মালদা, 6 এপ্রিল : ভোটের প্রচারে গিয়ে গ্রামের মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন চাঁচল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রাম ৷ ঘটনাটি চাঁচল এক নম্বর ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বমুয়া গ্রামের ৷ গ্রামের অনুন্নয়ন নিয়ে তাঁকে প্রমীলাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় ৷ শুধু তাই নয়, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্মৃতি মনে রেখে এবার বিজেপি প্রার্থীর কাছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দাবিও তুলেছেন গ্রামবাসীরা ৷
মঙ্গলবার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে যান বিজেপি প্রার্থী ৷ বমুয়া গ্রামে মহিলাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি ৷ গ্রামে চলার মতো রাস্তা নেই, পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, সরকারি প্রকল্পের বাড়ি নেই, গরিব মানুষের ভাতা নেই, অভিযোগ একাধিক ৷ ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের কোনওরকমে বুঝিয়ে শান্ত করেন দীপঙ্করবাবু ৷ এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রীরও সমালোচনা করেন তিনি ৷
বমুয়ার বাসিন্দা দুলালি দাস বলেন, “আমাদের গ্রামে সবকিছুরই সমস্যা ৷ রাস্তার সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই পানীয় জল, সরকারি প্রকল্পের বাড়ির সমস্যাও রয়েছে ৷ বর্ষা শুরু হলেই ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না ৷ জন্মের পর থেকেই দেখছি, গ্রামের রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত ৷ পঞ্চায়েতকে বারবার বলেও কোনও লাভ হয়নি ৷ ভোটের পর বিধায়ককে এলাকায় দেখা যায়নি ৷ গ্রামের প্রসূতিদের অনেকটা দূর নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠাতে হয় ৷ গ্রামে কোনও গাড়ি ঢোকে না ৷ আমাদের গ্রামের কাউকে পঞ্চায়েত থেকে ঘর করে দেওয়া হয়নি ৷ আশেপাশের সব গ্রামের মানুষ সেই সুবিধে পেয়েছে ৷ তার উপর আমরা ভোট দিতে গেলে মাঝপথে রাস্তা আটকে দুষ্কৃতীরা দাঁড়িয়ে থাকে ৷ বলে, ভোট দিতে গেলে গুলি করে মারব ৷ বোমা মেরে উড়িয়ে দেব ৷ ওরা কারা তা জানি না ৷ তবে যারা ভোটে দাঁড়াচ্ছে, ওরা তাদেরই লোকজন ৷ পঞ্চায়েত ভোটে এই ঘটনা ঘটেছে ৷ আজ বিজেপি প্রার্থী প্রচারে এসেছেন ৷ আমরা তাঁকেও একথা বলেছি ৷ আমরা ভোট দেব ৷ কিন্তু আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই ৷ ভালো করে যাতে ভোট দিয়ে ঘরে ফিরতে পারি ৷ নইলে ভোট দিতে গিয়ে আমাদের সংসারটাই না ভেসে যায় ৷”
দীপঙ্করবাবু বলেন, “সব জায়গাতেই আমি প্রচারে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ছি ৷ মাননীয়া বলছেন, তিনি নাকি সব কাজ করে দিয়েছেন ৷ গ্রাম বাংলায় যদি এত কাজই হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের এভাবে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন? গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বমুয়া গ্রামের এই বুথে বোমাবাজি হয়েছিল ৷ গ্রামবাসীদের বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল ৷ এবার গ্রামের মানুষজন কীভাবে ভোট দেবেন, সেটা সরকার ভাববে ৷ কিন্তু এর আগে ভোটে বোমাবাজির জেরে এখানে ভোট বন্ধ হয়েছিল ৷”
আরও পড়ুন : বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকারের সঙ্গে সরাসরি
মোতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে ৷ এখানকার বিধায়ক আসিফ মেহবুব কংগ্রেসের ৷ এবারও তিনি ভোটে প্রার্থী হয়েছেন ৷ তিনি বলছেন,“মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটি বেশ বড় ৷ যতটা পারি, গ্রামের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি ৷ আমরা প্রতিটি মানুষের কাছেই পৌঁছোনোর চেষ্টা করছি ৷ গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা জেলা পরিষদ যদি উদ্যোগ নিত, তবে গ্রামগুলির সমস্যা হয়তো মেটানো যেত ৷ অনুন্নয়নের প্রশ্নে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ স্বাভাবিক ৷ রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সমস্যা থাকলে তার দায়িত্ব আমাদের নিতেই হবে ৷ তবে বিরোধী বিধায়ক হিসাবে আমাকেও কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে৷ আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে গ্রাম বাংলার উন্নয়নেই প্রথম নজর দেওয়া হবে ৷”