মালদা, 19 ফেব্রুয়ারি : দু’দিন আগেই যিনি ছিলেন সবার দাদা, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সেই ভাইদের কাছেই আজ তিনি মীরজ়াফর ৷ রতুয়া এলাকায় রাজনীতির বেতাজ বাদশা শেখ ইয়াসিনের বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল বের করল যুব তৃণমূল ৷ তাতে পা মেলাল শাসকদলের সংগঠন, জয়হিন্দ বাহিনীর কর্মীরা ৷ ইয়াসিনের বিরুদ্ধে এই মিছিল বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা করে ৷ পরে সেখানকার ঘাসিরাম মোড়ে শেখ ইয়াসিনের কুশপুতুলও দাহ করে শাসকদলের দুই যুব সংগঠনের কর্মীরা ৷
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় দেড়শো জনপ্রতিনিধি নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে ভোটের মুখে রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় শাসকদলের মেরুদন্ডটাই কার্যত ভেঙে দিয়েছেন ভূতপূর্ব তৃণমূল নেতা শেখ ইয়াসিন ৷ রাজনৈতিক মহল বলছে, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর কাঁধে ভর দিয়েই রতুয়া এলাকা প্রায় বিরোধীশূন্য করেছিল শাসকদল ৷ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে ৷ জেলার রাজনীতিতে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী হিসাবেই পরিচিত ৷ অবশ্য দলেও তাঁর বিপক্ষে ছিলেন অনেক নেতা ৷ তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, রতুয়া কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় ও আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি মানব বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গত 10 জানুয়ারি রতুয়া থানা ময়দানে নিজের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই ইয়াসিন সমরবাবু ও মানববাবুর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন ৷ প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, এদের পাঁচটা ভোট আনার ক্ষমতা নেই ৷ এরাই দলে পদ ধরে বসে রয়েছে ৷ মালদা শহরে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার পরেও একই মন্তব্য করেন তিনি ৷ এরপরেই তিনি নিজের অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় বিজেপিতে যোগ দেন ৷
আরও পড়ুন:অভিষেকের দায়ের করা মামলায় অমিত শাহকে সমন আদালতের
এবার এই ইয়াসিনকে মীরজাফর আখ্যা দিয়ে সামসীতে ধিক্কার মিছিলের আয়োজন করে যুব তৃণমূল ৷ পোড়ানো হয় তাঁর কুশপুতুল ৷ এতে অংশ নেন জয়হিন্দ বাহিনীর রতুয়া 1 ব্লক সভাপতি মহম্মদ ইউসুফ আলি এবং ওই ব্লকের তৃণমূল যুব সভাপতি তাজামুল হক ৷ তবে এই ধিক্কার মিছিলে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা ৷ ইউসুফ আলি বলেন, “শেখ ইয়াসিন নিজেকে রতুয়ার গর্ব বলে দাবি করতেন ৷ এতদিন তিনি দলের খেয়েছেন, দলের পরেছেন ৷ এখন তিনি সেই দলের সঙ্গেই গদ্দারি করেছেন ৷ এর প্রতিবাদেই আজ আমরা ধিক্কার মিছিলের আয়োজন করেছি ৷ সাধারণ মানুষও স্বতস্ফুর্তভাবে রাস্তায় বেরিয়ে ইয়াসিনের এই গদ্দারির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷ আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী ৷ তাঁকে দেখে দল করি ৷ আমরা কেউ দাদার অনুগামী নই ৷ কেউ যদি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য দল ছেড়ে দেয়, সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেই রেখেছেন, দলে গদ্দারের কোনও জায়গা নেই ৷ গদ্দারদের জন্য দলের দরজা খোলা রয়েছে ৷ তারা দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে ৷ এমন কয়েকটা চোর দল থেকে বেরিয়ে গেলে হয়ত সোশাল মিডিয়ায় তার প্রভাব পড়বে, কিন্তু ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না ৷ বরং এতে দল আরও শুদ্ধ হবে ৷”