ETV Bharat / state

কাটমানির জবাব ব্ল্যাকমানি হতে পারে না, বলছেন রুদ্রনীল - kolkata

যে রুদ্রনীল ঘোষকে ২০১১ সালের পর থেকে একুশের মঞ্চে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশে । কিন্তু গতকালের মঞ্চে কেন তিনি অনুপস্থিত? তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর আস্থা হারিয়েছেন? না কি নাম লেখাতে চলেছেন BJP -তে ৷ সমকালীন রাজনীতি, দিদির সঙ্গে দূরত্ব, BJP-তে যোগ নানা বিষয় নিয়েই  ETV ভারতের প্রতিনিধির একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি৷

ফাইল ফোটো
author img

By

Published : Jul 23, 2019, 1:22 AM IST

Updated : Jul 23, 2019, 11:32 PM IST

কলকাতা, 22 জুলাই : টলি ও টেলি পাড়ার তারকাদের অনেককেই এবার দেখা যায়নি 21 জুলাইয়ের মঞ্চে ৷ শ্রাবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী, অঙ্কুশ, ইন্দ্রানী হালদার, পায়েল সরকার, অপরাজিতা আঢ্যর মতো তারকাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলের একাংশে ৷ তবে যাঁদের অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ । যে রুদ্রনীল ঘোষকে ২০১১ সালের পর থেকে একুশের মঞ্চে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশে । কিন্তু গতকালের মঞ্চে কেন তিনি অনুপস্থিত? তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর আস্থা হারিয়েছেন? না কি নাম লেখাতে চলেছেন BJP -তে ৷ সমকালীন রাজনীতি, দিদির সঙ্গে দূরত্ব, BJP-তে যোগ নানা বিষয় নিয়েই ETV ভারতের প্রতিনিধির একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি৷

ETV ভারত : এবছর 21 জুলাইয়ের মঞ্চে আপনি অনুপস্থিত, এনিয়ে ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে৷ কী বলবেন ?

রুদ্রনীল : শুধু আমি নই, অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী অনুপস্থিত ছিলেন ৷ কে কোথায় যাবে এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার ৷ তবে আমার ক্ষেত্রে কারণটা একটু আলাদা ৷ 2011 থেকে তৃণমূলের শহিদ দিবসে আমরা অনেকেই যেতাম৷ সেই অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি এজেন্ডা থাকত ৷ কারণ 2011 থেকে ক্রমাগত বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, আলো , জল এমনকী আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেগুলি আগের সরকারের সময় অচলাবস্থায় পড়েছিল সেখানে উন্নয়ন শুরু হয়৷ ফলে আমাদের মতো মানুষরা কেউ কেউ নিজে নিজে এগোই ৷ আবার কাউকে আহ্বান করা হয়৷ উন্নয়নের জন্য আমরা নানা কাজে যুক্ত হই ৷ কারণ এই দলটি মানুষের ভালো করছে, উপকার করছে ৷ এবার তারও একটা স্থিতাবস্থার সময় আসে । 2014 ও 2016 সালে দলটি যখন লড়াই করে সেখানে প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী আমরা টাকা পয়সা এবং যে কোনওরকম সাহায্য ছাড়াই এই দলের হয়ে প্রচারে গেছি ৷ 2016 সালে আমি সারা পশ্চিমবঙ্গে চষে বেড়িয়েছি ৷ মনে হয়েছিল যে উন্নয়ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করতে চাইছেন এই রাজ্যের সচেতন নাগরিক হিসেবে তা সমর্থন করা উচিত ৷

তারপর যেটা হয়েছে অন্য কাজে উনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন ৷ যেহেতু তিনি দলের নেত্রী তাঁর কথা ছাড়া দলে কোনওকিছু হয় না ৷ একটা জিনিস দেখা যায় যে উনি আগে যেভাবে যোগাযোগ রাখতেন আর সরাসরি যোগোযোগ রাখছেন না । এবার আমরা তো রাজনৈতিক কর্মী নই ৷ যে বিরোধী দলকে কাউন্টার করতে গিয়ে তিনি যা বলবেন দলের কর্মী হিসেবে সমর্থন করব । আমরা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নই ৷ নিজস্ব কিছু নিরীক্ষণ আছে ৷ তবে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ 2011-2016 পর্যন্ত তিনি এতটা দূরে সরে যাননি ৷ এর মাঝে কিছু রাজনৈতিক নেতা লোকজন ভিড়তে শুরু করে । তাঁদেরকে দেখে কিন্তু আমরা তৃণমূল দলটিতে যাইনি ৷ আমরা কিন্তু একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত টালির চালে থাকা, একটা শাড়ি হাওয়াই চটি পরা মানুষকে দেখে, জীবন সংগ্রামে যে কোনও রকম শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষকে দেখে এগিয়েছি ৷ কিন্তু যাকে দেখে গেলাম উনি ধীরে ধীরে সরে গেলেন ৷ মাঝে কয়েকজন এলেন যাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই না, তাদের দেখে কেন যাব ?

ETV ভারত : কাটমানি নিয়ে রাজ্যজুড়ে যা চলছে, কী বলবেন ?

রুদ্রনীল : কাটমানি কথাটা তো বিরোধীরা বলেননি ৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই শুরুই করেছেন ৷ লোকসভায় BJP-র 2 টো থেকে 18 টা সিট হয়ে গেল ৷ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শহরের বাইরে অর্থাৎ তাঁর হাতের নাগালের বাইরে যে জেলাগুলি আছে, সেখানে যাঁরা নেতৃত্বে আছে তাঁরা সংগঠনের দিকে নজর না দিয়ে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে গেছিল ৷ আমাদের মনে হয়েছিল তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সুরে কথা বলেন ৷ যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেন না ৷ কিন্তু যেই দিদির সামনে থেকে সরে যান তখন তিনি তাঁর এলাকার বা পাড়ার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান৷ একটি অদ্ভুত হিটলারি আচরণ করেন ৷ যিনি রিকশা নিয়ে ঘুরতেন তাঁর গাড়ি হয়ে গেছে , যাঁর গলা খালি ছিল, জামার একটা বোতাম থাকত না তাঁর গলায় সোনার চেন পরে ঘুরছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যে একেবারে রিপোর্ট ছিল না বা জানতেন না তা নয়৷ যাঁদের উপর জেলার দায়িত্ব দেওয়া ছিল তাঁরা তাঁর কাছাকাছি থাকা নেতারা ৷ আমাদের কাছে প্রশ্ন ছিল তিনি কি কিছুই বুঝতে পারছিলেন না ? ওই সব নেতারা ওই কাটমানিতে ব্যস্ত ছিলেন ৷ সংগঠনের প্রতি নজর দেননি ৷ তার জন্যই তৃণমূলের আজ এই দূরাবস্থা ৷ এরা মিথ্যে খবর মমতাকে পৌঁছে দিচ্ছিল ৷ সাধারণ মানুষ এইসব থেকে মুক্তি পেতেই BJP-কে ভোট দেয়৷

এই মুহূর্তে দেশ রাজ্যজুড়ে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে৷ একে অন্যেকে দোষারোপ করছে ৷ গালিগালাজ করতে ব্যস্ত ৷ আমি খারাপ ও আমার থেকে খারাপ তাই আমাকে ভালো বলুন এই বোকা বোকা ধারণা প্রচার করতে যতটা ব্যস্ত, ঠিক ততটা রাজ্য বা দেশের উন্নতি করতে ব্যস্ত নয়৷ তাঁরা দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব নিয়ে কথা বলছেন না৷ কেউ কাটমানি বলছেন কেউ ব্ল্যাকমানি বলছেন ৷

সব দলেতেই এসব হয়৷ কেউ স্বীকার করে না ৷ এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী গর্জেছেন, ভালো৷ তা বলে জবাব ব্ল্যাক মানি নয়৷ চাঁদার টাকায় পার্টি চলে কিন্তু মানুষের অধিকারের টাকা কেটে নেওয়ার মতো খারাপ কাজ হতে পারে না । দুটোই খারাপ ৷ এটা সামাজিক অসুখ ৷ কেউ যে একেবারে নির্ভুল তা নয় ৷ কিন্তু ভুলটা বিনয়ের সঙ্গেও বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ৷ কিন্তু এটা কেউ করছে না ৷ সবাই ভাবছে আমি বলতে গেলে খারাপ হয়ে যাব, মন্ত্রীত্ব চলে যাবে বা বিধানসভায়, জেলা পরিষদে চেয়ার চলে যাবে ৷ মমতার দলে যারা রয়েছে তারা ভয় পেয়ে বা ভুল বুঝিয়ে সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে ৷

ভিডিয়োয় শুনুন রুদ্রনীল ঘোষের বক্তব্য

আমি অভিনেতা, আমার কাজ মানুষকে আনন্দ দেওয়া৷ ঠিক তেমনভাবে তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে ৷ কিন্তু মুশকিল হল অন্য কতটা খারাপ সেটা বলে নিজেকে ভালো বলার সময়টা আর নেই ৷ যদিও এটা অবশ্য রাজনৈতিক রণকৌশল হতে পারে ৷ আমার মনে হয় দেশের বা রাজ্যের জন্য কিছু করা উচিত ৷ শাসকদলের কাছ থেকে এটা আশা করা যেতে পারে ৷ একে অপরকে দোষ দেওয়াটা কাম্য নয়৷ আমি যেহেতু স্বাধীনচেতা মানুষ এবং কাউকে তুষ্ট করে নিজের উপকার বা তাঁর ক্ষতি চাই না ৷ তাই নিজের মতো করে বললাম৷ হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কষ্ট পেতে পারেন ৷ বা বিরোধীরা হাততালি দিতে পারেন ৷ যে সমস্ত বন্ধুরা তৃণমূলে বা BJP -তে যোগ দিয়েছেন যাঁরা রাজ্য ও দেশের ভালো করতে চান তাঁদের সাধুবাদ দিতে চাই ৷ এখন মানুষ সব বুঝতে পেরেছেন মিডিয়া অনেক পাওয়ারফুল ৷

ETV ভারত : পার্থ চট্টোপাধ্যায় আপনাকে ইমোশনাল বলেছেন ৷ সে বিষয়ে কী বলবেন ?
রুদ্রনীল : অবশ্যই যে কোনও শিল্পী ইমোশনাল ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আমি অনেক কাছ থেকে চিনি৷ তার সঙ্গে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ৷ আমার কথাগুলো দেশকে বা মানুষকে ভালোবেসে বলা ৷

ETV ভারত :তাহলে কি আপনি অন্যদের মতো নাম লেখাতে চলেছেন BJP-র খাতায়?

রুদ্রনীল : এখন কোথাও যোগ দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই ৷ আমার সময় দরকার ৷ ছোটোবেলা বামপন্থী রাজনীতি করে কেটেছে ৷ রাজনীতি নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে হবে ৷ বিরোধীদেরও একটু পড়াশোনা করতে হবে৷ 2019-র নির্বাচনের দু'মাস আগে থেকেই আমি নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়েছি ৷ কারণ দেশ বা রাজ্যে শুধু ক্ষমতা দখলের কথা,লড়াই ছাড়া আর কিছু আমার চোখে পড়েনি ৷ তবে, আমি কখনও MP ইলেকশনে লড়তে চাইনি ৷ আমাকে রাজ্য,দেশ,পার্লামেন্ট বুঝতে হবে ৷ আমি কিছুই জানলাম না একেবারে সংসদে চলে যাব ! কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনেক কিছু জেনে যেতে হয়৷ আমি রাজনৈতিকভাবে এতটা শিক্ষিত নই ৷ যাঁরা গেছেন তাঁরা জেনে বুঝে পড়াশোনা করে গেছেন ৷ আমি বাবার সঙ্গে কথা আজ বলছি না বলে পাশের বাড়ির লোককে কাকু বলে ডাকব এটা ঠিক নয়৷ আবার বাবা ক্রমাগত ভুল কথা বলে যাবেন সেটা ঠিক বলব এটাও ভুল ৷ BJP-তে আমার অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ৷ আমি জন্ম থেকে যাদের দেখেছি তাদের মধ্যে BJP পড়ত না ৷ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির ব্র্যান্ড, BJP -র একটা জোয়ার আসার জন্য এবং স্থানীয় স্তরে TMC- র নেতাদের মানুষের প্রতি উদাসীন ব্যবহারে এই 18টি সিট পেয়েছে BJP ৷ তারপর BJP বড় হয়েছে ৷

তাদের আদর্শ কী? তারা দেশের কতটা ভালো চাইছেন সবে বোঝা শুরু হয়েছে ৷ আমি CPI(M) , কংগ্রেস বা তৃণমূলকে চিনি ৷ আগে তাদের নীতি-আদর্শ কী বুঝি ৷ যদি বুঝি তারা অনেক ভালো কাজ করছে যা আর কেউ পারে না, তখন আমি ভাবব ৷ মানুষ আগে পালটায় তারপর আমরা পালটাই ৷ অনেকে মজা করে বলে দেখ কেমন পালটি খেল ৷ আমরা জনগণের কাছ থেকেই শিখি ৷ আর আমাদের দেশে মত বদলানের অধিকার সবার আছে৷

হয়তো মুখ্যমন্ত্রী খুব ব্যস্ত ছিলেন ৷ আমার মনে হয় 2014 বা 2016 তে যাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা 2019-এ নেই কেন তা মাথায় রাখা উচিত ৷ আজকাল অনেক নতুন নাম দেখি ৷ যারা 2016 -র কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থাৎ ব্রিজ ভাঙা, নারদা-সারদার সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ তাদেরকে ডাকতে ভুলে গেলেন !

ETV ভারত : ডাকলে কি যাবেন ?

রুদ্রনীল : নি ডাকেননি ৷ হয়তো ব্যস্ত ছিলেন ৷ তবে ডাকলে যাব ৷ আলোচনা করব ৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রী ৷

কলকাতা, 22 জুলাই : টলি ও টেলি পাড়ার তারকাদের অনেককেই এবার দেখা যায়নি 21 জুলাইয়ের মঞ্চে ৷ শ্রাবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী, অঙ্কুশ, ইন্দ্রানী হালদার, পায়েল সরকার, অপরাজিতা আঢ্যর মতো তারকাদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলের একাংশে ৷ তবে যাঁদের অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ । যে রুদ্রনীল ঘোষকে ২০১১ সালের পর থেকে একুশের মঞ্চে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশে । কিন্তু গতকালের মঞ্চে কেন তিনি অনুপস্থিত? তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপর আস্থা হারিয়েছেন? না কি নাম লেখাতে চলেছেন BJP -তে ৷ সমকালীন রাজনীতি, দিদির সঙ্গে দূরত্ব, BJP-তে যোগ নানা বিষয় নিয়েই ETV ভারতের প্রতিনিধির একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি৷

ETV ভারত : এবছর 21 জুলাইয়ের মঞ্চে আপনি অনুপস্থিত, এনিয়ে ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে৷ কী বলবেন ?

রুদ্রনীল : শুধু আমি নই, অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী অনুপস্থিত ছিলেন ৷ কে কোথায় যাবে এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার ৷ তবে আমার ক্ষেত্রে কারণটা একটু আলাদা ৷ 2011 থেকে তৃণমূলের শহিদ দিবসে আমরা অনেকেই যেতাম৷ সেই অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকটি এজেন্ডা থাকত ৷ কারণ 2011 থেকে ক্রমাগত বেশ কিছু ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, আলো , জল এমনকী আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেগুলি আগের সরকারের সময় অচলাবস্থায় পড়েছিল সেখানে উন্নয়ন শুরু হয়৷ ফলে আমাদের মতো মানুষরা কেউ কেউ নিজে নিজে এগোই ৷ আবার কাউকে আহ্বান করা হয়৷ উন্নয়নের জন্য আমরা নানা কাজে যুক্ত হই ৷ কারণ এই দলটি মানুষের ভালো করছে, উপকার করছে ৷ এবার তারও একটা স্থিতাবস্থার সময় আসে । 2014 ও 2016 সালে দলটি যখন লড়াই করে সেখানে প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী আমরা টাকা পয়সা এবং যে কোনওরকম সাহায্য ছাড়াই এই দলের হয়ে প্রচারে গেছি ৷ 2016 সালে আমি সারা পশ্চিমবঙ্গে চষে বেড়িয়েছি ৷ মনে হয়েছিল যে উন্নয়ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করতে চাইছেন এই রাজ্যের সচেতন নাগরিক হিসেবে তা সমর্থন করা উচিত ৷

তারপর যেটা হয়েছে অন্য কাজে উনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন ৷ যেহেতু তিনি দলের নেত্রী তাঁর কথা ছাড়া দলে কোনওকিছু হয় না ৷ একটা জিনিস দেখা যায় যে উনি আগে যেভাবে যোগাযোগ রাখতেন আর সরাসরি যোগোযোগ রাখছেন না । এবার আমরা তো রাজনৈতিক কর্মী নই ৷ যে বিরোধী দলকে কাউন্টার করতে গিয়ে তিনি যা বলবেন দলের কর্মী হিসেবে সমর্থন করব । আমরা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নই ৷ নিজস্ব কিছু নিরীক্ষণ আছে ৷ তবে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি৷ 2011-2016 পর্যন্ত তিনি এতটা দূরে সরে যাননি ৷ এর মাঝে কিছু রাজনৈতিক নেতা লোকজন ভিড়তে শুরু করে । তাঁদেরকে দেখে কিন্তু আমরা তৃণমূল দলটিতে যাইনি ৷ আমরা কিন্তু একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত টালির চালে থাকা, একটা শাড়ি হাওয়াই চটি পরা মানুষকে দেখে, জীবন সংগ্রামে যে কোনও রকম শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষকে দেখে এগিয়েছি ৷ কিন্তু যাকে দেখে গেলাম উনি ধীরে ধীরে সরে গেলেন ৷ মাঝে কয়েকজন এলেন যাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই না, তাদের দেখে কেন যাব ?

ETV ভারত : কাটমানি নিয়ে রাজ্যজুড়ে যা চলছে, কী বলবেন ?

রুদ্রনীল : কাটমানি কথাটা তো বিরোধীরা বলেননি ৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই শুরুই করেছেন ৷ লোকসভায় BJP-র 2 টো থেকে 18 টা সিট হয়ে গেল ৷ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শহরের বাইরে অর্থাৎ তাঁর হাতের নাগালের বাইরে যে জেলাগুলি আছে, সেখানে যাঁরা নেতৃত্বে আছে তাঁরা সংগঠনের দিকে নজর না দিয়ে অন্য কাজে যুক্ত হয়ে গেছিল ৷ আমাদের মনে হয়েছিল তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সুরে কথা বলেন ৷ যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে জানেন না ৷ কিন্তু যেই দিদির সামনে থেকে সরে যান তখন তিনি তাঁর এলাকার বা পাড়ার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান৷ একটি অদ্ভুত হিটলারি আচরণ করেন ৷ যিনি রিকশা নিয়ে ঘুরতেন তাঁর গাড়ি হয়ে গেছে , যাঁর গলা খালি ছিল, জামার একটা বোতাম থাকত না তাঁর গলায় সোনার চেন পরে ঘুরছেন ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যে একেবারে রিপোর্ট ছিল না বা জানতেন না তা নয়৷ যাঁদের উপর জেলার দায়িত্ব দেওয়া ছিল তাঁরা তাঁর কাছাকাছি থাকা নেতারা ৷ আমাদের কাছে প্রশ্ন ছিল তিনি কি কিছুই বুঝতে পারছিলেন না ? ওই সব নেতারা ওই কাটমানিতে ব্যস্ত ছিলেন ৷ সংগঠনের প্রতি নজর দেননি ৷ তার জন্যই তৃণমূলের আজ এই দূরাবস্থা ৷ এরা মিথ্যে খবর মমতাকে পৌঁছে দিচ্ছিল ৷ সাধারণ মানুষ এইসব থেকে মুক্তি পেতেই BJP-কে ভোট দেয়৷

এই মুহূর্তে দেশ রাজ্যজুড়ে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে৷ একে অন্যেকে দোষারোপ করছে ৷ গালিগালাজ করতে ব্যস্ত ৷ আমি খারাপ ও আমার থেকে খারাপ তাই আমাকে ভালো বলুন এই বোকা বোকা ধারণা প্রচার করতে যতটা ব্যস্ত, ঠিক ততটা রাজ্য বা দেশের উন্নতি করতে ব্যস্ত নয়৷ তাঁরা দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব নিয়ে কথা বলছেন না৷ কেউ কাটমানি বলছেন কেউ ব্ল্যাকমানি বলছেন ৷

সব দলেতেই এসব হয়৷ কেউ স্বীকার করে না ৷ এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী গর্জেছেন, ভালো৷ তা বলে জবাব ব্ল্যাক মানি নয়৷ চাঁদার টাকায় পার্টি চলে কিন্তু মানুষের অধিকারের টাকা কেটে নেওয়ার মতো খারাপ কাজ হতে পারে না । দুটোই খারাপ ৷ এটা সামাজিক অসুখ ৷ কেউ যে একেবারে নির্ভুল তা নয় ৷ কিন্তু ভুলটা বিনয়ের সঙ্গেও বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ৷ কিন্তু এটা কেউ করছে না ৷ সবাই ভাবছে আমি বলতে গেলে খারাপ হয়ে যাব, মন্ত্রীত্ব চলে যাবে বা বিধানসভায়, জেলা পরিষদে চেয়ার চলে যাবে ৷ মমতার দলে যারা রয়েছে তারা ভয় পেয়ে বা ভুল বুঝিয়ে সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে ৷

ভিডিয়োয় শুনুন রুদ্রনীল ঘোষের বক্তব্য

আমি অভিনেতা, আমার কাজ মানুষকে আনন্দ দেওয়া৷ ঠিক তেমনভাবে তাঁদের দায়িত্ব রয়েছে ৷ কিন্তু মুশকিল হল অন্য কতটা খারাপ সেটা বলে নিজেকে ভালো বলার সময়টা আর নেই ৷ যদিও এটা অবশ্য রাজনৈতিক রণকৌশল হতে পারে ৷ আমার মনে হয় দেশের বা রাজ্যের জন্য কিছু করা উচিত ৷ শাসকদলের কাছ থেকে এটা আশা করা যেতে পারে ৷ একে অপরকে দোষ দেওয়াটা কাম্য নয়৷ আমি যেহেতু স্বাধীনচেতা মানুষ এবং কাউকে তুষ্ট করে নিজের উপকার বা তাঁর ক্ষতি চাই না ৷ তাই নিজের মতো করে বললাম৷ হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কষ্ট পেতে পারেন ৷ বা বিরোধীরা হাততালি দিতে পারেন ৷ যে সমস্ত বন্ধুরা তৃণমূলে বা BJP -তে যোগ দিয়েছেন যাঁরা রাজ্য ও দেশের ভালো করতে চান তাঁদের সাধুবাদ দিতে চাই ৷ এখন মানুষ সব বুঝতে পেরেছেন মিডিয়া অনেক পাওয়ারফুল ৷

ETV ভারত : পার্থ চট্টোপাধ্যায় আপনাকে ইমোশনাল বলেছেন ৷ সে বিষয়ে কী বলবেন ?
রুদ্রনীল : অবশ্যই যে কোনও শিল্পী ইমোশনাল ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আমি অনেক কাছ থেকে চিনি৷ তার সঙ্গে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ৷ আমার কথাগুলো দেশকে বা মানুষকে ভালোবেসে বলা ৷

ETV ভারত :তাহলে কি আপনি অন্যদের মতো নাম লেখাতে চলেছেন BJP-র খাতায়?

রুদ্রনীল : এখন কোথাও যোগ দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই ৷ আমার সময় দরকার ৷ ছোটোবেলা বামপন্থী রাজনীতি করে কেটেছে ৷ রাজনীতি নিয়ে একটু পড়াশোনা করতে হবে ৷ বিরোধীদেরও একটু পড়াশোনা করতে হবে৷ 2019-র নির্বাচনের দু'মাস আগে থেকেই আমি নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়েছি ৷ কারণ দেশ বা রাজ্যে শুধু ক্ষমতা দখলের কথা,লড়াই ছাড়া আর কিছু আমার চোখে পড়েনি ৷ তবে, আমি কখনও MP ইলেকশনে লড়তে চাইনি ৷ আমাকে রাজ্য,দেশ,পার্লামেন্ট বুঝতে হবে ৷ আমি কিছুই জানলাম না একেবারে সংসদে চলে যাব ! কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অনেক কিছু জেনে যেতে হয়৷ আমি রাজনৈতিকভাবে এতটা শিক্ষিত নই ৷ যাঁরা গেছেন তাঁরা জেনে বুঝে পড়াশোনা করে গেছেন ৷ আমি বাবার সঙ্গে কথা আজ বলছি না বলে পাশের বাড়ির লোককে কাকু বলে ডাকব এটা ঠিক নয়৷ আবার বাবা ক্রমাগত ভুল কথা বলে যাবেন সেটা ঠিক বলব এটাও ভুল ৷ BJP-তে আমার অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক আছে ৷ আমি জন্ম থেকে যাদের দেখেছি তাদের মধ্যে BJP পড়ত না ৷ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির ব্র্যান্ড, BJP -র একটা জোয়ার আসার জন্য এবং স্থানীয় স্তরে TMC- র নেতাদের মানুষের প্রতি উদাসীন ব্যবহারে এই 18টি সিট পেয়েছে BJP ৷ তারপর BJP বড় হয়েছে ৷

তাদের আদর্শ কী? তারা দেশের কতটা ভালো চাইছেন সবে বোঝা শুরু হয়েছে ৷ আমি CPI(M) , কংগ্রেস বা তৃণমূলকে চিনি ৷ আগে তাদের নীতি-আদর্শ কী বুঝি ৷ যদি বুঝি তারা অনেক ভালো কাজ করছে যা আর কেউ পারে না, তখন আমি ভাবব ৷ মানুষ আগে পালটায় তারপর আমরা পালটাই ৷ অনেকে মজা করে বলে দেখ কেমন পালটি খেল ৷ আমরা জনগণের কাছ থেকেই শিখি ৷ আর আমাদের দেশে মত বদলানের অধিকার সবার আছে৷

হয়তো মুখ্যমন্ত্রী খুব ব্যস্ত ছিলেন ৷ আমার মনে হয় 2014 বা 2016 তে যাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা 2019-এ নেই কেন তা মাথায় রাখা উচিত ৷ আজকাল অনেক নতুন নাম দেখি ৷ যারা 2016 -র কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থাৎ ব্রিজ ভাঙা, নারদা-সারদার সময় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল৷ তাদেরকে ডাকতে ভুলে গেলেন !

ETV ভারত : ডাকলে কি যাবেন ?

রুদ্রনীল : নি ডাকেননি ৷ হয়তো ব্যস্ত ছিলেন ৷ তবে ডাকলে যাব ৷ আলোচনা করব ৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রী ৷

Last Updated : Jul 23, 2019, 11:32 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.