মালদা, 26 সেপ্টেম্বর : আগেই ঢুকেছিল গঙ্গার জল, এবার দোসর হল ফুলহর ৷ আজ ভোরে ফুলহরের জলের তোড়ে ভেসে গেছে রতুয়া ১ ব্লকের সূর্যাপুর রিং বাঁধ ৷ প্রবল গতিতে নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে সংরক্ষিত এলাকায় ৷ ইতিমধ্যে জল ঢুকে পড়েছে রতুয়া 1 ব্লকের 5টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ সেই জল এগোচ্ছে চাঁচল 2 ব্লকের ধানগাড়া-বিষণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দিকে ৷ সেখানে এই জল মিশে যাবে মহানন্দায় ৷ ফলে মালদা শহরের পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে চলেছে ৷
পুজোর মুখে গত কয়েকদিন ধরেই বিপজ্জনকভাবে জল বাড়ছে জেলার প্রধান তিন নদীতে ৷ গঙ্গার জলে ইতিমধ্যে বানভাসি হয়েছে 4টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ গঙ্গার জল ফুলহরে মিশে জলস্তর বেড়েছিল ওই নদীরও ৷ ক'দিন আগেই জলের তলায় চলে গেছিল রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ৷ ভাসছিল হরিশ্চন্দ্রপুর 2 ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও৷ কিন্তু আজ ভোরে গঙ্গার আতঙ্ককে ছাপিয়ে গেছে ফুলহর ৷ রতুয়া 1 ব্লকের কাহালা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সূর্যাপুর অস্থায়ী রিং বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা আজ ফুলহরের প্রবল জলের তোড়ে ভেসে গেছে ৷ প্রবল গতিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে বাঁধের ভিতরের দিকে ৷ ইতিমধ্যে জল ঢুকেছে ওই ব্লকের রতুয়া, কাহালা, দেবীপুর, বাহারাল ও ভাদো গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় 250টি গ্রামে ৷ জলে ডুবতে চলেছে রতুয়া 1 ও চাঁচল 2 ব্লকের প্রায় 700 গ্রাম ৷ আতঙ্কে কয়েক লাখ মানুষ৷ এদিকে ব্লক প্রশাসসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে তাদের হাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী নেই ৷ আপাতত তিনটি স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হচ্ছে ৷
স্থানীয় বাসিন্দা, অনিল মণ্ডল বলেন, "আজ সকালে ফুলহরের বাঁধ ভেঙে গেছে ৷ সূর্যাপুর-কাহালায় সকাল থেকেই ফুলহরের জল ঢুকতে শুরু করেছে ৷ গত কয়েকদিন ধরে ক্রমাগত জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ এলাকা পরিদর্শনে পর্যন্ত আসেনি ৷ বর্ষার শুরুতেই যদি বাঁধ মেরামত করা হত তবে এই অবস্থা হত না ৷" স্থানীয় বাসিন্দা প্রণবকুমার সিংহ বলেন, "দেবীপুর-সূর্যাপুর বাঁধের দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ অবস্থা ৷ প্রশাসন বর্ষার আগে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে আজ এই অবস্থা হত না ৷ এনিয়ে তিনবার বাঁধ ভাঙল ৷ প্রশাসন আগেই যদি এখানে একটা ক্যানেল করে দিত তবে বাঁধ ভাঙত না ৷ এখন মাটির বস্তা দিয়ে রিং বাঁধ করে কতক্ষণ নদীর জল আটকানো যাবে? বর্ষার আগে প্রশাসন ঘুমিয়ে ছিল, বন্যা আসতেই জেগে উঠেছে৷ কনট্রাক্টররা জরুরি অবস্থার জন্য কাজ করছে না ৷ পয়সা ইনকামের জন্য কাজ করছে ৷ জল যেভাবে এলাকায় ঢুকছে তাতে আমরা আতঙ্কিত ৷ বাঁধ ভেঙে এলাকার কৃষকদের শেষ করে দিল ৷ এখনও পর্যন্ত কত ফসল নষ্ট হয়েছে তা অনুমান করা যাচ্ছে না ৷ গোটা ঘটনার জন্য প্রশাসন দায়ি ৷"
ঘটনাস্থানে উপস্থিত রতুয়া 1 ব্লকের BDO সারওয়ার আলি বলেন, "সূর্যাপুর এলাকায় ফুলহরের বাঁধ ভেঙে গেছে ৷ নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে ৷ আমি এলাকা পরিদর্শনে এসেছি ৷ ব্লক থেকে টিম পাঠানো হয়েছে ৷ আমরা সতর্ক রয়েছি ৷ এখনও কোনও বাড়িতে জল ঢোকেনি ৷ স্কুলে ক্যাম্পের কাজ শুরু হয়েছে৷ ত্রাণ মজুত করা হচ্ছে৷ এলাকাবাসীর আতঙ্ক দূর করতে মাইকে ঘোষণা চলছে ৷ স্থানীয়দের সমস্যা হলে স্কুলে চলে আসতে বলা হয়েছে৷ প্রধানের সঙ্গেও কথা হয়েছে ৷"
সেচ দপ্তর থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, আজ সকাল 6 টায় গঙ্গা তার চরম বিপদসীমা 25.30 মিটার ছাড়িয়ে 25.62 মিটার উচ্চতায় বইছে ৷ অর্থাৎ আজ সকালে গঙ্গা নিজের চরম বিপদসীমা থেকে 32 সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে ৷ ওই সময় ফুলহর বইছে 27.37 মিটার উচ্চতায় ৷ এই নদীর বিপদসীমা 27.43 মিটার, চরম বিপদসীমা 28.35 মিটার ৷ আজ সকালে মহানন্দার জলস্তর ছিল 20.00 মিটার ৷ মহানন্দা তার বিপদসীমা 21 মিটার থেকে 1 মিটার নীচ দিয়ে বইছে ৷ দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরও 4-5 দিন গঙ্গার জলস্তর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ অর্থাৎ জলস্তর বাড়বে ফুলহর ও মহানন্দারও ৷
ফুলহরের বাঁধভাঙা জলে তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, "ওই এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ ঘটনাস্থানে BDO-সহ অন্য আধিকারিকরা রয়েছেন ৷ সঙ্গে রয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের সদস্যরাও৷ তাঁরা ওই এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন৷ সেখানে ত্রাণ শিবির খোলা হলেও এখনও পর্যন্ত কেউ সেই শিবিরে যাননি ৷ সেই পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি ৷ প্রয়োজনে দুর্গতদের শিবিরে নিয়ে যাওয়া হবে ৷ আমরা মহানন্দার দিকেও লক্ষ্য রাখছি ৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷ ইতিমধ্যে আমরা মানিকচকে একটি জায়গায় ফ্লাড সেন্টার তৈরি করেছি ৷ অন্য জায়গাতেও তা তৈরি করা হবে৷"