কলকাতা, ২৬ ফেব্রুয়ারি : আলিপুর কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজিরা দিতে হবে না CBI অফিসার ব্রতীন ঘোষালকে। আজ এই নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। অন্যদিকে, ২০১৪ সালের চিটফান্ড সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় CBI যে তিন পুলিশকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছিল তার তারিখ ভুল ছিল। তাই ওই পুলিশ আধিকারিকদের ফের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য CBI-কে নতুন করে নোটিশ দিতে হবে। তবে, পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে না CBI। আজ এই নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ।
১৩ ফেব্রুয়ারি CBI ও রাজ্যের বক্তব্য শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতি। তিন পুলিশকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য CBI থেকে যে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তার উপর স্থগিতাদেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, আলিপুর কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিয়েছিলেন CBI অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বালিগঞ্জ থানা ডেকে পাঠাতে পারে। তার উপরেও স্থগিতাদেশ জারি রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। আজ এই মামলার শুনানি ছিল।
২০১৭ সালের ৩ অগাস্ট বালিগঞ্জ থানা এলাকার রোজ়ভ্যালির একটি হোটেলে ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ ওঠে, রোজ়ভ্যালির আমানতকারীরা সেই হোটেলে ভাঙচুর করে। এরপর চার আমানতকারী বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর CBI অফিসার ব্রতীন ঘোষাল CGO কমপ্লেক্সে আমানতকারী নারায়ণ চন্দ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান। সেখানে তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করা হয়। এমন কী তাঁর ছেলের নাম কী, ছেলের ফোন নম্বর জানতে চান ওই CBI অফিসার। এরপর ব্রতীন ঘোষালের বিরুদ্ধে বিধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নারায়ণ চন্দ্র। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আলিপুর কোর্টের মাজিস্ট্রেটের এই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো ফুটেজ আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বালিগঞ্জ থানা ব্রতীন ঘোষালের কাছে এই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো ফুটেজ চেয়ে পাঠায়। আলিপুর কোর্টের মাজিস্ট্রেটের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে যান ব্রতীন ঘোষাল।
আগেরদিন শুনানিতে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনেরাল কৌশিক চন্দ বলেন, "২০১৪ সালের চিটফান্ড সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় CBI অনুসন্ধান চালাতে পারবে। সেই নির্দেশের পরই CBI রাজ্যের বিভিন্ন চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলায় অনুসন্ধান শুরু করে। তিন পুলিশকর্তা দিলীপ হাজরা, শংকর ভট্টাচার্য ও অর্ণব ঘোষকে CBI ৩০ নভেম্বর ২০১৮ সালে নোটিশ পাঠায়। ২০১৭ সালে আমানতকারীদের দুটি দল রোজ়ভ্যালির একটি হোটেল ভাঙচুর করে। এরপর হোটেলের ম্যানেজার বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার জন্য CBI অফিসার ব্রতীন ঘোষালকে কেন ডাকা হবে বালিগঞ্জ থানায় ? তাঁকে তিন-চার ঘণ্টা ধরে পুলিশ হেনস্থা করেছে। রোজ়ভ্যালি সংক্রান্ত বিষয়ে যদি কারও কিছু বলার থাকে তাহলে তাঁকে ওড়িশাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে সেখানে গিয়ে বলতে হবে।"
অন্যদিকে রাজ্যের তরফে AG কিশোর দত্ত বলেন, "রোজ়ভ্যালির একটি হোটেল ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে দীপক শর্মা, পৌলমী চক্রবর্তী, জয়া সাহা ও নারায়ণ চন্দ্র নামে চার আমানতকারী বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ২০১৭ সালে। এরপর CBI অফিসার ব্রতীন ঘোষাল নারায়ণ চন্দ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান। সেখানে তাঁকে দীর্ঘ সময় ধরে জেরা করা হয়। এমন কী, তাঁর ছেলের নাম, ছেলের ফোন নম্বর পর্যন্ত চান ওই CBI অফিসার। আলিপুর কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বালিগঞ্জ থানা ব্রতীন ঘোষালের কাছে এই জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিয়ো ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেটা তিনি দেননি। অথচ সুপ্রিম কোর্টের পরিষ্কার নির্দেশ আছে চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলায় CBI ও রাজ্যের পুলিশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে। ওই অফিসার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করেছেন।
তখন পালটা ফের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনেরাল কৌশিক চন্দ বলেন, আলিপুর কোর্টের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিধানগর আর বালিগঞ্জের মধ্যে এলাকা গুলিয়ে ফেলেছেন। আর মাজিস্ট্রেট কোনও নির্দেশ দিতে পারেন না কি না সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি। এরপরই বিচারপতি রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন।