজে গিয়ে মারা যাচ্ছে ৷ মালদা আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ৷ সাংসদ তো এখানে আম নিয়েই কোনও শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নিতে পারতেন ৷ তাহলে অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে কাজ পেত ৷ গঙ্গা ভাঙন গোটা জেলারই মূল সমস্যা ৷ একসময় মালদা শহরও গঙ্গায় তলিয়ে যাবে ৷ উত্তর মালদার পীরগঞ্জ ঘাটে একটি সেতু হলে গাজোলের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধে হত ৷ সাংসদ সেই ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নিতে পারতেন ৷ সিপিআইএমে থাকাকালীন তিনি বিধায়ক ছিলেন, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন ৷ তখন মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভালো ছিল ৷ বিজেপি সাংসদ হওয়ার পর তাঁর আগের মূল্যবোধ আর কিছু নেই ৷ শুধু ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়েই পার পেতে চাইছেন ৷"

এক ভোটার কাঞ্চন ভাইপাল অবশ্য সাংসদের কাজে কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট ৷ তিনি বলেন, "খগেনবাবু কিছু কাজ করেছেন ঠিক, কিন্তু যতটা তাঁর কাছে আশা করেছিলাম, তিনি তা পূরণ করতে পারেননি ৷ আমরা ভেবেছিলাম, কেন্দ্রীয় সরকারি দলের সাংসদ হিসাবে তিনি গঙ্গা ভাঙন, বেকার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন ৷ শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নেননি ৷ হয়তো করোনার জন্য তিনি আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি ৷ আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা এই জেলায় শিল্প স্থাপন করা ৷ তবে সাংসদ আমাদের কথা সংসদে তুলে ধরেন ৷"

পুরাতন মালদার মিন্টু দত্ত বলছেন, "সাংসদ এই পাঁচ বছরে কাজের কাজ তেমন কিছু করেননি ৷ মালদার মূল সমস্যা নদী ভাঙন ৷ এটা অনেক পুরোনো সমস্যা ৷ কিন্তু ভাঙন রোধে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি পূরণ করতে পারেননি ৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কিছু করার কথা বলেছিলেন সাংসদ৷ ৷ কিন্তু, আমরা তাঁকে সেই উদ্যোগ নিতে দেখিনি ৷ মন্দির আলাদা জিনিস ৷ এসব মানুষের জীবনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে না ৷ এসব উন্নয়ন বলে আমি মনে করি না ৷ মানুষের জীবনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে আমরা সাংসদকে তেমন কিছু করতে দেখিনি ৷"

তৃণমূলের মালদা জেলার সহ-সভাপতি দুলাল সরকার বলছেন, "উত্তর মালদার সাংসদ আগে সিপিআইএম করতেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর নামাবলি পালটে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন ৷ উত্তর মালদার মানুষ বরকতদার পর তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন ৷ সাড়ে চার বছরে তিনি কোনও কাজই করেননি ৷ তিনি সংসদে গিয়েছেন কিনা তাও জানি না ৷ তিনি বলতেন, চাইলেই তিনি নাকি 100 দিনের কাজের টাকা পাইয়ে দেবেন ৷ অন্যান্য প্রকল্পের টাকাও নিয়ে আসতে পারবেন ৷ কিছুই করেননি ৷ এরা শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে, জনগণের নয় ৷ ফলে এই সাংসদের রিপোর্ট কার্ড শূন্য ছাড়া কিছু হতে পারে না ৷ শুধু দিল্লি ঘোরার জন্য সাংসদ হয়েছেন তিনি ৷ উত্তর মালদায় প্রচুর সমস্যা ৷ একটি সমস্যারও সমাধান করতে পারেননি ৷ নদী ভাঙন এলাকায় কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি দলকেও আনতে পারেননি ৷ একশো দিনের টাকা না পেয়ে আত্মঘাতী শ্রমিকদের পরিবারের পাশে তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়নি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. রেল পরিবহণে বিকাশ, আক্ষেপ শিল্পতালুক নিয়ে; জয়ন্ত রায়ের 5 বছরের খতিয়ান
  2. তহবিলের অধিকাংশ অর্থ খরচই হয়নি, একনজরে রাজু বিস্তার কাজের খতিয়ান
  3. হুগলির উন্নয়নে 17 কোটি খরচের দাবি লকেটের, দেখা মেলে না বলে ক্ষোভ উগরে দিলেন স্থানীয়রা

মালদা উত্তরের সাংসদ খগেন মুর্মুর 5 বছরের খতিয়ান

মালদা, 11 মার্চ: প্রথম দফায় রাজ্যের 20টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি ৷ ঘোষিত প্রার্থীদের তালিকায় উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে নাম রয়েছে বিদায়ী সাংসদ খগেন মুর্মুর ৷ 5 বছর ধরে তিনিই এই কেন্দ্রের সাংসদ ৷ তাই এই কেন্দ্রের ভোটাররা এখন এই সময়ের মধ্যে পাওয়া আর না-পাওয়ার হিসেব তৈরি করতে বসে পড়েছে ৷ পাঁচ বছরে সাংসদ মানুষের কথা কতটা সংসদে তুলে ধরেছেন ? সাংসদ তহবিলের টাকা তিনি কী কী উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করেছেন ? মানুষের চাহিদা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন ? সেই সব তথ্য জানার চেষ্টা করেছে ইটিভি ভারত ৷

সাংসদের দাবি অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তাঁর সাংসদ তহবিলে মোটি 17 কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে ৷ যেখানে করোনার জন্য 2020-21 অর্থবর্ষে সাংসদরা টাকা পাননি ৷ কিন্তু, তাঁর কাজের খতিয়ানে পাওয়ার থেকে না-পাওয়ার তালিকাটাই সবচেয়ে বেশি ৷ সাংসদ খগেন মুর্মুর কাজের মধ্যে রয়েছে:

চাঁচল ও মালদায় দু’টি উন্নত মানের অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছে ৷

প্রতিটি এলাকায় সোলার ওয়াটার সোর্স দেওয়া ৷

একাধিক সোলার লাইট, মিনি হাইমাস্ট ল্যাম্প টাওয়ার করা হয়েছে ৷

রাস্তাঘাট-সহ আরও কিছু ছোটখাটো স্কিম কার্যকর ৷

সাংসদের দাবি, প্রকল্প অনুমোদন এতে একটু দেরি হয়েছে ৷ কারণ, এখন আগের মতো জেলাশাসকের মাধ্যমে স্কিম জমা দেওয়া যায় না ৷ পোর্টালে আপলোড করতে হয় ৷ দিল্লি থেকে সেই স্কিম অনুমোদিত হয়ে আসে ৷ তারপরেও আরও কিছু প্রক্রিয়া থাকে ৷ তবে, সাংসদ কোটার টাকায় কাজ করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন খগেন মুর্মু ৷ আর সেই কারণে, বেশ কিছু স্কিম ঝুলে রয়েছে ৷

তবে, না পাওয়ার তালিকাটা সবচেয়ে বড় ৷ মূলত, কেন্দ্রে অধীনে থাকা বিভিন্ন বিষয়ের সমস্যার সমাধান খগেন মুর্মু করতে পারেননি বলে অভিযোগ ৷ সেগুলি হল-

গঙ্গার ভাঙনের সমস্যায় কোনও সমাধান 5 বছরে করতে পারেননি সাংসদ ৷

মালদা উত্তর লোকসভা থেকে প্রচুর লোকজন বাইরের রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন ৷ তার সমাধান করতে পারেননি খগেন মুর্মু ৷

গাজোলের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধায় পীরগঞ্জ ঘাটে সেতুর দাবি মেটাতে পারেননি ৷

মালদার আম শিল্পের উন্নতিতে কোনও উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ ৷

জেলায় শিল্পতালুক ও কলকারখানা তৈরির দাবিও মেটাতে ব্যর্থ মালদা উত্তরের সাংসদ ৷

মালদার পাট চাষ ও পাট শিল্পের উন্নতিতেও কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি ৷

উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের ভাঙন প্রবণ রতুয়া এলাকার বাসিন্দা সহিদুর রহমানকে এনিয়ে ধরা হলে তিনি বলেন, "খগেন মুর্মু গত পাঁচ বছর আমাদের সাংসদ ছিলেন ৷ কিন্তু, আমাদের এলাকায় তাঁর কোনও কাজ দেখতে পাচ্ছি না ৷ আমাদের মূল সমস্যা গঙ্গা ভাঙন ৷ এখন এটা জাতীয় সমস্যা ৷ ভাঙন নিয়ে সংসদে তিনি কোনও দিন কথা বলেছেন কি না, তা জানি না ৷ তবে, গত বন্যার সময় টিভিতে একবার তাঁর ছবি দেখেছি ৷ আমাদের অন্যতম অর্থকরি ফসল পাট ৷ কিন্তু, আমরা পাটের দাম পাই না ৷ সঠিক দাম না-পেয়ে অনেক পাটচাষি আত্মহত্যা করেছে ৷ ধানের মতো সরকারি সহায়ক মূল্যে পাট কেনা হলে আমরা একটু বাঁচতাম ৷ আমের জন্যও তিনি কিছু করেননি ৷ অথচ এসব নিয়ে তিনি সংসদে আবেদন করতে পারতেন ৷ এখানে শিল্প গড়তেও তাঁকে উদ্যোগী হতে হত ৷"

পুরাতন মালদার নরহাট্টা পঞ্চায়েতের বুধিয়া গ্রামের বাসিন্দা সফিকুল আলম বলছেন, "কিছু পাওয়া তো দূরের কথা, আমরা এখনও পর্যন্ত সাংসদকে দেখতেই পাইনি ৷ দেখতে পেলে তো তাঁর কাছে আবেদন করব! এখানে সাংসদ কোটার টাকায় কোনও কাজই হয়নি ৷ সারা দেশে জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দাম ৷ এখানকার শ্রমিকরা বাইরে কাজে গিয়ে মারা যাচ্ছে ৷ মালদা আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ৷ সাংসদ তো এখানে আম নিয়েই কোনও শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নিতে পারতেন ৷ তাহলে অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে কাজ পেত ৷ গঙ্গা ভাঙন গোটা জেলারই মূল সমস্যা ৷ একসময় মালদা শহরও গঙ্গায় তলিয়ে যাবে ৷ উত্তর মালদার পীরগঞ্জ ঘাটে একটি সেতু হলে গাজোলের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধে হত ৷ সাংসদ সেই ব্রিজ নির্মাণে উদ্যোগ নিতে পারতেন ৷ সিপিআইএমে থাকাকালীন তিনি বিধায়ক ছিলেন, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন ৷ তখন মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভালো ছিল ৷ বিজেপি সাংসদ হওয়ার পর তাঁর আগের মূল্যবোধ আর কিছু নেই ৷ শুধু ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়েই পার পেতে চাইছেন ৷"

এক ভোটার কাঞ্চন ভাইপাল অবশ্য সাংসদের কাজে কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট ৷ তিনি বলেন, "খগেনবাবু কিছু কাজ করেছেন ঠিক, কিন্তু যতটা তাঁর কাছে আশা করেছিলাম, তিনি তা পূরণ করতে পারেননি ৷ আমরা ভেবেছিলাম, কেন্দ্রীয় সরকারি দলের সাংসদ হিসাবে তিনি গঙ্গা ভাঙন, বেকার সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন ৷ শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নেননি ৷ হয়তো করোনার জন্য তিনি আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি ৷ আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা এই জেলায় শিল্প স্থাপন করা ৷ তবে সাংসদ আমাদের কথা সংসদে তুলে ধরেন ৷"

পুরাতন মালদার মিন্টু দত্ত বলছেন, "সাংসদ এই পাঁচ বছরে কাজের কাজ তেমন কিছু করেননি ৷ মালদার মূল সমস্যা নদী ভাঙন ৷ এটা অনেক পুরোনো সমস্যা ৷ কিন্তু ভাঙন রোধে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি পূরণ করতে পারেননি ৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কিছু করার কথা বলেছিলেন সাংসদ৷ ৷ কিন্তু, আমরা তাঁকে সেই উদ্যোগ নিতে দেখিনি ৷ মন্দির আলাদা জিনিস ৷ এসব মানুষের জীবনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে না ৷ এসব উন্নয়ন বলে আমি মনে করি না ৷ মানুষের জীবনের মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে আমরা সাংসদকে তেমন কিছু করতে দেখিনি ৷"

তৃণমূলের মালদা জেলার সহ-সভাপতি দুলাল সরকার বলছেন, "উত্তর মালদার সাংসদ আগে সিপিআইএম করতেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর নামাবলি পালটে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন ৷ উত্তর মালদার মানুষ বরকতদার পর তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন ৷ সাড়ে চার বছরে তিনি কোনও কাজই করেননি ৷ তিনি সংসদে গিয়েছেন কিনা তাও জানি না ৷ তিনি বলতেন, চাইলেই তিনি নাকি 100 দিনের কাজের টাকা পাইয়ে দেবেন ৷ অন্যান্য প্রকল্পের টাকাও নিয়ে আসতে পারবেন ৷ কিছুই করেননি ৷ এরা শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে, জনগণের নয় ৷ ফলে এই সাংসদের রিপোর্ট কার্ড শূন্য ছাড়া কিছু হতে পারে না ৷ শুধু দিল্লি ঘোরার জন্য সাংসদ হয়েছেন তিনি ৷ উত্তর মালদায় প্রচুর সমস্যা ৷ একটি সমস্যারও সমাধান করতে পারেননি ৷ নদী ভাঙন এলাকায় কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি দলকেও আনতে পারেননি ৷ একশো দিনের টাকা না পেয়ে আত্মঘাতী শ্রমিকদের পরিবারের পাশে তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়নি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. রেল পরিবহণে বিকাশ, আক্ষেপ শিল্পতালুক নিয়ে; জয়ন্ত রায়ের 5 বছরের খতিয়ান
  2. তহবিলের অধিকাংশ অর্থ খরচই হয়নি, একনজরে রাজু বিস্তার কাজের খতিয়ান
  3. হুগলির উন্নয়নে 17 কোটি খরচের দাবি লকেটের, দেখা মেলে না বলে ক্ষোভ উগরে দিলেন স্থানীয়রা
Last Updated : Mar 11, 2024, 12:21 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.