কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি : আসন পুনর্বিন্যাস, সংরক্ষণের মতো প্রাথমিক কাজগুলো শেষ । এই সংক্রান্ত যেসব মামলা কলকাতা হাইকোর্টে হয়েছিল, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জয় পেয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন । দু’একটি মামলা চলছে, কিন্তু কমিশনের দাবি, সেক্ষেত্রেও পাল্লা ভারী তাদের দিকে । অর্থাৎ আসন পুনর্বিন্যাসের এবং সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইনি জটিলতা তৈরি হবে না । সেই সূত্রেই এবার পৌর নির্বাচনের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল । আজ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে বৈঠক ডাকা হয়েছে ৷ দুপুর একটায় হবে বৈঠক ।
সরকারিভাবে লিখিত প্রস্তাব এখনও যায়নি ঠিকই । তবে নবান্ন সূত্রে খবর, পৌরভোটের প্রস্তাবিত দিন চূড়ান্ত করে ফেলেছে রাজ্য সরকার । পৌর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের অন্দরমহল সূত্রের খবর, ট্র্যাডিশন কিছুটা বদলে ফেলে এবার কলকাতার সঙ্গেই ভোট হবে হাওড়া পৌর নিগমের । শেষবারেও শুধুমাত্র কলকাতায় একদিনে নির্বাচন হয়েছিল । 15 দিন পর হয় বাকি পৌরসভাগুলির নির্বাচন । সব ঠিক থাকলে এবারও তেমনটাই হতে চলেছে । সূত্র জানাচ্ছে, এবার 12 এপ্রিল কলকাতা পৌরসভা, হাওড়া পৌরনিগম এবং 26 এপ্রিল বাকি পৌরসভা ও পৌরনিগমগুলির ভোটের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে ।
সাধারণভাবে রাজ্যের পাঠানো প্রস্তাবেই সিলমোহর দেয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন । এবারও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয় । যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে একদিনে 102টি পৌরভোট করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছিল । কমিশন চেয়েছিল কয়েকটি দফায় ভোট করতে । কিন্তু মীরা পাণ্ডের মতো কয়েকজন ব্যতিক্রমী নির্বাচন কমিশনার ছাড়া ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্বৈরথে যাননি কোনও নির্বাচন কমিশনার । সেই ট্র্যাডিশন বজায় থাকলে ধরেই নেওয়া যায় আগামী 12 এবং 26 এপ্রিল হতে চলেছে রাজ্যের পৌরসভা এবং পৌরনিগমের ভোট ।
পৌর এবং নগর উন্নয়ন দপ্তরের তরফ থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ব্যারাকপুর এলাকার 6টি পৌরসভার ভোট এখনই হবে না । কারণ, রাজ্য সরকার ব্যারাকপুরকে কর্পোরেশন হিসেবে তৈরি করতে চাইছে । যদিও রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, BJP সাংসদ অর্জুন সিং এবার ওই অঞ্চলের পৌরসভাগুলির দখল পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাবেন । ইতিহাস বলছে শক্ত বিরোধিতা থাকলে ওই এলাকার ভোট রক্তাক্ত হয় । এমনিতেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত অশান্ত ছিল ভাটপাড়া-গারুলিয়া-কাঁকিনাড়ার মতো বেশ কিছু অঞ্চল । এই মুহূর্তে সেখানে ভোট করা হলে প্রবল যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী । কিন্তু ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের রণকৌশল বলছে কোনওভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের দৃশ্য ফিরিয়ে আনা যাবে না । পঞ্চায়েত ভোটের জোর জুলুম মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলেছে । লোকসভা নির্বাচনে তার অনেকটাই প্রতিফলন ঘটেছে । বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাই কোনওভাবেই শহুরে ভোটারদের মনে এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে দেওয়া যাবে না । হয়ত সেই কারণেই ব্যারাকপুর পৌরনিগমের তৈরির প্রক্রিয়ার কথা সামনে রেখে ওই এলাকার ভোট পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে । সঙ্গে নিয়মের যাঁতাকলে সিউড়ি এবং বোলপুরের ভোট হওয়া সম্ভব নয় । সেই সূত্রেই মোট খালি হওয়া এবং হতে চলা 112টি পৌরসভার মধ্যে এবার ভোট হবে 104টি পৌরসভা এবং পৌরনিগমের । সাধারণভাবে পৌর নির্বাচনের ক্ষেত্রে উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা এবং হাওড়ার জেলাশাসকের ভূমিকা থাকে সব থেকে বেশি । ওই তিন জেলায় পৌরসভার সংখ্যাও সর্বোচ্চ । পৌরভোটের জন্য ওই দিন জেলা থেকেই সবথেকে বেশি কর্মী নেওয়া হয় । সেই বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে আজ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ডাকা হয়েছে ওই তিন জেলার জেলাশাসককে । রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, “লজিস্টিকসের বিষয়টি তো আছে । পাশাপাশি আমরা ওই তিন জেলাশাসককে বলব, এবার চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে দিন। "