নয়াদিল্লি, 7 অক্টোবর: দেশজুড়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডিজিটাল অ্যারেস্ট ! কিছুদিন ধরে অনেকেই এই শব্দটা অনেকবার শুনেছেন, সেটা হল ডিজিটাল অ্যারেস্ট। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ডিজিটাল অ্যারেস্টের অনেক ঘটনা সামনে আসছে। ডিজিটাল অ্যারেস্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা।
শনিবার ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার ভারতে 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' অপরাধের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিষয়ে একটি সতর্কবার্তা (পাবলিক অ্যাডভাইজরি) জারি করেছে। উপদেষ্টা প্যানেল বলেছে যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেমন সিবিআই, পুলিশ, কাস্টমস, ইডি বা বিচারকরা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে না ৷ তাই জনসাধারণকে এই ধরনের প্রতারনার শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
সতর্কবার্তা হোয়াটসঅ্যাপ এবং স্কাইপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের লোগো রয়েছে এবং যোগ করা হয়েছে যে এই ধরনের স্ক্যামগুলি প্রায়শই এই প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে হয়ে থাকে। শনিবার ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টারের জারি করা পরামর্শে বলা হয়েছে, "আতঙ্কিত হবেন না, সতর্ক থাকুন। সিবিআই/পুলিশ/কাস্টম/ইডি/বিচারকরা ভিডিয়ো কলে আপনাকে গ্রেফতার করবেন না ৷" জনসাধারণকে এই ধরনের অপরাধের অভিযোগ জানাতে হেল্পলাইন নম্বর 1930-এ রিপোর্ট করতে বা সাইবার ক্রাইমের ওয়েবসাইট দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ডিজিটাল অ্যারেস্ট কী ?
ডিজিটাল অ্যারেস্ট আসলে একটা টার্ম। এতে সাইবার জালিয়াতরা অন্য একজনকে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে তার বাড়িতে বন্দি করে রাখে। এতে সাইবার প্রতারকরা আপনাকে ভিডিয়ো কল করে এবং আপনার চারপাশের ব্যাকগ্রাউন্ডকে হুবহু থানার মতো করে নেয়। অথবা এটিকে কোনও এজেন্সির অফিসের মতো করে নেয়। এই সব দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। এরপর ওই ব্যক্তি ভয় পেয়ে প্রতারণাচক্রের জালে জড়িয়ে পড়েন। এর পরে এই সাইবার জালিয়াতিরা আপনাকে প্রতারণা করতে শুরু করে এবং আপনার থেকে নানা ভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
ডিজিটাল যুগে, ডিজিটাল অ্যারেস্ট একটি নতুন ধরনের অপরাধ নিয়ে এসেছে, যা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে আসা সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং উদ্বেগজনক কেলেঙ্কারীগুলির মধ্যে একটি হল এই "ডিজিটাল অ্যারেস্ট"। নতুন এই কেলেঙ্কারিতে প্রতারকরা পুলিশ বা প্রশাসনিক কর্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করছে।
সাম্প্রতিক ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনা:
- বিদেশে পাঠানো পার্সেলে মাদক ও অন্যান্য নিষিদ্ধ জিনিস পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ভয় দেখিয়ে নয়ডার এক মহিলার 9 লাখ 70 হাজার টাকা প্রতারণা করেছে সাইবার জালিয়াতরা।
- নর্থ ইস্ট দিল্লির সাইবার পুলিশের দল 3 জনকে গ্রেফতার করেছে যারা ভুয়ো ডিজিটাল অ্যারেস্টের হুমকি দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করেছে।
- নয়ডায়, সাইবার অপরাধীরা ডিজিটালভাবে এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে এবং পার্সেলে আপত্তিকর জিনিস থাকার মিথ্যা অভিযোগের ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে 3 লক্ষ টাকা লুঠ করেছে।
- নয়ডায় ডিজিটাল অ্যারেস্টের মাধ্যমে 59 লাখ 54 হাজার টাকার প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সাইবার অপরাধীরা অশ্লীল ভিডিয়ো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার ভয় দেখিয়ে প্রায় 48 ঘণ্টা ধরে ডিজিটালভাবে গ্রেফতার করে এক মহিলা চিকিৎসককে প্রতারিত করেছে।
ডিজিটাল অ্যারেস্ট স্ক্যাম কীভাবে কাজ করে?
সাধারণত, এই কেলেঙ্কারি শুরু হয় পুলিশ, সিবিআই বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি-সহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসাবে জাহির করা একজনের কাছ থেকে একটি অযাচিত ফোন কল বা ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে। এসব প্রতারক তাদের 'টার্গেট' ব্যক্তিকে নানা কৌশল অবলম্বন করে ভয় দেখাতে শুরু করে।
মিথ্যা অভিযোগ: কলকারীরা মিথ্যাভাবে দাবি করে যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আর্থিক জালিয়াতি, মাদক পাচার বা অর্থ পাচারের মতো উল্লেখযোগ্য অপরাধ করেছে।
গ্রেফতারের হুমকি: ভিকটিম তাদের কথা না মানলে, প্রতারকরা তাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে।
বিচ্ছিন্নতা এবং ভীতিপ্রদর্শন: জিনিসগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, শিকারদের প্রায়ই ভিডিয়ো কলে প্রচুর সময় ব্যয় করতে বলা হয়। এটি তাদের সাহায্য চাইতে বা তথ্য দুবার চেক করতে বাধা দেয়।
আর্থিক চাহিদা: প্রতারকদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল তাদের শিকারের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। স্ক্যামাররা প্রায়ই নিরাপত্তার জন্য দ্রুত টাকা দিতে বলে।
মানসিক চাপ সৃষ্টি: প্রতারকরা তাদের শিকারের মানসিক অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে, তাকে ভয় দেখিয়ে পরিবারের সদস্যদের সম্মানহানীর আশঙ্কা জাহির করে তাদের আরও দুর্বল করে তোলে এবং বদলে টাকা দাবি করে।