কলকাতা, 26 ফেব্রুয়ারি: 27তম রাজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সিপিএম হুগলির ডানকুনির নাম দিয়েছিল 'বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর'। সেই বুদ্ধদেব নগরে মঙ্গলবারের প্রকাশ্য সমাবেশে একমাত্র ছবি দেখা গেল যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের। মাঠের মাঝখানে বড় কাট-আউটে তাঁর ছবি। যার উপরে লেখা ‘বাংলার ক্যাপ্টেন’। এই একজনের মুখ নিয়েই উন্মাদনা। তিনি মঞ্চ ছাড়তেই খালি হতে শুরু করে মাঠ।
মীনাক্ষী যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখছিলেন তখন মাঠের বাইরে, রাস্তা, ফ্ল্যাট-বাড়ির ছাদ ছিল ভর্তি। যা আরও একবার সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা বুঝিয়ে দিলেন মীনাক্ষীই তাঁদের ‘মুখ’। মহম্মদ সেলিম কিংবা বা অন্য কেউ নন। কারণ, মীনাক্ষীর পরের বক্তা ছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সেলিম। তিনি বলতে ওঠার আগেই মাঠের পাশের ছাদ খালি হয়ে যায়। অথচ, মীনাক্ষী বলার সময়ে এই ছাদের দিকেই বারেবারে তাকাচ্ছিলেন সেলিম।

মীনাক্ষী হিন্দি-বাংলা মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। হুশিয়ারির সুরে বলেন, "এত মানুষ তোমাদের কথা শুনবে না। মাঠ আমাদের বড় হচ্ছে ৷ সেই মাঠেই দাঁড়িয়ে থেকে লড়াই হবে চোখে চোখ রেখে। লুঠেরা জোট বাঁধো, খেটে খাওয়ারা জোট বাঁধছে। কার বুকের পাঠা আছে দেখা যাবে। লড়াই হবে। বুথে বুথে তৈরি হোন। কথা দিচ্ছি, চোখের মণির মতো রক্ষা করব। এই সমাবেশ দেখলেন। ইনসাফ ব্রিগেড কী দেখেছেন ৷ এবারের ব্রিগেডের সমাবেশ দেখবেন। সব কিছু ছাপিয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জ করছি। কারও ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাবেন। ছুটিয়ে মারব। ছাড় পাবে না চোরেরা। হাতে ফুটো বাটি নিয়ে সব দালাল পুলিশকে রাস্তায় বসাব। শপথ নিয়েছি, ময়দান ছাড়ব না।"
মীনাক্ষীর পরে মহ সেলিম বক্তব্য শুরু করতেই মাঠ ফাঁকা হতে শুরু করে। মাঠের পাশের বাড়ির ছাদও সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যায়। রাজ্য ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পার্টি অফিসের চৌহদ্দি ছেড়ে বেরোন। সোশাল মিডিয়ার নেশা নয়, পেশাদার হয়ে উঠুন। আজ 25 তারিখ সম্মেলন শেষ করলাম ৷ কাল ছাব্বিশ। সেই 26 থেকেই ছাব্বিশের লড়াই শুরু। কোনও বিরাম নেই। কোনও ফুলস্টপ নেই। বাংলাকে বাঁচাতে হবে ৷ ভবিষ্যতকে বাঁচাতে হবে। জান কবুল মান কবুল, লড়াই হবে। "

ডানকুনি স্পোটিং ক্লাবের মাঠে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে বক্তা ছিলেন সিপিএম পলিটব্যুরো কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত, দেবলীনা হেমব্রম, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও মহ সেলিম। সমাবেশ বেলা 2টা থেকে শুরু হয়। সাড়ে বারোটা থেকেই দুই 24 পরগনা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান ও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় কর্মী সমর্থকরা আসতে শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাঠ ভরে যায়। তবে, মাঠে থাকা ক্রিকেটে পিচের যাতে কোনও ক্ষতি না-হয় তাঁর জন্য ঘিরে রাখা।
একইভাবে সিপিআইএমের ডিজিটাল টিম ড্রোন উড়িয়ে মাঠের ছবি ক্যাপচার করে। প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ মঞ্চে প্রথম বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন দেবলীনা হেমব্রম। তার আগে আনুষ্ঠানিক গান চলে। দেবলীনা যখন মঞ্চে তৃণমূল-বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করছেন, তখন পুলিশের ফোন সিপিআইএমের হুগলি জেলার সম্পাদক দেবব্রত ঘোষকে। কারণ, আর যাতে কর্মী সমর্থকরা না-আসেন। তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ৷ মঞ্চ থেকেই জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ ঘোষণা করেন, "কমরেড আপনারা যে যেখানেই আছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ুন। যানজটের কারণে পুলিশ অনুরোধ করেছে আর ভিড় না-করার। মাঠের চারপাশের এক কিলোমিটার জুড়ে মাইক আছে।

দেবলীনা হেমব্রম বলেন, "সিঙ্গুরের কারাখানাটা হলে অনেকে চাকরি পেত। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের লজ্জা হওয়া দরকার। তাঁরা হতে দিল না। শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা রাস্তায় ঘুরছে ৷ নারকেলের ছোবড়া দিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের মুখ ঘষে দেবে সাধারণ মানুষ। অনেক সহ্য করেছি। আর আমরা সহ্য করব না।"
এই উন্মাদনার কিছুটা তালকাটে প্রকাশ কারাত বলতে শুরু করায়। তিনি হিন্দিতেই মোদি-মমতা-আরএসএস এবং নারী নির্যাতনের অভিযোগ করেন। কারাতের পরের বক্তা ছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। মঞ্চে পরের বক্তা হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই স্লোগান-হাততালিতে গমগম করে মাঠ। কারণ কর্মীদের কাছে তিনিই তো ‘বাংলার ক্যাপ্টেন’ ৷