কলকাতা,17 মে : COVID-19-এর মোকাবিলায় এ রাজ্যে PPE (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) কিট, N95 মাস্ক প্রয়োজনের তুলনায় কম আছে । এই অভিযোগ সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে বারবার করা হয়েছে। এবার, PPE কিটে বডি কভারের ছোটো-বড় মাপের কারণে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এমনও হয়েছে, বডি কভার ছোটো মাপের হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে কুঁজো হয়ে COVID-19 রোগীদের চিকিৎসা করতে হয়েছে সরকারি এক হাসপাতালে।
এ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে PPE নিয়ে একাধিকবার রাজ্য সরকারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে । বিশেষ করে ফ্রন্টলাইন হেলথকেয়ার ওয়ার্কারস অর্থাৎ, যে সব চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা COVID-19 রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্য PPE কিট, N95 মাস্কের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি জানানো হয়েছে। অথচ, রাজ্যে এই ফ্রন্টলাইন হেলথকেয়ার ওয়ার্কারদের জন্য PPE কিট, N95 মাস্কের অভাব রয়েছে। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে PPE কিট, N95 মাস্কের অভাবের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভে সামিল হতে দেখা গিয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের। এখনও ফ্রন্টলাইন হেলথকেয়ার ওয়ার্কারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি থেকে সরে আসেনি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে PPE কিটে বডি কভারের ছোটো-বড় মাপের কারণে ফ্রন্টলাইন হেলথকেয়ার ওয়ার্কারদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন হাসপাতালে বিভিন্ন সংস্থার PPE কিট বিভিন্ন ভাবে পাঠানো হচ্ছে। সম্পূর্ণ PPE কিটের সেটে থাকছে ক্যাপ, গগলস, মাথা থেকে পা পর্যন্ত বডি কভার এবং, স্যু কভার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে PPE কিটের সেট সম্পূর্ণ থাকছে না। এ সব ক্ষেত্রে কোনও কোনও PPE কিটে যেমন বডি কভার আছে। সেক্ষেত্রে ক্যাপ, গগলস, স্যু কভার আলাদা ভাবে নিতে হচ্ছে। তবে, সাধারণত কোনও PPE কিটের সঙ্গে N95 মাস্ক থাকে না, থাকে সার্জিক্যাল মাস্ক। সম্পূর্ণ অথবা, অসম্পূর্ণ PPE কিটের বিষয়টির পাশাপাশি সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য ক্ষেত্রে। সূত্রের খবর, কোথাওদেখা গেল ছোট মাপের বডি কভার এসেছে, কোনও লটে আবার দেখা গেল বড় মাপের বডি কভার এসেছে। এর ফলে কারও ক্ষেত্রে বডি কভার যেমন ছোটো হয়ে যাচ্ছে, কারও ক্ষেত্রে তেমন বড় হয়ে যাচ্ছে।
কলকাতার একটি সরকারি COVID হাসপাতালে কোরোনা রোগীদের ওয়ার্ডে ডিউটি করেছেন এমন এক চিকিৎসকের কথায়, "ছোট-বড় মাপের বডি কভার কারও ক্ষেত্রে দেখা গেল ছোট বা বড় হয়ে গেল। এক্ষেত্রে সমস্যা তো হয়। সংক্রমণের আশঙ্কাও থেকে যায়।" এই চিকিৎসক যখন ডিউটি করেছেন তখন ওই হাসপাতালে একটি লটের PPE কিটে ছোটো মাপের বডি কভার এসেছিল। ছোট মাপের বডি কভার এই চিকিৎসকের ক্ষেত্রে বেমানান। বড় মাপের বডি কভার পাওয়া যায় কি না, তাঁর খোঁজ করেন ওই চিকিৎসক। তবে, বড় মাপের বডি কভার তিনি খুঁজে পাননি। এই অবস্থায় কী করলেন ওই চিকিৎসক? তিনি বলেন, "একটু কুঁজো হয়ে বডি কভার পড়তে হয়েছে। যত ক্ষণ ডিউটি করতে হয়েছে কুঁজো হয়ে করতে হয়েছে। কুঁজো হয়ে কাজ করা খুব কঠিন।" তিনি বলেন, "কুঁজো হয়ে থাকতে হয়েছিল, কারণ সোজা হলে বডি কভারের চেন ছিঁড়ে যাবে। COVID-19-এর ওয়ার্ডে ডিউটি করার সময় বডি কভার ছিঁড়ে বা ফেটে গেলে, এই বডি কভার পরা, না পরা দুই-ই সমান। কারণ, এক্ষেত্রে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।"
কলকাতার সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "এমন দেখা গিয়েছে, কোনও বডি কভার যিনি পরবেন, তাঁর ক্ষেত্রে ওই বডি কভার ছোটো হয়ে গেলে, ওই বডি কভারের চেন আটকাতে গেলেই, তা ছিঁড়ে যাবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে বড় মাপের বডি কভার আসছে। যাদের উচ্চতা একটু কম, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বডি কভার বড় হয়ে যায়।" এই চিকিৎসক বলেন, "বডি কভার বড় হলে অসুবিধা তেমন কিছু হয় না। কিন্তু, ছোটো হলে ফেটে, ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফেটে বা ছিঁড়ে গেলে ওই বডি কভার পরা না পরা দুটোই সমান। ফেটে বা ছিঁড়ে গেলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।" বডি কভার ছোটো-বড় হয়ে যাওয়ার জেরে ফ্রন্টলাইন হেলথকেয়ার ওয়ার্কারদের যেভাবে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে, এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর বক্তব্য জানতে চেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে, তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, "এটা একটা বড় সমস্যা। তবে, PPE কিটের বডি কভারের মাপ সকলের মাপে হবে, এটা করা কঠিন। কিন্তু, PPE কিটের কোয়ালিটিও ভালো আসছে না।"
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, PPE কিট পরা সত্ত্বেও COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক। এক্ষেত্রে সঠিকভাবে PPE কিট এবং মাস্ক না পরার জেরেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কলকাতার সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "COVID-19-এর ওয়ার্ডে ডিউটি করতে যাওয়ার সময় PPE কিট সঠিকভাবে পরতে হবে। ডিউটি শেষে সঠিকভাবে PPE কিট সংশ্লিষ্ট স্থানে খুলে রাখতে হবে। ডিউটির শেষে PPE কিট খোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বডি কভারের বাইরের দিকের কোনও অংশ যেন, শরীরের কোনও অংশে স্পর্শ না করে।" R G কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "মাস্ক এমন ভাবে পরতে হবে যেন কোনও ফাঁক না থাকে। COVID-19 রোগীর কাছে গেলেন, রোগী কথা বলছেন বা হাঁচি-কাশি দিলে, তিন ফুটের মধ্যে পুরো এয়ার-ই সংক্রমিত। সেই এয়ার কোনও ভাবে মাস্কের মধ্যে ঢুকে গেলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।" এই চিকিৎসক বলেন, "মাস্ক যদি সঠিকভাবে পরা হয়, তাহলে জোরে শ্বাস নিলে বেলুনের মতো চুপসে যাবে, ছাড়লে বেলুনের মতো ফুলে উঠবে।"