নয়াদিল্লি, 3 এপ্রিল : করোনা মহামারি আমাদের দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে অসাম্য আরও গভীর করে তুলেছে ৷ বিশেষত সেইসব গরিব ছাত্রছাত্রীদের জন্য, যারা অন্যদের মতো রিমোট স্কুলিংয়ের সুবিধা পায়নি । ভার্চুয়াল শিক্ষাব্যবস্থার কিছু নিজস্ব খামতি আছে । ঝুঁকি থেকেই যায় যে ক্লাসরুমের মতো বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে খামতি থেকে যাবে ৷ এবং তার ফলে পড়ুয়াদের সঠিকভাবে শেখার ক্ষেত্রেও ঘাটতি থাকবে ।
ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলোর সামনে আরেকটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে । আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় 20 টিরও বেশি ভাষা ব্যবহার করা হয় । সেক্ষেত্রে বিভিন্ন বাচনভঙ্গি, বিভিন্ন প্রেক্ষিত এবং সামাজিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাল মেলানো যাবে কী করে ? পাশাপাশি, একটানা স্কুল বন্ধ থাকার জেরে পড়ুয়াদের ওপরে তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে । এই অবস্থায় দিল্লির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেন্ট্রাল স্কোয়্যার ফাউন্ডেশন (সিএসএফ) মনে করে, এডুকেশন টেকনোলজি (এডটেক) ব্যবহার করেই সমাধান পাওয়া সম্ভব ৷ কারণ এর সাহায্যেই বাড়িতে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া যাবে ।
গুগলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গত বছরের এপ্রিলে সিএসএফ তৈরি করে টিকট্যাকলার্ন । এতে রয়েছে অঙ্ক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলির ওপর 12 হাজার ভিডিয়ো । এই ভিডিয়োগুলি রয়েছে হিন্দি, ইংরেজি, তেলেগু, ওড়িয়া, গুজরাতি ও মারাঠি, এই ছটি ভাষায় ।
আরও পড়ুন: শিশুদের মনসংযোগের ওপর অনলাইন শিক্ষার প্রভাব
সিএসএফের কো-ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিক্রম দৌলত সিং বলেন, “লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এত বড় ব্যাঘাত আমরা আগে কখনও দেখিনি । এর মোকাবিলা করতে আমরা টিকট্যাকলার্নের আওতায় ভিডিয়ো তৈরির গতি বাড়িয়ে দিয়েছি । আমরা মাতৃভাষায় ভালো মানের কন্টেন্ট পৌঁছে দিতে চাই৷ যাতে পড়ুয়ারা, বিশেষ করে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের, স্কুল বন্ধ থাকার সময়টায় এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে ।”
এই শিক্ষামূলক ভিডিয়োর ভাণ্ডারে তিনটি দিকে নজর দেওয়া হয়েছে: ভাল কন্টেন্ট, পড়ুয়াদের সামিল করা এবং নাগালের মধ্যে পড়াশোনার উপকরণ । ইউটিউবে টিকট্যাক লার্নের চ্যানেলটি হল ওপেন সোর্স ৷ যেখানে ইতিমধ্যেই 52 মিলিয়ন ভিউ হয়েছে ৷ 1 লাখ 10 হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ৷ সিএসএফের সিনিয়র প্রজেক্ট লিড (সরকারি প্রকল্প) অতুল ভার্গব মতে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা জুড়ে কুড়িটিরও বেশি ভাষার ব্যবহার থাকায়, উন্নত মানের দূরশিক্ষা পৌঁছে দেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । টিকট্যাকলার্নের কন্টেন্ট হল গল্পচ্ছলে তৈরি (বিশেষ করে ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভের পড়ুয়াদের জন্য) ৷ দৈর্ঘ্যে চার থেকে পাঁচ মিনিট ৷ যাতে পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে, তারা মনোযোগ দেবে এবং বিষয়টি শিখতে পারবে ।
ভার্গব বলেন, “2018 সালে ভারতে শিক্ষামূলক কন্টেন্টে স্থানীয় ভাষার অভাব ছিল । বেশিরভাগ কন্টেন্টই ছিল বাণিজ্যিক সংস্থগুলির ৷ যা 85 থেকে 90 শতাংশ পড়ুয়ার পাওয়ার সামর্থ্য ছিল না ৷ যারা সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পড়ে ।”
অঙ্কের ক্ষেত্রে ছবি-সমেত উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর পাশাপাশি ভুল ধারণাগুলিও ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে । এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স (ইভিএস)-এর ভিডিয়োগুলিতে গল্পের মতো করে বোঝানো হয়েছে । এখানে অঙ্কের 12 হাজারের বেশি ভিডিয়ো, 1050 ঘণ্টারও বেশি কন্টেন্ট রয়েছে (ক্লাস ওয়ান থেকে টেন) ৷ ইভিএস ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে (ক্লাস থ্রি থেকে টেন) প্রতিটি ভাষায় 2000 ভিডিয়ো এবং 175 ঘণ্টারও বেশি সময়ের কন্টেন্ট রয়েছে । এই ভিডিয়োগুলি পাওয়া যাচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দীক্ষা অ্যাপেও ৷ যার প্রাথমিক লক্ষ্য স্কুলপড়ুয়াদের কাছে অনলাইন কন্টেন্ট পৌঁছে দেওয়া । টেক্সটবুকে থাকা কিউআর কোড ব্যবহার করে এই ভিডিয়োগুলি দেখা যেতে পারে ।
গত বছর প্রায় 500 মিলিয়ন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয় ৷ যাতে প্রত্যেকটি অধ্যায়ে কিউআর কোড আছে । এর মাধ্যমে পড়ুয়ারা কোডটি স্ক্যান করে সেই বিষয়ের ভিডিয়ো দেখতে পাবে ৷ যেখানে বিষয়টির ব্যাখ্যা করা আছে । উদাহরণস্বরূপ, কোনও পড়ুয়া সালোকসংশ্লেষের বিষয়ে জানতে চাইলে সে কিউআর কোড স্ক্যান করে সেই বিষয়ের ভিডিয়োতে পৌঁছে যেতে পারে । প্রায় 9 হাজার টিকট্যাকলার্ন কন্টেন্টকে 50 হাজারেরও বেশি কিউআর কোডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে । দীক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে 20 টি রাজ্যে টিকট্যাকলার্নের কন্টেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে ৷ এর মধ্যেই 5 মিলিয়ন মানুষ তা দেখেছেন ।
মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানার মতো রাজ্য টেক্সবুকের কিউআর কোডের সঙ্গে টিকট্যাক লার্নের কন্টেন্টকে যুক্ত করতে শুরু করেছে । মহামারীর পরেও কি এই ই-লার্নিং পদ্ধতি সফল হবে?
সিং বলেন, “আগামী দিনে স্কুলগুলো সম্ভবত মিশ্র পদ্ধতি প্রয়োগ করবে ৷ কারণ পুরোদমে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু করতে আরও সময় লাগবে । ক্লাসরুমে শিক্ষাদানের পাশাপাশি সাহায্য করবে এই ভিডিয়োগুলিও ।”