বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, লুকোনো ক্ষুধার জন্ম তখনই হয়, যখন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়৷ খাবারে ভিটামিন এবং খনিজের মতো প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব থাকে, যেগুলো বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন । আয়রন, ভিটামিন-এ এবং আয়োডিনের ঘাটতি গোটা পৃথিবীতে দেখা যায়, বিশেষ করে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে ।
অ্যাসোচেম ও হেক্সাগন নিউট্রিশনের এই ওয়েবিনারের প্যানেল জানিয়েছে, যে দুই বিলিয়ন মানুষ ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাবে ভোগেন । খাদ্যকে সুরক্ষিত করা বা ফুড ফর্টিফিকেশন হল একটা কম খরচের পদ্ধতি, যার দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুফল আছে । বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাতীয় স্তরে অপুষ্টিকে আটকাতে যেসব পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার মধ্যে ফুড ফর্টিফিকেশন হল সবথেকে সস্তা ও নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের মাধ্যম ।
অ্যাসোচেমের ন্যাশনাল ফুড প্রসেসিং কাউন্সিলের সহ-অধিকর্তা এবং এলটি ফুডসের সিইও বিবেক চন্দ্রর মতে, ভারতের প্রতিদিনের সাধারণ খাবার প্রয়োজনীয় পরিমাণে পুষ্টি এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করে না । “ন্যাশনাল নিউট্রিশন মনিটরিং ব্যুরো বার বার দেখিয়েছে যে শস্য ও মিলেট ছাড়া, ভারতীয় পরিবারগুলো প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ । আইসিডিএস-এর প্রেক্ষিতে, অপুষ্টি ও লুকনো ক্ষুধার বিরুদ্ধে যে পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা হয়েছে, তা হল পুষ্টি ও স্বাস্থ্যশিক্ষা, খাদ্যবৈচিত্র এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সাপ্লিমেন্টেশন । অপুষ্টিকে প্রতিহত করার জন্য ফুড ফর্টিফিকেশনই হল নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত, হু-অনুমোদিত এবং কম খরচের একটি মাধ্যম ।”
আরও পড়ুন :আগেভাগে ক্যানসার নির্ণয়ের বহুমুখী উপকারিতা
হেক্সাগন নিউট্রিশনের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিক্রম কেল্লার বলেন, “ভারতে অপুষ্টি, পুষ্টি সচেতনতা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, হাসপাতালের খরচ বাড়া এবং এফএসএসএআই-এর ফুড ফর্টিফিকেশন নীতি হল এমন কয়েকটি কারণ, যাদের ওপর ভারতে নিউট্রা সিউটিক্যালসের চাহিদা নির্ভর করে । অস্টিও পোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, হাইপারটেনশনের মতো নির্দিষ্ট সমস্যার নিউট্রাসিউটিক্যাল পণ্য থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পণ্য কেনার ক্ষেত্রে একটা বদল এসেছে । ক্রেতাদের মনোভাবে বদল নিউট্রাসিউটিক্যাল পণ্যের ক্ষেত্রেও পড়ছে । ব্যায়াম, ডায়েট, ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ এখন জীবনযাত্রার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে আরও বেশি সচেতন হয়েছেন ।” সাম্প্রতিক ওয়েবিনারে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে ।
অরুণাচল প্রদেশের চাংলাং জেলার ডেপুটি কমিশনার, দেবাংশ যাদব একটি প্রোজেক্ট রিপোর্ট তুলে ধরেন, যেখানে অরুণাচল প্রদেশের অঙ্গনওয়াড়ির বাচ্চাদের মধ্যে অপুষ্টির ক্ষেত্রে আয়রন-ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি নিয়ে আলোচনা রয়েছে । দেখা যাচ্ছে, ভাত খান এমন মানুষ বেশি থাকলেও, এনএফএইচএস-4 সমীক্ষা বলছে যে 74 শতাংশ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত, 17 শতাংশের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে এবং 20 শতাংশ আন্ডারওয়েট ।
আরও পড়ুন : তামা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?
কিন্তু কন্ট্রোল গ্রুপের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, উচ্চতা, ওজন ও বাহুর বৃদ্ধি 5-6 বছরের শিশুদের তুলনায় 3-4 বছরের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে । এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে পুষ্টিযুক্ত খাবার আরও কম বয়স থেকে দিলে, তার সুফলও তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় ।
চাল, দুধ, তেল ও নুনের মধ্যে দিয়ে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস দিলে তা বিপুল সংখ্যায় মানুষের মধ্যে পুষ্টির অভাব মেটাতে সহায়ক হয় এবং ভারতে লুকনো ক্ষুধার মোকাবিলা করে ।
হেক্সাগনের হিউম্যান নিউট্রিশনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মেঘা মান্ডকে সাম্প্রতিক এনএফএইচএস-৫ সমীক্ষা সম্পর্কে আমাদের জানান এবং লুকোনো ক্ষুধার মোকাবিলায় কীভাবে ফুড ফর্টিফিকেশন সঠিক সমাধান হয়ে উঠতে পারে, তা তুলে ধরেন । তিনি দেখিয়ে দেন, পুষ্টির অভাব মেটাতে কীভাবে ফুড ফর্টিফিকেশন কতখানি সস্তা এবং দুধ, তেল, ময়দায় পুষ্টিগুণ যোগ করে ৷ যার খরচ লিটার বা কেজি প্রতি 5 থেকে 10 পয়সা ।
ফর্টিফায়েড চাল, আটা এবং ডাবল ফর্টিফায়েড নুন হল কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য যা দিয়ে অ্যানিমিয়া ও পুষ্টিহীনতার মোকাবিলা করা যায় । কারণ দেশের কিশোর-কিশোরী এবং নারীদের একটা বড় অংশই অ্যানিমিক । চাল পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এবং এর সঙ্গে মিলিং, পলিশিংয়ের মতো বিষয় যুক্ত, যাতে কয়েকটি পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায় । ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে সেগুলোকে ফিরিয়ে এনে চালকে যথাযথভাবে পুষ্টিকর করে তোলা যায় ।