কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর : কোরোনা পরিস্থিতিতে ফের বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে টাকা ছাড়া রোগী ভরতি না নেওয়ার অভিযোগ ৷ দুই লাখ টাকা জমা না দেওয়া পর্যন্ত ওই কোরোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা শুরু করেনি EM বাইপাসের ধারে আনন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি COVID হাসপাতাল। অন্যদিকে, আনন্দপুরের হাসপাতালে ওই রোগীকে আনার আগে, অন্য সমস্যার কারণে তাঁর চিকিৎসা চলছিল আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। সেখানে এই রোগীর COVID-19 টেস্টের রিপোর্ট পজ়িটিভ ধরা পড়ে।
এরপর এই রোগীকে আলিপুরের ওই হাসপাতাল চিকিৎসা করতে চায়নি । অভিযোগ, এই রোগীকে 2-3 ঘণ্টার মধ্যে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। এবং, তার আগে বিলের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়।
এমন অভিযোগের ঘটনায় অভিযোগকারিণী এবং এই দুই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হলফনামা চাইল ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)। একই সঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, এই ঘটনায় আপাতদৃষ্টিতে গাফিলতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর জন্য, আলিপুরের ওই হাসপাতালকে এক লাখ টাকা এবং আনন্দপুরের ওই হাসপাতালকে চার লাখ টাকা কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
COVID-19-এ আক্রান্ত 79 বছর বয়সি ওই বৃদ্ধ দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্তান পার্ক অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন । আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে তাঁর স্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন ।
মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে চিকিৎসার জন্য চার জুন এই বৃদ্ধকে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তাঁর প্রথম COVID-19 টেস্টের রিপোর্টে নেগেটিভ আসে । ফের তাঁর COVID-19 টেস্ট করানো হয়। 11 জুন হাসপাতালের তরফে রোগীর পরিজনদের জানানো হয়, দ্বিতীয়বার COVID-19 টেস্টের রিপোর্টে রোগীর দেহে কোরোনা ভাইরাসের হদিস পাওয়া গেছে ।
রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে হাসপাতাল থেকে এই রোগীর পরিজনদের বলা হয়, এখানে COVID-19-এর চিকিৎসা করা হয় না । 2-3 ঘণ্টার মধ্যে যেন রোগীকে অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে এই রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে দুই লাখ নয় হাজার টাকার বিল দেওয়া হয় । বৃদ্ধকে অন্য হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার আগে বিলের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেন পরিজনরা।
এই রোগীর পরিজনরা আনন্দপুরের বেসরকারি কোরোনা হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আলিপুরের হাসপাতাল থেকে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আনন্দপুরের হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়। এই দুই হাসপাতালের মধ্যে 11 কিমি দূরত্ব। আলিপুর থেকে এই রোগীকে আনন্দপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সাড়ে নয় হাজার টাকা ভাড়া ধরা হয় ।
কমিশনের কাছে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, আনন্দপুরের হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানে বৃদ্ধকে ভরতি নেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা জমা দিতে বলা হয় । এই রোগীর পরিজনরা হাসপাতালে টাকা জোগাড় করার জন্য কিছুটা সময় চান ৷ হাসপাতালের তরফে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়, ভরতি নেওয়া হবে, কিন্তু টাকা জমা দেওয়া না হলে রোগীর চিকিৎসা শুরু হবে না।
এর পর টাকা দেওয়া হলে রোগীকে ভরতি করে নেয় আনন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল ৷ 15 দিন হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা হয়। এর পরে 26 জুন হাসপাতালেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয় ৷ কমিশন জানিয়েছে, এই রোগীর মৃত্যুর দুই-তিন দিন আগে, সরকারি কোটায় এই রোগীর চিকিৎসা ফ্রি করে দেওয়া হয়। তবে, তার আগে পর্যন্ত এই রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে পরিজনদের 8 লাখ 13 হাজার 80 টাকা বিল ধরানো হয় ।
কমিশনে মৃতের স্ত্রী অভিযোগে করেন, চিকিৎসার খরচ হিসাবে 8 লাখ 13 হাজার 80 টাকা অনেক বেশি। তার উপর হাসপাতালে ভরতি থাকার সময় রোগীর ঠিক মতো খবর পেতেন না পরিজনরা। মৃত্যুর পরে তাঁর মৃতদেহ ছাড়ার বিষয়ে গড়িমসি করে এই হাসপাতাল। অভিযোগ, বিলের বকেয়া টাকা যতক্ষণ না দেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ মৃতদেহ ছাড়া হবে না বলে আনন্দপুরের ওই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়।
আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য সময় চাওয়া হয়। যদিও আলিপুরের হাসপাতালের তরফে পুরো অভিযোগ অস্বীকার করা হয় ৷ তবে এই রোগীকে অন্য হাসপাতালে কেন পাঠানো হল, এই বিষয়ে আলিপুরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। বার বার জানতে চাওয়া হলেও বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল।
আনন্দপুরের ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেও রোগী ভরতি আগে টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে ৷ এর আগেও এই রকম একটি ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে ৷ কমিশনে সেই ঘটনার মামলা চলছে ৷
রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আলিপুর থেকে আনন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রোগীর ক্ষেত্রে গাফিলতি হয়েছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে করছে কমিশন। এই ঘটনায় আলিপুরের হাসপাতালকে এক লাখ টাকা এবং আনন্দপুরের হাসপাতালকে চার লাখ টাকা কমিশনে জমা রাখতে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযোগকারিণী এবং এই দুই হাসপাতালকে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে।"