কলকাতা, 11 এপ্রিল : একদিকে রাজ্য়ে বাড়ছে কোভিড 19-এর সংক্রমণ অন্যদিকে, আরও তীব্র হচ্ছে রক্তের সঙ্কট। কারণ, এখন যেমন গরমের সময়, তেমনই এ বছর আবার এখন ভোটের-ও সময়। ফলে,কোভিড 19-এর সাম্প্রতিক পরিস্থিতির মধ্যে এই ভোট-গরমের জেরে কলকাতা সহ এ রাজ্যে রক্তের সঙ্কট এখন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।
গত বছর কোভিড 19-এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কলকাতা সহ এ রাজ্যে রক্তের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, সেই সঙ্কটএখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। অন্য়দিকে, প্রতি বছর গ্রীষ্মের সময় রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। যে বছর ওই গ্রীষ্মের সময় কোনও ভোট-পর্ব থাকে, সেই বছর কলকাতা সহ বিভিন্ন এলাকায় রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই, এ বছরে ইতিমধ্য়ে রক্ত সঙ্কট দেখা দিয়েছে ৷ রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ বছর যুক্ত রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠন মেডিকেল ব্যাংকের সেক্রেটারি ডি আশিস। তিনি বলেন, "এ বছর খুব কঠিন অবস্থা। এখন রক্তের খুব খারাপ অবস্থা। গত বছর কোভিড 19-এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রক্তদানের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে রক্তের সঙ্কট চলছে। এখন গরম আর ভোটের কারণে রক্তের এই সঙ্কট আরও বেশি তীব্র হয়ে উঠছে।"
গত বছর কোভিড 19-এর কারণে কলকাতা সহ এ রাজ্যে রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। তখন ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে রক্তদান শিবির হয়েছিল। রক্তদাতার সংখ্যাও তখন অনেক কমে গিয়েছিল। তখন কোথাও ২০, কোথাও ১০ জন রক্তদান করছিলেন। প্রতি শনিবার কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানা, ডিভিশনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করত কলকাতা পুলিশ। কিন্তু ভোটের জন্য় সেই সব শিবির এখন বন্ধ ৷ ফলে, গত বছর কোভিড 19-এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে রক্তের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, সেই সঙ্কট থেকে এখনও মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়নি। এ-বিষয়ে ডি আশিস বলেন, "এ রাজ্যে প্রতিদিন চার হাজার ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, গড়ে এখন এক হাজার থেকে এক হাজার দুশোর মতো ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হচ্ছে।"
আরও পড়ুন- শীতলকুচির ঘটনায় শর্তসাপেক্ষে ক্ষতিপূরণের অনুমতি দিল কমিশন
যদিও, গরমের সময় রক্তদান করা যাবে না, এর পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কোনও কারণ নেই। তবে, ভ্রান্ত ধারণার জেরে প্রতি বছর গরমের সময় রক্তদান শিবিরের আয়োজন কম হয়। যে কারণে রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। ভোটের সময় কেন রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়? অধিকাংশ রক্তদান শিবিরের সঙ্গে যুক্ত থাকে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দল অথবা, সেই দলের কোনও শাখা সংগঠন। ভোটের কারণে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়ে ওঠে না। ফলে, এ বছর এখন রক্তের সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। ডি আশিস বলেন, "পাড়ায় পাড়ায় যে সব রক্তদান শিবির হয়, ভোটের কারণে সে সব এখন বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সেই দলের কোনও শাখা সংগঠনের আয়োজনে যে সব রক্তদান শিবির হয়, তা মোট রক্তদান শিবিরের ৪৬ শতাংশ। এই সব রক্তদান শিবির বন্ধ হয়ে থাকার কারণে এখন নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত তো পাওয়াই যাচ্ছে না, পজিটিভ গ্রুপের রক্ত-ও অমিল।"
এদিকে, এই ভোট আর গরমের মধ্যে এখন শুধুমাত্র শনিবার এবং রবিবার খুব সামান্য সংখ্যক শিবিরে ছিটেফোঁটা রক্তদান হচ্ছে। যতটা রক্ত সংগৃহীত হচ্ছে ওই সব শিবির থেকে, পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তা ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে, রক্তের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে বিশাল ফারাক দেখা দিয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতির জেরে রক্তের জন্য ডোনার নিয়ে যাওয়ার কথা ব্লাডব্যাংকগুলি থেকে বলা হচ্ছে। কিছু দিন আগেও যে কোনও গ্রুপের ডোনার নিয়ে গিয়ে ব্লাডব্যাংক থেকে যে কোনও গ্রুপের রক্ত নেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু, রক্তের সঙ্কট এখন এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, যার জেরে, যে গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন, সেই গ্রুপের ডোনারকে নিয়ে যেতে হচ্ছে ব্লাডব্যাংকে। ডি আশিস বলেন, "রক্তের জন্য আমাদের কাছে প্রতিদিন এখন বহু ফোন আসছে। কলকাতার অবস্থা খারাপ, জেলাগুলির অবস্থা আরও খারাপ। এখন ভোট চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে কলকাতা সহ এ রাজ্যে এখন রক্তদান তলানিতে এসে ঠেকেছে।"
রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ বছর যুক্ত অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কফি হাউস স্যোশাল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অচিন্ত্য লাহা বলেন, "এ বছর এখন রক্তের অবস্থা খুব খারাপ। রক্ত পাওয়ার জন্য ডোনারকে নিয়ে যেতে হচ্ছে ব্লাডব্যাংকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন, সেই গ্রুপের ডোনারকে নিয়ে যেতে হচ্ছে।" ডি আশিস বলেন, "এই অবস্থায় অনেক ক্লাব-প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা আবেদন করেছি, রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা যদি সম্ভব না হয়, তা হলে সরাসরি নিকটবর্তী কোনও ব্লাডব্যাংকে গিয়ে রক্তদানের ব্যবস্থা করুন।" এদিকে, কোভিড 19-এর সেকেন্ড ওয়েভ-এ এ রাজ্যেও দ্রুত বেড়ে চলেছে সংক্রমণ। ফলে, ভোটপর্ব মিটে গেলেই রক্তের সঙ্কট দূর করতে সেভাবে শিবিরের আয়োজন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ।