ETV Bharat / opinion

এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের আগে সংকটে পাকিস্তান

15-16 অক্টোবরে পাকিস্তানে হবে এসসিও শীর্ষ সম্মেলন ৷ তার আগে জঙ্গি হামলা হয়েছে করাচিতে ৷ এই হামলায় অস্বস্তিতে পাকিস্তান ৷

author img

By Major General Harsha Kakar

Published : 2 hours ago

Terror Attack in Karachi
করাচি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ (এপি)

নয়াদিল্লি, 14 অক্টোবর: পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে করাচিতে ৷ সেখানে নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিত জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিনা ইঞ্জিনিয়রদের পরিবহণকারী একটি কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা হয় ৷ সেই হামলায় তিনজন নিহত হন ও অনেকে আহত হন ৷ নিহতদের মধ্যে দু’জন চিনের নাগরিক ৷ আহতদের মধ্যেও একজন চিনা ছিলেন ৷

পাকিস্তানে আগামী 15-16 অক্টোবর বসতে চলেছে এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির শীর্ষনেতাদের সম্মেলন ৷ পাকিস্তান এখন সেই বৈঠকের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৷ সেই সময়ই ঘটে গেল এই বিস্ফোরণ ৷ স্বাভাবিকভাবে করাচি বিমানবন্দরে এই জঙ্গি হামলা পাকিস্তানের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে ৷ এর পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আর বিমানবন্দরটি সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে ৷

ঘটনা হল, জঙ্গিরা নিরাপদ এলাকায় ঢুকে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে ৷ এই ঘটনায় বিব্রত পাকিস্তান ৷ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ৷ তারা জানিয়েছে যে তাদের মাজিদ ব্রিগেড এই হামলার নেপথ্যে ছিল ।

পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে বলেছিল যে ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ হয়েছে ৷ পরে সেই তথ্য সংশোধন করা হয় চিনা দূতাবাসের তরফে ৷ তারা এটাকে আত্মঘাতী হামলা বলে ঘোষণা করে । ইসলামাবাদের চিনা দূতাবাসের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় ৷ সেখানে উল্লেখ করা হয় কনভয়ে 'পোর্ট কাসিম ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের চিনা কর্মীরা ছিলেন ৷’

এই সংস্থার সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রক ঋণের বিষয়টিকে রিপ্রোফাইলিং করার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ ইসলামাবাদের চিনা দূতাবাস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে দাবি করেছে যে পাকিস্তান ‘হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবে, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেবে এবং পাকিস্তানে চিনা নাগরিক, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।’

পাকিস্তান সরকার এতটাই অস্বস্তিতে পড়েছে যে ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ শোক জানাতে চিনা দূতাবাসে গিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রদূতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন ।

দ্য চাইনিজ ডেইলি একটি সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছে, ‘চিন ও পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করা । পাকিস্তানে সিপিইসি প্রকল্পে জঙ্গিরা যখন হামলা চালায়, তখন চিন বিরোধী শক্তিগুলি যা অনুভব করে, তা হল শাডেনফ্রয়ডা (অন্যের দুর্দশায় আনন্দ পাওয়া) ।’

চিন আবারও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নিজেদের বাহিনী মোতায়েন করতে হবে । এই ধরনের মোতায়েন পাকিস্তানের জন্য অপমানজনক হবে । পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে জঙ্গি হামলা অব্যাহত রয়েছে । প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, জঙ্গি ও জনগণের মৃত্যুর খবর আসছে । এসব এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও রয়েছে ।

একই সঙ্গে, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে ৷ তাই পাক সেনাবাহিনীকে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ইসলামাবাদকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদ এবং আশেপাশের অঞ্চলে জমায়েত বন্ধ রাখতে 144 ধারা জারি করেছে ।

পাক নেতৃত্ব সঠিকভাবে উল্লেখ করেছে যে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং পিটিআই-এর বিক্ষোভ, যার বেশিরভাগই হিংসাত্মক, এগুলি করা হচ্ছে এসসিও দেশগুলির সামনে বর্তমান সরকারকে অপদস্থ করার জন্য । তবে পিটিআই-ও নাছোড় ৷ তারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে ৷ তাই তারা 15 অক্টোবর ইসলামাবাদে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে মিল রেখে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে ৷

পিটিআই-এর মধ্যে এমন হতাশা যে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা মহম্মদ আলি সইফ ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে তাঁদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । পরে অবশ্য তা অস্বীকার করা হয় ।

শেহবাজ শরিফ, যিনি এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পাশে চিনের প্রতিনিধিত্বকারী চিনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য, তাঁকে তার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষার জন্য কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হবে । রাশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া-সহ অন্যান্য দেশগুলি পাকিস্তানে বিনিয়োগ করতে দ্বিধাবোধ করবে ।

তাছাড়া, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পে নিযুক্ত চিনা ইঞ্জিনিয়রদের উপর এটা প্রথম হামলা নয় । চলতি বছরের মার্চে চিনা আর্থিক সাহায্যে তৈরি হওয়া দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আত্মঘাতী হামলা হয় ৷ সেই হামলায় পাঁচজন চিনা নাগরিক ও তাঁদের চালক নিহত হন । মে মাসে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেজিং সফর করেন ৷ সেই সময় তাঁরা মার্চে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দেন ।

11 জনের মতো নিরপরাধকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং দায় স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছিল । পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় যখনই চিনা নাগরিক নিহত হয়েছেন, তারা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে । এবার চাহিদা কতটা হবে জানা নেই । উপরন্তু, পাকিস্তান সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে না-পারলে চিন প্রকল্পের গতি কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ।

বেলুচরা সিপিইসি মানতে পারছে না ৷ কারণ, এই প্রকল্পের জেরে তাদের ভূখণ্ডে দখল হয়ে যাচ্ছে ৷ চিনাদের কাছে গ্বদর হস্তান্তরের বিরুদ্ধে তারা নিয়মিত প্রতিবাদ করেছে ৷ কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছে । সরকার তাদের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি নয় । সম্ভবত, আসন্ন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের কারণে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সরাসরি ভারতীয় র-কে দোষারোপ করেনি ।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল উল্লেখ করেছেন, 'কোনও সন্দেহ নেই যে করাচিতে সন্ত্রাসবাদ এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদের আহ্বান একই রকম ।' তিনি আরও জানান যে ‘লেখক’ একজনই ৷ একদিকে জঙ্গিদের ব্যবহার করে বিস্ফোরণ করা হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, অরাজকতা ছড়াতে এবং পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য পিটিআই-কে ব্যবহার করা হচ্ছে ।

পাকিস্তান সচেতন যে এই মুহূর্তে যেকোনও অযৌক্তিক বক্তব্য ভারতের বিদেশমন্ত্রীর ইসলামাবাদ সফরকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে । অনেক নিরপরাধকে গ্রেফতার করা হলে এবং তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হলে অভিযোগ উঠে আসবে ৷ তাই সবই হবে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পর ।

নানা হুমকির মুখে পড়ে পাকিস্তান ভেঙে পড়ছে । পিটিআই রাজনৈতিক পরিবর্তন, ইমরান খানের মুক্তি এবং বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্য সেনাপ্রধানকে দায়ী করার দাবি জানিয়েছে । তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকটের পরিস্থিতিকে সামনে এনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যবহার করতে প্রস্তুত ।

টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) খাইবার পাখতুনখোয়াকে শরিয়া আইনের আওতায় আনতে চায় । বেলুচরা পাকিস্তানের অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি চায় ৷ তাই তাদের জমিতে সিপিইসি নির্মাণকারী চিনাদের নিশানা করছে ৷ টিটিপি এবং বেলুচ শুধুমাত্র তাদের অঞ্চলেই সক্রিয় নয়, বরং দেশের গভীরে অনুপ্রবেশ করেছে ৷ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে ।

রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর আন্দোলন এবং হিংসা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে ৷ বিশেষ করে নগদ অর্থের সংকটে থাকা পাকিস্তানের পক্ষে এই পরিস্থিতিকে চলতে দেওয়া কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে । তাদের সরকারি ব্যবস্থা মূলত পিটিআই ও ওই দলের সঙ্গে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার দিকে বেশি নজর দিয়েছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগও ৷ যার ফলে বর্তমান হাইব্রিড সরকারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হয়েছে, যারা ইমরানকে অবমাননার দায়ে ধরে রেখেছেন ৷

পাকিস্তান নেতৃত্ব সচেতন যে বর্তমান বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নিতে পারে ৷ বিশেষ করে অর্থনীতি যখন নিম্নমুখী, তখন বাংলাদেশের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, তাই তাদের অবশ্যই এটাকে যেকোনও মূল্যে দমন করতে হবে । তারা আরও সচেতন যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ইমরানকে সমর্থন করে ৷ তাই সাবধানে পদক্ষেপ করা দরকার ।

ইমরান আপাতত কারাগারের অন্তরালে রয়েছেন ৷ তিনি জানেন যে কারাগারের অন্তরালে থাকাটাই ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁর সেরা বাজি । ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোর এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়ে বাইরের প্রদেশগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে । এটা টিটিপি এবং বেলুচদের পুনরায় উত্থানের সুযোগ দিয়েছে । যেহেতু এসসিও সম্মেলন দোরগোড়ায় হাজির, তাই পাকিস্তান রাজধানীতে বা তার কাছাকাছি এলাকায় জঙ্গি হামলা ঘটতে দেবে না ৷

আসন্ন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তান আঞ্চলিকভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে ৷ সন্ত্রাসবাদকে ঠেকিয়ে রেখে সেদেশের রাজনৈতিক শ্রেণীর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার এটাই সেরা সময় । তবে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান । বিশ্ব একটি অস্থিতিশীল পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষ করবে, যারা অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে কাজ করার পরিবর্তে, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অসন্তোষ, চরমপন্থী মতাদর্শ এবং হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংগ্রাম করছে ।

নয়াদিল্লি, 14 অক্টোবর: পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে করাচিতে ৷ সেখানে নিরাপদ স্থান হিসেবে পরিচিত জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিনা ইঞ্জিনিয়রদের পরিবহণকারী একটি কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা হয় ৷ সেই হামলায় তিনজন নিহত হন ও অনেকে আহত হন ৷ নিহতদের মধ্যে দু’জন চিনের নাগরিক ৷ আহতদের মধ্যেও একজন চিনা ছিলেন ৷

পাকিস্তানে আগামী 15-16 অক্টোবর বসতে চলেছে এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির শীর্ষনেতাদের সম্মেলন ৷ পাকিস্তান এখন সেই বৈঠকের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ৷ সেই সময়ই ঘটে গেল এই বিস্ফোরণ ৷ স্বাভাবিকভাবে করাচি বিমানবন্দরে এই জঙ্গি হামলা পাকিস্তানের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে ৷ এর পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ আর বিমানবন্দরটি সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে ৷

ঘটনা হল, জঙ্গিরা নিরাপদ এলাকায় ঢুকে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে ৷ এই ঘটনায় বিব্রত পাকিস্তান ৷ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ৷ তারা জানিয়েছে যে তাদের মাজিদ ব্রিগেড এই হামলার নেপথ্যে ছিল ।

পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে বলেছিল যে ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ হয়েছে ৷ পরে সেই তথ্য সংশোধন করা হয় চিনা দূতাবাসের তরফে ৷ তারা এটাকে আত্মঘাতী হামলা বলে ঘোষণা করে । ইসলামাবাদের চিনা দূতাবাসের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয় ৷ সেখানে উল্লেখ করা হয় কনভয়ে 'পোর্ট কাসিম ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের চিনা কর্মীরা ছিলেন ৷’

এই সংস্থার সঙ্গে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রক ঋণের বিষয়টিকে রিপ্রোফাইলিং করার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ ইসলামাবাদের চিনা দূতাবাস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে দাবি করেছে যে পাকিস্তান ‘হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করবে, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেবে এবং পাকিস্তানে চিনা নাগরিক, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।’

পাকিস্তান সরকার এতটাই অস্বস্তিতে পড়েছে যে ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ শোক জানাতে চিনা দূতাবাসে গিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রদূতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন ।

দ্য চাইনিজ ডেইলি একটি সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছে, ‘চিন ও পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করা । পাকিস্তানে সিপিইসি প্রকল্পে জঙ্গিরা যখন হামলা চালায়, তখন চিন বিরোধী শক্তিগুলি যা অনুভব করে, তা হল শাডেনফ্রয়ডা (অন্যের দুর্দশায় আনন্দ পাওয়া) ।’

চিন আবারও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নিজেদের বাহিনী মোতায়েন করতে হবে । এই ধরনের মোতায়েন পাকিস্তানের জন্য অপমানজনক হবে । পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে জঙ্গি হামলা অব্যাহত রয়েছে । প্রতিদিনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, জঙ্গি ও জনগণের মৃত্যুর খবর আসছে । এসব এলাকায় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভও রয়েছে ।

একই সঙ্গে, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে ৷ তাই পাক সেনাবাহিনীকে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ইসলামাবাদকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদ এবং আশেপাশের অঞ্চলে জমায়েত বন্ধ রাখতে 144 ধারা জারি করেছে ।

পাক নেতৃত্ব সঠিকভাবে উল্লেখ করেছে যে সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং পিটিআই-এর বিক্ষোভ, যার বেশিরভাগই হিংসাত্মক, এগুলি করা হচ্ছে এসসিও দেশগুলির সামনে বর্তমান সরকারকে অপদস্থ করার জন্য । তবে পিটিআই-ও নাছোড় ৷ তারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে চাইছে ৷ তাই তারা 15 অক্টোবর ইসলামাবাদে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের সঙ্গে মিল রেখে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে ৷

পিটিআই-এর মধ্যে এমন হতাশা যে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা মহম্মদ আলি সইফ ভারতের বিদেশমন্ত্রীকে তাঁদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । পরে অবশ্য তা অস্বীকার করা হয় ।

শেহবাজ শরিফ, যিনি এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পাশে চিনের প্রতিনিধিত্বকারী চিনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে বাধ্য, তাঁকে তার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রক্ষার জন্য কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হবে । রাশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া-সহ অন্যান্য দেশগুলি পাকিস্তানে বিনিয়োগ করতে দ্বিধাবোধ করবে ।

তাছাড়া, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পে নিযুক্ত চিনা ইঞ্জিনিয়রদের উপর এটা প্রথম হামলা নয় । চলতি বছরের মার্চে চিনা আর্থিক সাহায্যে তৈরি হওয়া দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে আত্মঘাতী হামলা হয় ৷ সেই হামলায় পাঁচজন চিনা নাগরিক ও তাঁদের চালক নিহত হন । মে মাসে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেজিং সফর করেন ৷ সেই সময় তাঁরা মার্চে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দেন ।

11 জনের মতো নিরপরাধকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং দায় স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছিল । পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় যখনই চিনা নাগরিক নিহত হয়েছেন, তারা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে । এবার চাহিদা কতটা হবে জানা নেই । উপরন্তু, পাকিস্তান সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে না-পারলে চিন প্রকল্পের গতি কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ।

বেলুচরা সিপিইসি মানতে পারছে না ৷ কারণ, এই প্রকল্পের জেরে তাদের ভূখণ্ডে দখল হয়ে যাচ্ছে ৷ চিনাদের কাছে গ্বদর হস্তান্তরের বিরুদ্ধে তারা নিয়মিত প্রতিবাদ করেছে ৷ কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছে । সরকার তাদের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে রাজি নয় । সম্ভবত, আসন্ন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের কারণে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সরাসরি ভারতীয় র-কে দোষারোপ করেনি ।

পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল উল্লেখ করেছেন, 'কোনও সন্দেহ নেই যে করাচিতে সন্ত্রাসবাদ এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদের প্রতিবাদের আহ্বান একই রকম ।' তিনি আরও জানান যে ‘লেখক’ একজনই ৷ একদিকে জঙ্গিদের ব্যবহার করে বিস্ফোরণ করা হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, অরাজকতা ছড়াতে এবং পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার জন্য পিটিআই-কে ব্যবহার করা হচ্ছে ।

পাকিস্তান সচেতন যে এই মুহূর্তে যেকোনও অযৌক্তিক বক্তব্য ভারতের বিদেশমন্ত্রীর ইসলামাবাদ সফরকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে । অনেক নিরপরাধকে গ্রেফতার করা হলে এবং তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হলে অভিযোগ উঠে আসবে ৷ তাই সবই হবে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পর ।

নানা হুমকির মুখে পড়ে পাকিস্তান ভেঙে পড়ছে । পিটিআই রাজনৈতিক পরিবর্তন, ইমরান খানের মুক্তি এবং বর্তমান বিশৃঙ্খলার জন্য সেনাপ্রধানকে দায়ী করার দাবি জানিয়েছে । তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকটের পরিস্থিতিকে সামনে এনে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যবহার করতে প্রস্তুত ।

টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) খাইবার পাখতুনখোয়াকে শরিয়া আইনের আওতায় আনতে চায় । বেলুচরা পাকিস্তানের অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি চায় ৷ তাই তাদের জমিতে সিপিইসি নির্মাণকারী চিনাদের নিশানা করছে ৷ টিটিপি এবং বেলুচ শুধুমাত্র তাদের অঞ্চলেই সক্রিয় নয়, বরং দেশের গভীরে অনুপ্রবেশ করেছে ৷ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে ।

রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও স্বাধীনতা আন্দোলনের উপর আন্দোলন এবং হিংসা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে ৷ বিশেষ করে নগদ অর্থের সংকটে থাকা পাকিস্তানের পক্ষে এই পরিস্থিতিকে চলতে দেওয়া কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে । তাদের সরকারি ব্যবস্থা মূলত পিটিআই ও ওই দলের সঙ্গে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার দিকে বেশি নজর দিয়েছে ৷ যার মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগও ৷ যার ফলে বর্তমান হাইব্রিড সরকারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হয়েছে, যারা ইমরানকে অবমাননার দায়ে ধরে রেখেছেন ৷

পাকিস্তান নেতৃত্ব সচেতন যে বর্তমান বিক্ষোভ হিংসাত্মক রূপ নিতে পারে ৷ বিশেষ করে অর্থনীতি যখন নিম্নমুখী, তখন বাংলাদেশের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, তাই তাদের অবশ্যই এটাকে যেকোনও মূল্যে দমন করতে হবে । তারা আরও সচেতন যে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ইমরানকে সমর্থন করে ৷ তাই সাবধানে পদক্ষেপ করা দরকার ।

ইমরান আপাতত কারাগারের অন্তরালে রয়েছেন ৷ তিনি জানেন যে কারাগারের অন্তরালে থাকাটাই ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁর সেরা বাজি । ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোর এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়ে বাইরের প্রদেশগুলোকে উপেক্ষা করা হচ্ছে । এটা টিটিপি এবং বেলুচদের পুনরায় উত্থানের সুযোগ দিয়েছে । যেহেতু এসসিও সম্মেলন দোরগোড়ায় হাজির, তাই পাকিস্তান রাজধানীতে বা তার কাছাকাছি এলাকায় জঙ্গি হামলা ঘটতে দেবে না ৷

আসন্ন এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে পাকিস্তান আঞ্চলিকভাবে প্রচারের আলোয় এসেছে ৷ সন্ত্রাসবাদকে ঠেকিয়ে রেখে সেদেশের রাজনৈতিক শ্রেণীর মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার এটাই সেরা সময় । তবে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান । বিশ্ব একটি অস্থিতিশীল পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষ করবে, যারা অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে কাজ করার পরিবর্তে, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অসন্তোষ, চরমপন্থী মতাদর্শ এবং হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংগ্রাম করছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.