মোদির সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে শিশিরের শান্তিকুঞ্জে ভোজ লকেটের - শান্তিকুঞ্জ
শুভেন্দু-শিশিরের বাড়িতে মধ্য়াহ্নভোজ লকেট চট্টোপাধ্য়ায়ের ৷ তবে কি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন শিশির ? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়নি কোনও পক্ষই ৷ তাতে আরও বাড়ছে জল্পনা ৷
কাঁথি, 13 মার্চ : ভাত, ডাল, শুক্ত ৷ সঙ্গে মাছের রকমারি পদ ৷ শনিবার দুপুরের খাওয়াটা জমিয়েই খেলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্য়ায় ৷ আপ্য়ায়নের দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং শিশির অধিকারী ৷ সামনে বসিয়ে কন্য়াসম লকেটকে খাওয়ালেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা ৷ অতিথি সৎকারের সঙ্গেই চলল টুকটাক কথা ৷ তবে কি শান্তিকুঞ্জের অন্দরেই তৈরি হল রাজনীতির নতুন রসায়ন ? সরাসরি মন্তব্য় এড়িয়ে গেলেন লকেট নিজে ৷ তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা, বাবা ছেলের পাশের থাকবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক ! একই সুর শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারীর গলাতেও ৷
শনিবার কাঁথিতে আয়োজিত একটি দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন লকেট ৷ সেখান থেকে সোজা রওনা দেন অধিকারী গড়ের রাজপ্রাসাদে ৷ শান্তিকুঞ্জে তাঁর গাড়ি পৌঁছয় দুপুর তিনটে নাগাদ ৷ মধ্যাহ্নভোজ সারেন সেখানেই ৷ খাওয়া সেরে পান চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে আসেন বিজেপির এই দাপুটে নেত্রী ৷ হাসিমুখে সাংবাদিকদের জানান, তাঁকে এই পান সেজে দিয়েছেন ‘মাসিমা’ ৷ অর্থাৎ শিশিরের স্ত্রী স্বয়ং ৷
আরও পড়ুন : আজ শান্তিকুঞ্জে শিশির-সাক্ষাৎ লকেটের, বাড়ছে জল্পনা
লকেটের বডি ল্য়াঙ্গুয়েজই বলে দিচ্ছিল, প্রবীণ তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর ‘সৌজন্য সাক্ষাতে’ অত্যন্ত খুশি হয়েছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ ৷ তবে কি শুভেন্দু, সৌমেন্দুর পর অধিকারী পরিবারের কর্তাও নাম লেখাচ্ছেন পদ্ম শিবিরে ? না, এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি লকেট ৷ এড়িয়ে গিয়েছেন সাংবাদিকদের প্রশ্ন ৷ তবে শিশির যে তাঁদের পাশে রয়েছেন, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷
প্রশ্ন উঠছে, বিষয়টা কি তাহলে ‘ধরি মাছ, না ছুই পানি’ হয়ে গেল না ? বাবা-ছেলের রাজনৈতিক অবস্থান আলাদা হতেই পারে ৷ তা বলে এক দলে থাকা বাবা অন্য দলে থাকা ছেলের পাশে থাকলে ব্য়াপারটা কেমন দাঁড়াবে ? এক্ষেত্রে একটা বিকল্প হতে পারে শিশির যদি বিধানসভার ভোটপ্রচার থেকে নিজেকে একেবারে সরিয়ে নেন ৷ কিন্তু তেমন কোনও বার্তা এখনও পর্যন্ত তিনি দেননি ৷ বরং স্পষ্ট ভাষাতেই জানিয়েছেন, ছেলের পাশে থাকতে প্রয়োজনে দলনেত্রীর বিরুদ্ধে যেতেও রাজি আছেন তিনি ৷
অন্য়দিকে, তৃণমূলের দলীয় সংগঠনেও শিশিরের গুরুত্ব কমানো হয়েছে ৷ ডানা ছাঁটা হয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ৷ এই পরিস্থিতিতে শান্তিকুঞ্জে লকেটের মধ্যাহ্নভোজ তৃণমূলের ঘরে অশান্তি তৈরি করবে না তো ? প্রশ্নটা কিন্তু উঠছেই ৷
যার জবাব পেতে তৃণমূল নেতৃত্বের দ্বারস্থ হয় ইটিভি ভারত ৷ যোগাযোগ করা হয় বর্ষীয়ান তৃণমূল সংসাদ সৌগত রায়ের সঙ্গে ৷ তাঁর গলায় স্পষ্টতই ঝরে পড়ে ক্ষোভ ৷ সৌগতর অভিযোগ, দলে থেকেও ভোট মরশুমে কার্যত নিষ্ক্রিয় শিশির ৷ দীর্ঘদিন ধরেই বসে রয়েছেন ঘরে ৷ অন্যদিকে, তাঁর ছেলে শুভেন্দু বিজেপির হয়ে প্রচারে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন ৷ তাই তাঁর বাড়িতে লকেটের মতো বিজেপি নেত্রীর যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বলেই মনে করেন সৌগত ৷ এমনকী, শিশিরের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান নিয়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তাও অসম্ভব নয় বলেই মনে করেন দমদমের সাংসদ ৷
শিশির নিজে অবশ্য তাঁর বিজেপিতে যোগদান সম্পর্কে কোনও মন্তব্যই করেননি ৷ সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখে কৌশলী উত্তর দিয়েছেন তিনি ৷ শিশিরের কথায়, শান্তিকুঞ্জ তাঁর একার বাড়ি নয় ৷ এই বাড়িতে শুভেন্দু, সৌমেন্দুও থাকেন ৷ লকেট তাঁদের দলীয় সহকর্মী ৷ তাই লকেট সেখানে আসতেই পারেন ৷ আর যেহেতু শিশিরও একই বাড়িতে থাকেন তাই দু’জনের দেখা, কথা হতেই পারে !