কলকাতা, 15 অক্টোবর : পুজোয় বিভিন্ন মণ্ডপে পাঁচদিনের ভিড়ের লড়াই নতুন করে আবার করোনার ঝড় ডেকে আনবে না তো ! এবিষয়ে কী বলছেন নেতা-মন্ত্রী-পুজো উদ্যোক্তারা ? বিধি মানার দায়িত্ব কি শুধুই সরকারের উঠছে প্রশ্ন!
আজ বিজয়া দশমী। দেবী দুর্গার আরাধনার আজই শেষ দিন। মর্ত্যলোকে বাপের বাড়ি থেকে এবার মা ফিরবেন কৈলাশে। আকাশে-বাতাসে বিষাদের সুর। গত 5 দিন পুজোয় ভিড়ের দাপট দেখেছে বাংলা, এবার বুকের মধ্যে চিনচিন করে বাজছে বিষাদের সুর। কিন্তু পাঁচ দিনের এই উৎসব বাংলার জনমানসে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়ে গেল। করোনা আবহে পুজো কাটল, ভিড় হল কিন্তু এরপর কী ? চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ সকলের মনেই এই প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তৈরি হচ্ছে আশঙ্কার মেঘ ৷
শাসক দলের নেতা মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী শিবির গত পাঁচদিন কে কতটা দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলেন সেই প্রশ্নও হয়তো উঠবে। কলকাতার বুকে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চ অট্টালিকা তৈরি করে হইচই ফেলে দেওয়া পুজো শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবকে পুজোর মাঝপথেই দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছর যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মৃত্যু-মিছিল দেখেছে মানুষ, সেখানে এভাবে জনজোয়ার ডেকে আনা কতটা কাম্য ছিল সেটা নিয়ে এখন উঠছে প্রশ্ন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই যে মণ্ডপে মণ্ডপে লাগামছাড়া ভিড়, এর ফল কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে তা আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে মানুষের নিজেদের সচেতনতার অভাব তো রয়েছেই ৷ সেই বিষয়টিই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে ৷
আরও পড়ুন : Corona in West Bengal : রাজ্যে সংক্রমণ কমলেও, কলকাতায় বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা
মাত্র কয়েক মাস আগেই একটা জীবনদায়ী ওষুধের জন্য হাহাকার অথবা অক্সিজেনের জন্য এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে দৌঁড়াতে দেখা গিয়েছে মানুষকে। এই ভয়াবহতাকে ভুলে গিয়ে যেভাবে মানুষ উৎসব মেতে উঠলেন তা আবার সেই পুরনো ছবি ফিরিয়ে আনতে পারে। ওয়াকিবহালমহল এমনও বলছে, আদালতের সাবধানতা সত্বেও যেভাবে রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতারা ভিড় টানার খেলায় মাতলেন সেখানে তাদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন থাকছে । এ বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, "আমরা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ প্রতিক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। আসলে গত দেড় বছর গৃহবন্দি থাকার পর সাধারণ মানুষ এই পুজোকে কোথাও যেন মুক্তির আমেজে উপভোগ করতে চেয়েছে । কোনও সরকার বা পুলিশের তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই । এক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা তৈরি হলে সরকার পুলিশ দিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ।"
এবিষয়ে কিন্তু সরকারকে দুষছে বিরোধীরা। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক সজল ঘোষ বলছেন, "এটা ঠিকই সাধারণ মানুষ এবার পুজোয় যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তা হিসেবে তা আমাদের একার পক্ষে কোনওভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার বা প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবও এর জন্য দায়ী। সংক্রমণ কমছে এই ভাবনা থেকে প্রশাসন যেভাবে নাইট কারফিউ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিষেবায় পুজোর ক'দিন ছাড় দিয়েছিল তাতে মানুষের মনে হয়েছে করোনা বলে কোনও কিছু হয়ত আর নেই। তাই যা হবার তাই হয়েছে। এর দায় কোনও ভাবেই সরকার এড়াতে পারে না।" করোনা আবহে এই পুজোয় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার? মানুষের নিজের নাকি সরকারের? এই প্রশ্নের মধ্যেই এখন উঁকি মারছে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা ৷