কলকাতা, 1 এপ্রিল : গ্রীষ্মকালে এমনিতেই রক্তের সংকট দেখা দেয়। তার উপর এবার এই সময়ে রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। এর জেরে, এই ভোট-গ্রীষ্মে রক্ত সংকটের আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে এই সংকট শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। তবে, স্বাস্থ্য দপ্তরের আশা, এই সমস্যার সুরাহা হতে পারে 'জীবনশক্তি' অ্যাপের মাধ্যমে।
পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কোনও ব্লাডব্যাঙ্কে, কোন গ্রুপের রক্ত কত ইউনিট রয়েছে, সেই সব তথ্য জানা যায় এই জীবনশক্তি অ্যাপের মাধ্যমে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এই অ্যাপ সম্প্রতি ব্যবহার করতে পারছেন সাধারণ মানুষ। গ্রীষ্মকালে এমনিতেই রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে যায়। অন্যদিকে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয় রাজনৈতিক কোনও না কোনও দলের সহযোগিতায়। এই বছর লোকসভা নির্বাচন। ভোট প্রচারে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। স্বাভাবিকভাবেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন কম হবে। ফলে, গ্রীষ্মকাল এবং ভোট, দুই কারণে এই বছর রক্ত সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
রক্তের সংকট দূর করতে 'জীবনশক্তি' সুরাহা হতে পারে। কীভাবে সুফল মিলতে পারে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, "বিশেষ করে রেয়ার গ্রুপের রক্তের খুবই দরকার হয়। রেয়ার গ্রুপের রক্ত কোথায় আছে, কাছাকাছি কোনও ব্লাডব্যাঙ্কে আছে কি না, এই অ্যাপের মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাবে। কোন গ্রুপের কত রক্ত রয়েছে ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে, তাও জেনে নেওয়া যাবে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এই অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি রাখা যেতে পারে। কোনও জায়গায় কম থাকলে, রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আমরা বলতে পারি।"
সুফল কতটা মিলছে ? অজয়বাবু বলেন, "ভালো। তবে, সবাই এখনও জানতে পারেননি। এর জন্য প্রচার দরকার। যত বেশি দিন যাবে, মানুষ তত বেশি জানবে। সুফলও তত বেশি পাওয়া যাবে।" স্বাস্থ্য দপ্তরের অনেক আধিকারিক প্রচার করছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। জীবনশক্তি অ্যাপ যাতে বেশি মানুষ ব্যবহার করে সেই কারণেই এই প্রচার।
এই অ্যাপে কোন ধরনের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে? কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, "আমরা রোগীদের অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখেছি। অনেক সময় দেখা যেত রোগীর পরিবারের লোকজন রক্ত কোথা থেকে পাওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে জানতে পারতেন না। বুঝতে পারতেন না কোথা থেকে রক্ত নেবেন। তবে এখন এই অ্যাপের মাধ্যমে সুবিধা হচ্ছে। হবেও। পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি ব্লাডব্যাঙ্ক কোথায় এবং সেখানে কত পরিমাণে রক্ত সঞ্চিত রয়েছে এই অ্যাপের মাধ্যমে বোঝা যাবে।"
তিনি আরও বলেন, "ধরা যাক কারও A পজ়িটিভ ব্লাড দরকার। কিন্তু, হাসপাতালে সেই মুহূর্তে সঞ্চিত নেই। হয়ত কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে পাওয়া যাবে ব্লাড। সেটা এই অ্যাপ দেখে বুঝতে পারা যাবে। সংগ্রহ করতে যেতে পারবেন। এটা রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের কাছে সুবিধার। এছাড়াও, স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, আগামী দিনে বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্কগুলিকে এই অ্যাপে যুক্ত করা হবে। এতে সুবিধা আরও বাড়বে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "কতটা রক্ত সঞ্চিত রয়েছে, কত পরিমাণে খরচ হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও কত পরিমাণে রক্ত সংগ্রহ করা দরকার, এই সব পরিসংখ্যান এই অ্যাপ থেকে জানা যাবে। এই অ্যাপ খুবই সহযোগী হয়ে উঠবে রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের পাশাপাশি হাসপাতাল তথা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছেও।" সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ক্ষোভ থাকে- অনেক সময় রক্ত থাকলেও, দেওয়া হয় না। এই বিষয়ে ইন্দ্রনীলবাবু বলেন, "এই অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কতটা পরিমাণে রক্ত রয়েছে। আমার মনে হয়, ক্ষোভ অনেকটাই কম হবে এবং রক্তের সঠিক ব্যবহার হবে।"