কলকাতা, 24 জুলাই: বাংলা ও বাঙালির জন্য 24 জুলাই দিনটাকে কালো দিন বললেও খুব একটা ভুল বলা হয় না ৷ চার দশকেরও বেশি আগে এদিনই বাঙালি হারায় তার ম্যাটিনি আইডল উত্তম কুমারকে ৷ তবে এই 24 জুলাই জন্ম আরেক কিংবদন্তি পরিচালক তথা অভিনেতার ৷ তিনি গৌতম ঘোষ ৷ আজ আরও একটি বসন্ত পার করে ফেললেন গৌতম ৷
একসময় মান্না দের কণ্ঠে বাঙালি শুনেছিল, "একই সে বাগানে আজ এসেছে নতুন কুঁড়ি শুধু সেই সেদিনের মালি নেই ৷" এক্ষেত্রেও বোধহয় কথাটা সত্যিই ৷ কালের নিয়মে উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থেকে গিয়েছেন উত্তম কুমার ৷ বাংলা সিনেমাকে এখন কাঁধে করে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী থেকে আজকের দেব কিংবা অনির্বাণরা ৷ এই তালিকাতেই নির্মাতা এবং অভিনেতা দুই হিসাবেই জায়গা করে নেবেন গৌতমও ৷ রইল গৌতমের সেরা কাজের তালিকা।
পার: সালটা ছিল 1984 ৷ প্রথম হিন্দি ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলেন এক বাঙালি পরিচালক ৷ নামটা গৌতম ঘোষ ৷ সমরেশ বসুর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি এই ছবি তুলে ধরেছিল বিহারি মজুর নওরাঙ্গিয়ার কাহিনি ৷ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উৎপল দত্ত, নাসিরউদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি, অনিল চট্টোপাধ্যায়, ওম পুরির মতো তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ৷
অন্তর্জলী যাত্রা: বলিষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও কমলকুমার মজুমদারের ভাষার কাঠিন্য পাঠক মহলে তাঁর জনপ্রিয়তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল একসময় ৷ সেই কমলকুমারের গল্পকেই রূপোলি পর্দায় তুলে কার্যত এক নতুন দিক খুলে দিয়েছিলেন গৌতম ৷ বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল 'অন্তর্জলী যাত্রা' ৷ 1987 সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন মোহন আগাশে, শম্পা ঘোষ, রবি ঘোষ, বসন্ত চৌধুরিররা ৷
আবার অরণ্যে: এবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ৷ সুনীলের কাহিনি নিয়ে একসময় সত্যজিৎ বানিয়েছিলেন 'অরণ্যের দিনরাত্রি' ৷ শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ, রবি ঘোষ এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে নারী চরিত্রে ছিলেন অপর্ণা সেন, শর্মিলা ঠাকুর এবং কাবেরী বসুরা ৷ 1970 সালের এই ছবিরই পরবর্তী পর্ব নিয়ে গৌতম পর্দায় ফিরলেন 2003 সালে ৷ আগের চরিত্রদের সঙ্গে এবার যোগ দিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়রা ৷ এই কাহিনিও শুরু হয় জঙ্গল ট্রিপকে কেন্দ্র করেই ৷ তারপর তা তুলে ধরে অরণ্যের অধিকারের কথাও ৷
মনের মানুষ: 2010 সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উপন্যাস অবলম্বনে লালন ফকিরের জীবনকে রূপোলি পর্দায় তুলে আনার কাজে হাত দেন গৌতম ৷ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে লালন হিসেবে ব্যবহার করে সকলকে চমকে দেন পরিচালক ৷ সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী, পাওলি দামদের অভিনয়ও ছিল মনে রাখার মতো ৷ 2010 সালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও সেরার মুকুট ছিনিয়ে নেয় এই ছবি ৷
আরও পড়ুন: মহানায়ক উত্তম কুমারের 43তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা তাঁর সেরা পাঁচ নায়িকাকে
বাইশে শ্রাবণ: গৌতম শুধু একজন দক্ষ পরিচালক নন সু-অভিনেতাও বটে ৷ আর অভিনেতা গৌতমকে চিনতে হলে দেখতেই হবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের '22 শে শ্রাবণ' ছবিটি ৷ ছবিতে তিনি একজন প্রতিবাদী কবি যিনি হারিয়ে ফেলেছেন জীবনের গতিপথ ৷ সেই হতাশা তাঁকে কুরে কুরে খায় ৷ আবার তিনি সমাজ বদলে ফেলার স্বপ্ন দেখেন ৷ এই চরিত্রে গৌতমের অভিনয় আজও চোখে জল আনে অনেকেরই ৷