ETV Bharat / state

লকডাউনে সুর ছড়িয়ে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজছেন ভগবান

author img

By

Published : Apr 24, 2020, 7:59 AM IST

লকডাউনে সকলে গৃহবন্দী । কিন্তু পেটের তাগিদে প্রায় দিনই বের হতে হচ্ছে ভগবানবাবুকে । বের হলে বা কী ? রোজগার হচ্ছে না একদিনও । খালি হাতেই বাড়ি ফিরছেন বৃদ্ধ ।

malda
ভগবান

মালদা, 24 এপ্রিল : বন্ধ জলসাঘরের বারান্দায় ঝুঁকে পড়েছিল একটি বৃদ্ধ শরীর ৷ হাতে দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি বেহালা ৷ পরম যত্নে সেই যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ঠিক করে যাচ্ছিলেন ৷ মাঝেমধ্যেই বাজাচ্ছিলেন হিন্দি বা বাংলা গানের এক, দু'কলি । সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে ৷ কিন্তু এ সুর শোনার লোক কই ৷ লকডাউনে সকলেই তো গৃহবন্দী । উপার্জনের আশায় বের হলেও তাই জুটছে না কিছু । পাননি লোকশিল্পী ভাতা । ফলে পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বৃদ্ধ ৷

নাম ভগবান মালি । বয়স 71 ৷ মালদা শহরের বালুচর এলাকায় বাড়ি ৷ পাঁচজনের সংসার ৷ ছেলে তেমন কিছু করে না ৷ ভগবান ছোটো বেলায় বাবার কাছে বেহালার ছড় টানতে শিখেছিলেন ৷ এখন সেটাই তাঁর রুজি রোজগার ৷ সকাল হলে বেহালা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৷ কখনও শহরে, কখনও বা শহরের বাইরে ৷ যেখানে লোকজনের জমায়েত বেশি, সেখানে মূর্ছনা তোলেন হাতের যন্ত্রে ৷ যন্ত্রীর দক্ষতায় যেন কথা পায় যন্ত্র ৷ বাংলা কিংবা হিন্দি, একের পর এক গানের সুর মুগ্ধ করে শ্রোতাদের ৷ কখনও কখনও অনুষ্ঠানেও ডাক পান ৷ সেখান থেকেও কিছু আয় হয় ৷ কিন্তু আর পাঁচটা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের মতো কোরোনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর আয়ও ৷ বয়সের কারণে তিনি নিজেও কোরোনা নিয়ে আতঙ্কিত ৷ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হন না ৷ কিন্তু পেটের তাগিদে আতঙ্ক সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছিলেন কিছু উপার্জনের আশায় ।

নিজের সুরযন্ত্র ঠিক করতে করতে ভগবানবাবু বলেন, "পথেঘাটে বেহালা বাজিয়েই কিছু রোজগার করি ৷ তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে ৷ এখন লকডাউন চলছে ৷ পুলিশ বাইরে বের হতে দিচ্ছে না ৷ এদিকে ঘরে খাবার নেই তেমন ৷ যে দু’তিন কিলো চাল আর আলু পেয়েছিলাম, তা ফুরোতে সময় নেয়নি ৷ তাই লকডাউনের মধ্যেও দু’একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম ৷ কিন্তু কিছু আয় হচ্ছে না ৷ পুলিশ কোথাও বেহালা বাজাতে দিচ্ছে না ৷ বের হচ্ছি কিন্তু উপার্জন নেই ৷ এভাবেই চলছে ৷ সরকারের তরফে লোকশিল্পীদের ভাতা দেওয়া হলেও আমার জোটেনি ৷ সরকারি কার্ডও হয়নি ৷ ফলে সরকারি ভাতা কখনও পাইনি ৷"

malda
এভাবেই ফাঁকা টাউন হলের সামনে বাজাচ্ছিলেন ভগবান

গতকাল বেশ কিছুক্ষণ টাউন হলের বারান্দায় কাটিয়ে ফের ঘরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ভগবানবাবু ৷ রেখে গিয়েছেন কিছু সুর ৷ সেই সুরেই যেন ফুটে উঠেছে তাঁর অব্যক্ত যন্ত্রণা ৷ মানুষ দেখলে কিংবা ত্রাণের গাড়ি সামনে দিয়ে গেলেও তিনি হাত পাততে পারেন না ৷ কারণ, তিনি শিল্পী ৷ তাঁর রক্তে যে রয়েছে শিল্পসত্ত্বা ৷ কিন্তু দুঃসময়ে এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব কি অস্বীকার করতে পারে শহর ? এই প্রশ্নটা থেকেই গেল ৷

মালদা, 24 এপ্রিল : বন্ধ জলসাঘরের বারান্দায় ঝুঁকে পড়েছিল একটি বৃদ্ধ শরীর ৷ হাতে দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি বেহালা ৷ পরম যত্নে সেই যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ ঠিক করে যাচ্ছিলেন ৷ মাঝেমধ্যেই বাজাচ্ছিলেন হিন্দি বা বাংলা গানের এক, দু'কলি । সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে ৷ কিন্তু এ সুর শোনার লোক কই ৷ লকডাউনে সকলেই তো গৃহবন্দী । উপার্জনের আশায় বের হলেও তাই জুটছে না কিছু । পাননি লোকশিল্পী ভাতা । ফলে পাঁচ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বৃদ্ধ ৷

নাম ভগবান মালি । বয়স 71 ৷ মালদা শহরের বালুচর এলাকায় বাড়ি ৷ পাঁচজনের সংসার ৷ ছেলে তেমন কিছু করে না ৷ ভগবান ছোটো বেলায় বাবার কাছে বেহালার ছড় টানতে শিখেছিলেন ৷ এখন সেটাই তাঁর রুজি রোজগার ৷ সকাল হলে বেহালা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ৷ কখনও শহরে, কখনও বা শহরের বাইরে ৷ যেখানে লোকজনের জমায়েত বেশি, সেখানে মূর্ছনা তোলেন হাতের যন্ত্রে ৷ যন্ত্রীর দক্ষতায় যেন কথা পায় যন্ত্র ৷ বাংলা কিংবা হিন্দি, একের পর এক গানের সুর মুগ্ধ করে শ্রোতাদের ৷ কখনও কখনও অনুষ্ঠানেও ডাক পান ৷ সেখান থেকেও কিছু আয় হয় ৷ কিন্তু আর পাঁচটা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের মতো কোরোনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর আয়ও ৷ বয়সের কারণে তিনি নিজেও কোরোনা নিয়ে আতঙ্কিত ৷ খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হন না ৷ কিন্তু পেটের তাগিদে আতঙ্ক সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছিলেন কিছু উপার্জনের আশায় ।

নিজের সুরযন্ত্র ঠিক করতে করতে ভগবানবাবু বলেন, "পথেঘাটে বেহালা বাজিয়েই কিছু রোজগার করি ৷ তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চলে ৷ এখন লকডাউন চলছে ৷ পুলিশ বাইরে বের হতে দিচ্ছে না ৷ এদিকে ঘরে খাবার নেই তেমন ৷ যে দু’তিন কিলো চাল আর আলু পেয়েছিলাম, তা ফুরোতে সময় নেয়নি ৷ তাই লকডাউনের মধ্যেও দু’একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম ৷ কিন্তু কিছু আয় হচ্ছে না ৷ পুলিশ কোথাও বেহালা বাজাতে দিচ্ছে না ৷ বের হচ্ছি কিন্তু উপার্জন নেই ৷ এভাবেই চলছে ৷ সরকারের তরফে লোকশিল্পীদের ভাতা দেওয়া হলেও আমার জোটেনি ৷ সরকারি কার্ডও হয়নি ৷ ফলে সরকারি ভাতা কখনও পাইনি ৷"

malda
এভাবেই ফাঁকা টাউন হলের সামনে বাজাচ্ছিলেন ভগবান

গতকাল বেশ কিছুক্ষণ টাউন হলের বারান্দায় কাটিয়ে ফের ঘরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ভগবানবাবু ৷ রেখে গিয়েছেন কিছু সুর ৷ সেই সুরেই যেন ফুটে উঠেছে তাঁর অব্যক্ত যন্ত্রণা ৷ মানুষ দেখলে কিংবা ত্রাণের গাড়ি সামনে দিয়ে গেলেও তিনি হাত পাততে পারেন না ৷ কারণ, তিনি শিল্পী ৷ তাঁর রক্তে যে রয়েছে শিল্পসত্ত্বা ৷ কিন্তু দুঃসময়ে এই মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব কি অস্বীকার করতে পারে শহর ? এই প্রশ্নটা থেকেই গেল ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.