বেইরুট, 30 সেপ্টেম্বর: ক্ষমতা দখলের জন্য প্রায় এক বছর আগে শুরু হয়েছিল ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ ৷ পরে সেই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধের আঁচ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে ৷ যুদ্ধে একে একে জড়িয়ে পড়ে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লা ও হাউতি সন্ত্রাসীরা ৷
প্যালেস্তাইনের সমর্থনে ইজরায়েলের উপর একের পর এক আক্রমণ করতে শুরু করে এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি ৷ দেশবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে পাল্টা হামলা শুরু করে ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ৷ প্রথমে গাজা, পরে লেবাননে একের পর এক এয়ারস্ট্রাইক চালায় আইডিএফ ৷
রিপোর্ট বলছে, গত 7 দিনে হিজবুল্লার 7 শীর্ষ নেতা প্রাণ হারিয়েছেন ইজরায়েলি রকেট হামলায় ৷ তালিকায় রয়েছেন হাসান নাসরাল্লাহ, নবিল কাউক, ইব্রাহিম আকিলের মতো মিসাইল ও রকেট হামলার দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কমান্ডাররা ৷ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের দাবি, নাসরাল্লাহর মৃত্যু যুদ্ধে এক বড় পরিবর্তন ৷ শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর পর লেবাননের সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠনকেও অস্বস্তিতে পড়েছে ৷ 1980 সালে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম শীর্ষ নেতাদের হারিয়েছে হিজবুল্লা ৷ স্বাভাবিকভাবে এই মুহূর্তে যুদ্ধের মূল স্রোতে ফেরার জন্য তারা শক্তির পুনরুদ্ধার করছে।
এক নজরে মৃত 7 হিজবুল্লা নেতা :-
হাসান নাসরাল্লাহ
1992 সাল থেকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন হিজবুল্লার এই 'মাস্টারমাইন্ড' ৷ লেবাননে সংগঠনের শক্তির প্রসারেও বিশেষ ভূমিকা নেন তিনি ৷ লেবাননের রাজনৈতিক মঞ্চেও অংশগ্রহণ করেন হিজবুল্লা ৷ নাসরাল্লাহর নেতৃত্বেই লেবাননে শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই সংগঠনের ৷
এমনকী, 2011 সালে সিরিয়ায় সেনা অভ্যুত্থানের সময় প্রেসিডেন্ট বাসার আসাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করেন নাসরাল্লাহ ৷ তাঁর নেতৃত্বেই ইরাক ও ইয়েমেনে শক্তি বাড়ায় ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ৷ 2000 সালে নাসরাল্লাহর নেতৃত্বেই ইজরায়েল থেকে বিচ্ছিন্ন হতে সক্ষম হয় দক্ষিণ লেবানন ৷
নাবিল কাউক
শনিবার ইজরায়েলি রকেট হামলায় প্রাণ হারান হিজবুল্লার সেন্ট্রাল কাউন্সিলের উপপ্রধান নাবিল কাউক ৷ 1980 সালের প্রথম দিকে হিজবুল্লার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি ৷ 1915 সাল থেকে 2010 সাল পর্যন্ত লেবাননের দক্ষিণে সংগঠনের সামরিক শক্তির দায়িত্ব সামলান ৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে সংগঠনের হয়ে একাধিকবার তাঁকে ভাষণ দিতেও দেখা যায় ৷ নাসরাল্লাহর পরে তিনিই হিজবুল্লার প্রধান হতেন ৷
ইব্রাহিম আকিল
ইব্রাহিম আকিল হিজবুল্লার একজন শীর্ষ কমান্ডার ৷ লেবাননের সীমান্ত থেকে ইজরায়েলি সেনাকে সরাতে হিজবুল্লার অভিজাত রাদওয়ান বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন তিনি ৷ দীর্ঘদিন ধরে আকিল সংগঠনের সর্বোচ্চ 'জিহাদ কাউন্সিল'এর সদস্য ছিলেন ৷ এমনকী, 1983 সালে বেইরুটে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ান্টেড তালিকায় ছিলেন তিনি।
আহমদ ওয়েহবে
ওয়েহবে রাদওয়ান বাহিনীর একজন কমান্ডার ছিলেন ৷ প্রায় দু'দশক আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । বেইরুটের দক্ষিণে ইজরায়েলি এয়ারস্ট্রাইকে আকিলের সঙ্গে প্রাণ হারান তিনি ৷
আলি করকি
ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে হিজবুল্লার দক্ষিণ ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন করকি ৷ সংগঠনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসাবে তাঁকে বর্ণনা করেছে পেন্টাগন ৷ নাসরাল্লাহর সঙ্গে তাঁরও মৃত্যু হয় ৷
মহম্মদ সুরৌর
ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে হিজবুল্লার ড্রোন ইউনিটের প্রধান ছিলেন সুরৌর ৷ তাঁর নেতৃত্বেই ইজরায়েলের প্রতিরক্ষাবর্ম ভেদ করে রকেট, ড্রোন হামলা চালাতে সক্ষম হয় হিজবুল্লা ৷
ইব্রাহিম কোবেইসি
কোবেইসি হিজবুল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের নেতৃত্ব দিতেন ৷ ইজরায়েলি সামরিক বাহিনীর মতে, কোবেইসি 2000 সালে উত্তর সীমান্তে তিনজন ইজরায়েলি সেনাকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন ৷ চার বছর পর হিজবুল্লার বন্দী বিনিময়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের মৃতদেহ ।
এছাড়াও আইডিএফ-এর হামলায় প্রাণ হারান একাধিক হিজবুল্লা কমান্ডার ৷ নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর সংগঠনের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসেবে রয়েছেন নাইম কাসেম ৷ 1991 সাল থেকে সংগঠনের ডেপুটি প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি ৷ এবার ইজরায়েলের নিশানায় তিনি রয়েছেন বলে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার দাবি ৷