কলকাতা, 16 নভেম্বর: এযেন ব্রাত্যজনের রুদ্ধ সঙ্গীতের মুক্ত হওয়ার মরিয়া চেষ্টা । ওদের স্বপ্ন ফুটবলকে সঙ্গী করে জীবনের রাজপথে নিজেদের উত্তরণ । ইসরাফিল দেওয়ান, রাজু মাণ্ডি, চাকু মাণ্ডি, তারক হেমব্রম, আদিত্য পাত্র, শংকর রায়, নরহরি শ্রেষ্ঠারা ফুটবলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে । প্রতিভা থাকলেও ফু্টবলের অভিজাত শ্রেণিতে ব্রাত্য । বাংলার জার্সিতে লড়াই করে ওরা ফুটবলের প্রথম শ্রেণির নজর টানতে চায় । তাই সন্তোষ ট্রফির সাফল্য ওদের কাছে স্বপ্নপূরণের পথ । যে পথের পথপ্রদর্শক সঞ্জয় সেন, বাংলা দলের প্রশিক্ষক ।
শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে ঝাড়খণ্ড ম্যাচ দিয়ে এবারের সন্তোষ ট্রফির অভিযান শুরু করছে বাংলা । চার দলের প্রাথমিক পর্ব । অর্থাৎ তিন ম্যাচের ফলাফলে মূল পর্বের দরজা খুলবে । অতীতে সন্তোষ ট্রফি মানেই বাংলার একাধিপত্য । দল যেন যেতই ট্রফিটা নিয়ে আসার জন্য । খেলাগুলো যেন ছিল নিছকই আনুষ্ঠানিকতা । সন্তোষ ট্রফির সেই জৌলুশ আর নেই । ক্লাব নির্ভর দেশের ফুটবলে রাজ্য সেরার লড়াই শুধুই আয়োজনের জন্য আয়োজন । তাই গত কয়েকবছরের বাংলার ব্যর্থতা ঘিরে কটাক্ষ ছুঁড়তে দ্বিধা করে না ক্লাবগুলো ।
ফুটবল জগতের এই অবজ্ঞাই যেন সঞ্জয় সেনের দলের ছেলেদের মোটিভেশন । প্রথম ম্যাচ ঝাড়খণ্ডই শুধু নয় সোমবার এবং বুধবার উত্তরপ্রদেশ ও বিহার ম্যাচও নিজেদের প্রমাণ করার । গত তিন দিন কল্যাণী স্টেডিয়ামে দল নিয়ে আবাসিক শিবির করেছেন সঞ্জয় সেন । যদিও ঝাড়াই বাছাইয়ের কাজ আরও কিছুদিন আগে থেকে শুরু করেছিলেন ।
আই লিগ জয়ী কোচ সাফল্যের স্বাদ জানেন । ব্যর্থতার তিক্ততাও জানা । তবে সন্তোষ ট্রফি অভিযানে কোনও নেতিবাচক ভাবনাকে সাজঘরে স্থান দিতে চান না । সঞ্জয় সেন বলছেন, “দলের প্রস্তুতিতে আমি খুশি । ফুটবলারদের মধ্যে তাগিদটা দেখতে পাচ্ছি । তবে মুখে বললেই তো হবে না, কাজে করেও দেখাতে হবে । মাঠে নেমে পারফরম্যান্স করলেই ছবিটা বদলাবে ।”
কোচ বলেন, “চার দলের প্রতিযোগিতা । প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিপক্ষকে আমি কখনই হালকাভাবে নিই না । কারণ খেলা শুরুর আগে স্কোরবোর্ড দু’দলের জন্য শূন্য থাকে । তাই জেতার জন্য ঝাঁপাব বলতে পারি । আর জিততে পারলে পরের দু’টো ম্যাচে সুবিধা হবে ৷”
জাতীয় দল থেকে বাঙালি ফুটবলারের হারিয়ে যাওয়া নিয়ে হা-হুতাশ চলছে । সঞ্জয় সেন সেদিকে কান দিতে নারাজ । বাঙালি ফুটবলার হারিয়ে গিয়েছে তা বিশ্বাস করেন না । তাই ছবিটা বদলের জন্য সন্তোষ ট্রফিকে কাজে লাগাতে চান । প্রথম ম্যাচে খাতায়-কলম এবং কৌলিন্যে বাংলা এগিয়ে । কিন্তু তা দিয়ে তো জয়ের কড়ি যোগাড় হবে না । মাঠে খেলেই জয় ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হবে । ওদের দলে তথাকথিত বড় দলে খেলা ফুটবলারের সংখ্যা কম । বড় দলের যে কজন আছেন, তারাও নিজ দলে ব্রাত্য । তাই সমগ্র বাংলা দলের কাছে সন্তোষ ট্রফির এই পর্ব প্রমাণ করার মঞ্চ । ব্রাত্যজনের রুদ্ধতা শেষ হওয়ার লড়াই ।